শ্রমিক নেই মজুরি বেশি, ক্ষোভে আগুন ধানখেতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
| আপডেট : ১২ মে ২০১৯, ২৩:৪৫ | প্রকাশিত : ১২ মে ২০১৯, ২২:৫৪

শ্রমিকের মজুরির তুলনায় ধানের দাম কম হওয়ায় ধানক্ষেতে আগুন লাগিয়ে প্রতিবাদ করেছেন একজন কৃষক। রবিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের আব্দুল মালেক সিকদার তার ধানক্ষেতে আগুন ধরিয়ে এমন প্রতিবাদ করেন।

এদিকে কালিহাতীর আউলটিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান মজনু নামের আরেক কৃষক তার ক্ষেতের পাকা ধান এলাকাবাসীকে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন। এলাকাবাসী ধান কেটে অর্ধেক অংশ নিজে এবং বাকি অর্ধেক অংশ খেতের মালিককে দিচ্ছেন।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৩০ ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে।

বাকি ৭০ ভাগ ধান পেকে গেলেও কৃষক দিনমজুরের অভাবে ঘরে তুলতে পারছে না। দিনপ্রতি একজন মজুরকে দিতে হয় ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। আর বাজারে ধানের মূল্য ৫০০ টাকা মণ। এতে প্রায় দুই মণ ধান বিক্রি করে কৃষকের একজন দিনমজুরকে মজুরি দিতে হচ্ছে। আবার বেশি টাকা দিয়েও দিনমজুর পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান।

কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক সিকদার বলেন, ‘মণপ্রতি ধান কিনতে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। ধান কাটতে দিনমজুরকে দিতে হচ্ছে প্রায় এক হাজার টাকা মণপ্রতি। এরপরও ধান ঘরে তুলতে আছে খরচ। অন্যদিকে বেশি মজুরি হলেও কামলা পাওয়া যায় না। খেতে ধান পাকলেও তা ঘরে তুলতে পারছি না। তাই এক দাগের ৫৬ শতাংশ ধানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছি।’

উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন পাকা ধানখেতে আগুন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বলেন, এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য দেয়া উচিত। কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এম শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন খরচ ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর ধানের বাজার মূল্যে প্রতি বিঘায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা কৃষকের লোকসান হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারকে কৃষিকাজে যান্ত্রিকীকরণ ও ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তবেই কৃষক উপকৃত হবে।’

কৃষি নিয়ে কাজ করা কামরুল হাসান নামে একজন এনজিও কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে কৃষকদের অবস্থা শোচনীয়। লাভ তো দূরের কথা, ধান চাষ করে কৃষক আর্থিকভাবে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।’

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই সময়ে ধানের বাজার কিছুটা কম থাকলেও কৃষক যদি ধান সংরক্ষণ করে রাখে তবে কয়েক দিন পর বেশি মূল্য পাবে। দাবদাহসহ নানা কারণে কিছুটা শ্রমিক সংকট থাকলেও তা তীব্র নয়। জেলায় গত বছরের চেয়ে এবার ব্যাপক পরিমাণ বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এক লাখ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমির প্রায় ৩০ শতাংশের ধান কাটা হয়ে গেছে। তবে এবার শ্রমিক মজুরি বেশি।’

(ঢাকাটাইমস/১২মে/এলএ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :