মানবপাচারের গুজব আতঙ্কে সাতক্ষীরাবাসী

সাতক্ষীরা প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১০ মে ২০১৯, ১৪:১১

নতুন এক গুজব আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে সাতক্ষীরাবাসী। কেউ বলছেন ‘বোরকা পার্টি’, কেউ বলছেন ‘মানবপাচারকারী’, আর কেউ বলছেন ‘রোহিঙ্গা’। যারা কিনা সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে শিশুদের চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, কেউ বলছেন তারা ডাকাতির চেষ্টাও চালাচ্ছেন। যদিও প্রশাসন নিশ্চিত করেছে এগুলো নিছক গুজব।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘সাতক্ষীরা জেলায় “বাচ্চা ধরা” নিয়ে একটি মিথ্যা তথ্য বা গুজব মানুষের মুখে মুখে ও বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে। এ ধরনের কোন বস্তুনিষ্ট তথ্য নেই। এটা নিছক একটি গুজব এবং মিথ্যাচার। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে। আপনারা গুজবে কান দিবেন না।’

এপর্যন্ত রোহিঙ্গা বা বোরকা পার্টির সদস্য হিসেবে যাদের আটক করে গণধোলাই দিয়েছেন সাধারণ মানুষ তাদের অধিকাংশই মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ। এক শ্রেণির মানুষকে আতঙ্কিত করে সামাজিক অস্থিরতা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পও ছড়ানো হচ্ছে।

সাধারণ মানুষের ভাষ্যানুযায়ী, বিভিন্ন নামে এই আতঙ্কের জন্য দায়ী করা হচ্ছে কিছু মানুষকে। যার মধ্যে কয়েকজন নারী আবার কয়েকজন পুরুষ। তারা কখনো বোরকা পরে, আবার কখনো সাধারণ পোষাকে মানবপাচার ও ডাকাতির চেষ্টা করছে। তাদের মূল লক্ষ্য শিশু ও নারী পাচার করা।

বিশেষ করে জেলার তালা, পাটকেলঘাটা, কলারোয়া ও সদর উপজেলার কয়েকটি অঞ্চলে এ অভিযোগে ইতোমধ্যে অনেককেই মারপিট করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ মাইকিং করে জানায়- এটি গুজব। বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নেই।

এলাকাবাসীর দাবি গত ৫ মে এর ঘটনা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের শাল্যে গ্রামের প্রবীর কুমার মন্ডলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত মেয়ে দেবশ্রী (১৩) বেলা ১১টার দিকে স্কুলের বিশেষ ক্লাস থেকে ফিরছিল। এসময় অজ্ঞাত নারী পেছন দিক থেকে তার মুখে মলম জাতীয় এক ধরনের ক্যামিকেল লাগিয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টা করে। কিন্তু দেবশ্রী দৌড়ে পালাতে গেলে ক্যামিকেল তার মুখের একপাশে লাগে। পরে তার মুখের যে অংশে ক্যামিকেল জাতীয় দ্রব্য লাগে সে অংশ সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং ফুলে যায়। কয়েক ঘণ্টা পরে অবশ্য তার মুখ স্বাভাবিক হয়।

ব্রহ্মরাজপুরের ঘটনার দুদিন যেতে না যেতেই গত ৭ মে রাতে সদর উপজেলার কাটিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার সেলিম কবিরাজের বাড়ি ঘটে আরেক ঘটনা। রাতে সেলিম কবিরাজ তারাবিতে গেলে তার স্ত্রী এবং দুই শিশু সন্তান ঘরে ছিল। তাদের ঘরের জানালায় অজ্ঞাত দু’জন ব্যক্তি এসে দরজা খুলতে বলে। দরজা না খুললে বাইরে থেকে তারা বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে ভয়ে সেলিম কবিরাজের স্ত্রী হাসিনা বেগম চিৎকার করলে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া করে। এলাকার মসজিদে মসজিদে জনগণকে সাবধান থাকার আহবান জানিয়ে মাইকিং করা হয়।

এ ঘটনার পর যখন পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে, ঠিক তারপর দিন অর্থাৎ ৮ মে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা লাবসা ইউনিয়নের নলকুড়ায় ঘটে এ ধরনের আরো একটি ঘটনা।

এদিন বেলা ১১টার দিকে দোলনায় ৮ মাস বয়সী শিশুকে রেখে তার মা টয়লেটে যায়। সেখান থেকেই এসেই দেখে দোলনায় তার ছেলে নেই। তার চিৎকারে লোকজন ছুটে এসে শিশুটিকে খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে পাশের একটি পরিত্যক্ত ঘরে শিশুটিকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। আর সেই শিশুটির পাশেই পড়ে ছিল একটি কাস্তে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, অজ্ঞাত ব্যক্তিরা শিশুটিকে দোলনা থেকে উঠিয়ে পালানোর পথে লোকজনের ভয়ে পাশের ওই পরিত্যক্ত ঘরে রেখে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর শিশুটির মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আর তাদের বাড়ি শত-শত লোক ভিড় করে ঘটনা জানার জন্য। তবে কেউ কথিত ওই পাচারকারীদের দেখতে পায়নি।

জেলার প্রতিটি উপজেলা থেকেই শোনা যাচ্ছে এমন খবর। তবে এসব ঘটনার প্রত্যক্ষ কোনদর্শীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/১০মে/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :