দূষণকারী দিয়ে বুড়িগঙ্গা পরিষ্কার

নদীতীর সুরক্ষায় আইন প্রয়োগও চাই

প্রকাশ | ১২ মে ২০১৯, ২২:৪৪

আরিফুর রহমান

কারখানার পলিথিন বর্জ্য ফেলে বুড়িগঙ্গা নদীদূষণের অভিযোগে কারখানা কর্তৃপক্ষকে দিয়েই ওই সব বর্জ্য পরিষ্কার করিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানার মুসলিমবাগের বাগচানখা এলাকার এ রকম সচিত্র সংবাদ ১০ মে দৈনিক ঢাকা টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে।

এই খবর থেকে জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএর চলমান উচ্ছেদ অভিযানের কাজ সরেজমিন পরিদর্শনকালে কর্মকর্তারা রাসেদ ট্রেডার্স নামের একটি প্লাস্টিক ফ্যাক্টরির বিপুল প্লাস্টিক ও পলিথিনের উচ্ছিষ্ট বস্তায় ভরে সেগুলো নদীর তীরভূমি ও ভেতরের অংশে ফেলে রাখতে দেখেন। কারখানার ম্যানেজার সাইদুর রহমান ও সবুজ নামে দুজনকে আটক করে বিআইডব্লিউটিএ। পরে কারখানা মালিক রাসেদকে ডেকে আনা হয়। তাদের দিয়ে পরিষ্কার করানো হয় ওই সব আবর্জনা।

এই ঘটনা নদীদূষণ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে একটা সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছি আমরা। গত তিন মাস ধরে বিআইডব্লিউটিএ যে নদী দখল উচ্ছেদ করেছে, তা রক্ষা হবে বলে আমাদের মধ্যে আশা জন্মায়। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আরিফ উদ্দিন অবশ্য আশা করেন, কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে যারা নদী দখল, ভরাট বা দূষণ করছেন, এ ঘটনা থেকে সতর্ক হবে তারা। আমরাও সেই ইতিবাচক পরিবর্তনই আশা করি।

আবার আশঙ্কাও থাকে যে, দখলদারদাররা বসে থাকে না। তারা নিত্যনতুন কায়দা-কানুন আর ফন্দি আঁটে দখলের। সুযোগের অপেক্ষায় থেকে সময় বুঝে আবার দাঁত বসায় মাটিতে। এর সঙ্গে আবার যোগ হয় নতুন দখলদারদের আগমন।

কামরাঙ্গীরচরের ঘটনাটিও তেমনি বলে মনে হচ্ছে। ওই কারখানার মালিকপক্ষ বর্জ্য ভরা বস্তা ফেলে রেখে জায়গাটি নিজের দখলে রাখার মতলবে ছিল। আমরা মনে করি, দূষণকারীদের দিয়ে নদী পরিষ্কার করানো অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক। সেই সঙ্গে আইনের দিকটি এড়িয়ে গেলে চলবে না। এসব ঘটনার জন্য আইনে যে শাস্তির বিধান আছে সেটিও প্রয়োগ করতে হবে। দেশে অনেক দখলদার আছে যাদের চক্ষুলজ্জা নেই। তারা ‘নদী পরিষ্কারের শাস্তির’ ঝুঁকি নিতে মোটেও দ্বিধা করবে না। আর তাতে এত দিন ধরে যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলো তা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

 

গত তিন মাস ধরে বিআইডব্লিউটিএ নদীতীর উদ্ধারে অনেক পরিশ্রম করেছে। ২৯ জানুয়ারি থেকে এ সময়ে ৩৬ কার্যদিবসে সংস্থাটি বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর তীর থেকে ছোট-বড় তিন হাজার ৫৭৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। দখলমুক্ত হয়েছে নদীর তীরভূমির ৯১ একর জায়গা। প্রভাবশালী এমপি, আইনজীবী, হাউজিং ব্যবসায়ী এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানও এ থেকে রেহাই পায়নি। এই কার্যক্রম দেশবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে।

এখন সংস্থাটির কর্তব্য হলো, উচ্ছেদ করা অংশগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা। কোনোভাবে কোনো অজুহাতে এক মিনিটের জন্যও যেন কেউ সেসব জায়গা দখলের সুযোগ না পায় সেটা নিশ্চিত করা। আমরা পত্রিকা মারফত জেনেছি, বুড়িগঙ্গা নদীতীর ধরে হাঁটার পথ হবে। ভ্রমণ ও বিনোদন পিয়াসীদের জন্য সাজিয়ে তোলা হবে সেসব জায়গা। এসব পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়িত হবে বলে আমরা আশা করি। আর এর মাধ্যমে নিশ্চিত হবে নদীতীর সুরক্ষা।