ব্যাংক হিসাবে ৩৫ কোটি অবৈধ টাকা

এমডির কাছে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা চায় এনসিসি ব্যাংক

প্রকাশ | ০৯ মে ২০১৯, ০৮:৩৪

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

ব্যবস্থাপনা পরিচালক- এমডির বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে কীভাবে ৩৫ কোটি টাকা এলো, তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা চেয়েছে বেসরকারি ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স-এনসিসি ব্যাংক। ব্যাখ্যা যৌক্তিক না হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও এসেছে।

সম্প্রতি ব্যাংকটির এমডি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, এনবিআরকে চিঠিও দিয়েছে সংস্থাটি। এই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিকেলে বিশেষ বোর্ড সভা করে এনসিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আর এই বৈঠকেই মোসলেহ উদ্দিনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে ব্যাংক পর্ষদ।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বিকালে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের কাছে অস্বাভাবিক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির কারণ জানতে চান বোর্ডের সদস্যরা। তবে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি এমডি।

বিএফআইইউ বিশেষ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যাংকের ঋণগ্রহীতার টাকা ছাড়াও পরামর্শক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজার থেকেও তার হিসাবে টাকা জমা হয়েছে মোসলেহের হিসাবে। এমডি ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে এসব অর্থের মালিক হয়েছেন বলে বলছে বিএফআইইউ।

এরই মধ্যে পাঁচটি ব্যাংকে থাকা মোসলেহ উদ্দিনের হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ। ব্যাংকগুলো হলো এনসিসি, যমুনা, প্রাইম, সিটি ও প্রিমিয়ার। একই সঙ্গে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের হিসাবও জব্দ করেছে সংস্থাটি।

মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের আয়ের উৎস ও সম্পদের বিষয়ে খতিয়ে দেখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

বিএফআইইউর তদন্ত অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংক, দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও চারটি ব্রোকারেজ হাউসে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে মোসলেহ উদ্দিন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে। এসব টাকার কোনো হিসাব তার আয়কর নথিতে নেই। ঋণ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও জমা করা হয়েছে টাকা। এতে ধারণা করা হচ্ছে ঋণ দিয়ে কমিশনও নিয়েছেন মোসলেহ উদ্দিন।

তদন্তে দেখা গেছে, যমুনা ব্যাংকে থাকা মোসলেহ উদ্দিনের ব্যাংক হিসাবে নিয়মিত ভিত্তিতে টাকা জমা দিয়েছে গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসেই চার দফায় ১ কোটি করে ৪ কোটি টাকা জমা করেছে তারা। এ গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের কাছে যমুনা ও এনসিসি ব্যাংকের ঋণ রয়েছে।

আর সেই টাকার মধ্যে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সে ৩ কোটি টাকা ও ১ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত হিসাব খোলেন মোসলেহ উদ্দিন। আবার ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়েও ২ কোটি টাকার আমানত হিসাব খুলেছেন তিনি। এর জোগানদাতাও ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর আশুলিয়ায় ৫১ লাখ টাকায় একটি জমি বিক্রি করেন মোসলেহ। তবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাছ থেকে গ্রহণ করেন ৪ কোটি টাকা।

এমডির এই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তদন্তে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমডিকে অপসারণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি বিভাগ এবিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেছে। এনসিসি ব্যাংকের এমডির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সাল পর্যন্ত যমুনা ব্যাংকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি এনসিসি ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) হিসেবে যোগ দেন। ২০১৭ সালের আগস্টে তিনি এনসিসি ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব নেন।

ঢাকাটাইমস/৯মে/আরএ