মানবিক সানজানা

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ মে ২০১৯, ১৫:৪২ | প্রকাশিত : ১১ মে ২০১৯, ০৯:২৪

একে বলা যায় মনের আর পেশার মেলবন্ধন। পেশাগতভাবে তিনি অসুস্থ মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। চাকরির কারণে এই সেবা তাকে দিতেই হয়। কিন্তু সামান্য বেতনের চাকরি করে ক্ষুধার্ত আর দরিদ্র মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো সহজ কথা নয়। মনের সহজাত তাড়না আর মানবিক হলেই কেবল সম্ভব সেটি। অসুস্থ আর দরিদ্র মানুষকে সেবা দিয়ে চলেছেন সেবিকা সানজানা শিরিন।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ডানকান ফাউন্ডেশন পরিচালিত হাসপাতালে সেবিকা হিসেবে কর্মরত এই তরুণী। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বেশ কিছু মানবিক কাজে নিজেকে লিপ্ত রেখেছেন তিনি। জরুরি রক্তের প্রয়োজনে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সমাধান পাওয়া যায়। রক্তদান ও মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন এই তরুণী।

চলতি রমজান মাসে হতদরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সানজানা। ইতিমধ্যে ভিক্ষুক, এতিম শিশু, বিধবা, অন্ধ এমন অর্ধশতাধিক অসহায় মানুষের জন্য রমজানের সেহরি ও ইফতারসামগ্রী নিজে পৌঁছে দিয়েছেন। ২০১৬ সাল থেকে তিনি এভাবে অসহায় মানুষের জন্য রমজানের বাজার সামগ্রী, ঈদে সেমাই-পোশাকের ব্যবস্থা করছেন।

তার এই সহায়তা যে খুব বেশি তা নয়। তবে চেষ্টা করছেন ধীরে ধীরে এর ব্যাপ্তি বাড়াতে। সঙ্গত কারণেই এসবের খরচ সংকুলান করা তার একার পক্ষে সম্ভব নয়। কিছু আর্থিক অনুদান পান নানাভাবে। সানজানা জানান, আগে কিছু কিছু কাজ করলেও ২০১৬ থেকে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন। বলেন, ‘আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে অনেক ভালো মানুষ আছেন। তারা টাকা দিয়ে আমাকে সাহায্য করছেন।’

২০১৬ থেকে রক্তদানের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন সানজানা। গত বছর থেকে কাজ করছেন হতদরিদ্র মানুষের সহায়ক হতে। বিতরণ করছেন রোজার খাবার সামগ্রী। তবে যে পরিমাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন, তা দরিদ্র মানুষের তুলনায় খুবই সামান্য। সানজানার গ্রামে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা তার আয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি। সানজানার ভাষায়, ‘মানুষকে দিতে শুরু করলাম, মানুষ খালি আসে আর আসে। আমার গ্রামে গরিব মানুষ অনেক। এরপর থেকে সবার জন্য ব্যবস্থা করতে চাই।’

আর্থিক অনুদান এখন যা পাচ্ছেন, সামনের দিনে তা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন এই মানবসেবী তরুণী। তখন আরও বেশি মানুষকে সহায়তা দিতে পারবেন। ইতিমধ্যে সানজানার মানবসেবার খবর নানা মাধ্যমে ফলাও হচ্ছে। পরিচিতজন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার রক্তদানের সাথে জড়িত মাধ্যমেও সহায়তা আসে।

একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সানজানার বেড়ে ওঠা অভাব-অনটন দেখে দেখে। তাই হতদরিদ্র মানুষের কষ্ট তিনি বোঝেন। বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে অভাবের সঙ্গে সখ্য আমার। খাবারের অভাব না। পড়াশোনার জন্য খাতা, কলম, গাইড দরকার- ১৫ দিন ১ মাস আগ থেকে খুঁজে বাবা-ভাই এনে দিত।’

সানজানা বলেন, ‘বাইরে যখন বের হলাম, তখন তো পড়াশোনার খরচ জোগাতে প্রত্যেক মাসে টাকার জন্য কাঁদতে হতো। আর ভালো তরকারি দিয়ে খাওয়ার অভাবটাও শুরু হয়। ক্ষিদার কষ্টটা আমি বুঝি।’ মানবিক কাজ সারা জীবন করে যেতে চান এই তরুণী সেবিকা। তার স্বপ্ন একটি বৃদ্ধাশ্রম বানানোর। সেই সঙ্গে একজন সেবিকা হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে চান সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য। বলেন, ‘একটা বৃদ্ধাশ্রম বানাব। সমাজের যারা বিত্তবান নয়, যারা সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত, তাদের সেবা দেওয়ার ইচ্ছে আছে।

ঢাকাটাইমস/১১মে/কারই

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :