যে কারণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাননি আজাদ

প্রকাশ | ০৯ মে ২০১৯, ০৮:৩৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
আবুল কালাম আজাদ (ফাইল ছবি)

বিদায় নিতেই হলো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদকে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করেও কাজ হয়নি। অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে শেষ সময়ে পদোন্নতি-পদায়ন, বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের জ্যেষ্ঠতা ভঙ্গ করে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। আজ আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ চাকরি জীবনের ইতি টানতে হচ্ছে আলোচিত-সমালোচিত এই কর্মকর্তাকে।

বিএনপিপন্থী প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (এইবি) সদস্য ছিলেন তিনি। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তার এলজিইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধান হওয়ার রীতিমতো ছিল বিস্ময়ের।

স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তাকে যখন প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন অতিরিক্ত প্রকৌশলীদের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তখন তার রাজনৈতিক পরিচয় অতটা খতিয়ে দেখা হয়নি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসার পর সরকার বিরোধীদের সঙ্গে তার আঁতাতের বিষয়টি কাজের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি বড় বড় প্রকল্পের টাকা পর্যন্ত ছাড় করেননি। এমনকি প্রকল্প পরিচালকদের চিঠি দিয়ে প্রকল্প অর্থ ছাড়ে নিষেধ করেছেন। তিনি তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে বলেছেন, ক্ষমতায় কে আসে তা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কিছু করতে চাননি।

আবুল কালাম আজাদের বিএনপি ঘেঁষা পরিচয়ে উন্মোচন হওয়ার পর মন্ত্রণালয়সহ এলজিইডির বিভিন্ন পর্যায়ে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রতি আনুগত্য আছে, এলজিইডির এমন কর্মকর্তাদের তিনি পদোন্নতি ও যথাযথ পদায়ন বঞ্চিত করে হয়রানি করেছেন। এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদের মেয়াদকালে বিভিন্ন প্রকল্পের আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে যেসব লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এদের বেশির ভাগই পাবনা ও রাজশাহীর। আশ্চর্যজনক হচ্ছে এদের প্রায় সবার ব্যাপারেই বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সুপারিশ ছিল। নাটোরে বাড়ি বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতার সাথে তার দহরম মহরম আছে বলে প্রায়শই শোনা যায়।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য বিভিন্ন জায়গায় বেশ দৌড়ঝাঁপ করেছেন আবুল কালাম আজাদ। তিনি দম্ভ করে বলতেন, তার চুক্তি কেউ আটকাতে পারবে না। সরকারের একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তার দহরম মহরমের কথাও প্রচার করে বেড়াতেন তিনি।

কিন্তু সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা খোঁজ নিয়ে জেনেছে, তিনি সরকারের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিপরীতে বিএনপিপন্থীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ-সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। আবুল কালাম আজাদ প্রচার করে বেরিয়েছেন যে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী তাজুল ইসলাম তার পক্ষে আছেন। আসলে এলজিআরডি তার পক্ষে ছিলেন না, এটা তার চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ না পাওয়া ঘটনাই প্রমাণ করে।

এলজিআরডির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর এলজিআরডির বড় বড় প্রকল্পের গতি স্লথ হয়েছে। তার এসব স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের কারণে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগও নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কি-না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এলজিইডির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, আবুল কালাম আজাদ শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে এসব পদোন্নতি ও পদায়ন দিয়েছেন। গত ২১ এপ্রিল একসঙ্গে ২৮ জন সহকারী প্রকৌশলীকে সিনিয়র করে চলতি দায়িত্বে নির্বাহী প্রকৌশলী করে পদায়ন করেছে। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। এর মধ্যে তার ঘনিষ্ঠদের সংখ্যাই বেশি। যারা বিভিন্ন সময় তার অনিয়ম-দুর্নীতিতে সহায়তা করেছেন।

শেষ সময়ে ঢালাও পদোন্নতি ও পদায়ন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার নিয়ম ভাঙা, বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পরিচালক পদে বসানো, পাবনা ও রাজশাহীর বিএনপির নেতাকর্মীকে এলজিইডিতে পুনর্বাসনের ঘটনাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে।

তার স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির কারণে বঞ্চিত হয়েছে এলজিইডির দক্ষ কর্মকর্তারা। চাকরি স্থায়ীকরার দাবিতে আন্দোলন করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপরও চড়াও হয়েছেন এই কর্মকর্তা। যা নিয়ে এলজিইডির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আছে আছে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদের সব ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত হবে। তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।