ব্যতিক্রমী চিকিৎসক
তবুও রোগীর সেবায় ঘাটতি নেই
চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে প্রায়। আবার চিকিৎসকরাও পাল্টা অভিযোগ করেন। আবার নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও রোগীর সেবায় অবিচল থাকেন এমন চিকিৎসকও আছেন অনেক। কিন্তু তাদের কথা অনেক সময় সামনে আসে না। এমনই একজন তরুণ চিকিৎসক কাজী আব্দুল্লাহ মারুফ। নিজের অসুস্থতার কারণে হাতে স্যালাইন লাগানোর পরও সেবা থেকে রোগীকে বঞ্চিত না করে সকাল থেকে রাত অবধি চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি। যদিও তিনি বলছেন, তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার চিকিৎসা দেওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয় বুধবার থেকে। যদিও ঘটনাটি সোমবারের। স্যালাইন লাগানো অবস্থায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া চিকিৎসক মারুফ কর্মরত সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার পদে।
৩৬তম বিসিএসের এ স্বাস্থ্য ক্যাডার ঢাকা টাইমসকে জানান, হোটেলের খাবার খেয়ে বিষক্রিয়ার শিকার হওয়ার পর এক পর্যায়ে তার প্রেসার খুব লো হয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালে বিকল্প কাউকে দিয়ে রোগীর চাপ সামলানোর সুযোগ ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে তাকে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে হয়েছে।
মারুফ বলেন, সকালে যখন স্যালাইন দেয়া হয় এরপর শরীর কিছুটা ভালো লাগে। সে অবস্থায় রাত আটটা পর্যন্ত হাসপাতালে ডিউটি করতে হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে ১১ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও এখানে আছেন মাত্র তিনজন। একজন অসুস্থ হয়ে ছুটিতে আছেন। আর একজন আরএমও-এর দায়িত্বপালন করছেন। যে কারণে রোগী রেখে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।’
তবে যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে সেটি নিজে তোলেননি বলে জানান ফরিদপুর সদরে জন্ম নেয়া এই তরুণ চিকিৎসক। বলেন, ‘সহকর্মীরা হয়ত কেউ তুলে ফেসবুকে দিয়েছে। কিন্তু এটা এভাবে ছড়িয়ে গেল কীভাবে তাও জানি না। আমি মনে করি, আমার দায়িত্ব আমি পালন করেছি। এর বাইরে আর কিছু না।’
ছবিটি ‘বাংলাদেশ মেডিকেল সংবাদ’ ফেসবুক পেজে শেয়ার করে অনেকে লিখছেন, এ ধরনের ছবি হয়তো শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। অনেকে এই ডাক্তার সাহেবকে বাহবা দিলেও এটা আমাদের হেলথ সেক্টরের দৈন্যতার একটা চিত্র। এমন অসুস্থ অবস্থায় তাকে রিপ্লেস করার মতো অন্য কেউ এভেইলেবল নেই। অগত্যা এক হাতে স্যালাইন আর অন্য হাতে কলম।
পোস্টে বলা হয়, সকালের ডিউটি বাদেও সপ্তাহে কমপক্ষে চার দিন ইমার্জেন্সি দায়িত্ব পালন করতে হয়। ইএমও এর কোনো পোস্ট অর্গানোগ্রামই নেই। শিশু কন্সাল্টেন্ট একজন আছেন উনি আউটডোর পেশেন্ট দেখেন। সুইপারের সংখ্যা অপ্রতুল। রোগীর সিরিয়াল মেইনটেইনের মতো পর্যাপ্ত এমএলএসএস পর্যন্ত নেই। নিজেই টিকিট জমা নিয়ে নাম ডেকে ডেকে রোগী দেখতে হয়। ডাক্তাররা এত আশা নিয়ে সরকারি চাকরিতে এসেও কেন তথাকথিত গ্রামগুলোতে থাকতে চান না এ প্রশ্নের উত্তর দেবার কি আর দরকার আছে?
ঢাকাটাইমস/৯মে/বিইউ/ডিএম