ছাত্রলীগের কমিটি পুনর্গঠন চেয়ে পদবঞ্চিতদের আল্টিমেটাম

প্রকাশ | ১৪ মে ২০১৯, ১৫:৪৪ | আপডেট: ১৪ মে ২০১৯, ১৭:৩৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ছাত্রলীগের নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা। তা না করা হলে অনশনে বসার হুমকি দিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই আল্টিমেটাম দেন পদবঞ্চিতরা।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের গঠিত নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে দিয়ে অধিক তদন্তের মাধ্যমে অর্থবহ কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়।

এর আগে পদবঞ্চিত ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে কমিটি মানেন না বলে স্লোগান দেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু বলেন, ছাত্রলীগ এ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের সারথী। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে এই সংগঠনটির নাম। কখনো রাজপথে, কখনো পড়ার টেবিলে, কখনো মিছিলে কখনো স্লোগানে রাজপথ থেকে শুরু করে স্বৈরশাসককে বদ্ধ গেইট রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে প্রকম্পিত করেছে ছাত্রলীগ।’

তিনি বলেন, ‘২৯তম জাতীয় সম্মেলনের দীর্ঘ এক বছর পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। যাতে পদ দেওয়া হয়েছে ৩০১ জনকে। নিবেদিত প্রত্যেকটি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর আজ আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল, উল্লাস করার কথা ছিল। সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে আনন্দ করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে উল্টো ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে সংবাদ সম্মেলন করতে হচ্ছে।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি বিগত সময়গুলোতে যারা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের একটি বৃহৎ অংশকে বাদ কিংবা সঠিক পদে মূল্যায়ন না করে ছাত্রলীগে নিষ্ক্রিয়, সাবেক চাকরীজীবী, বিবাহিত, অছাত্র, গঠনতন্ত্রের অধিক বয়স্ক, বিভিন্ন মামলার আসামি, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃতসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়েছে। এমন ব্যক্তিদের পদায়ন দেখে ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত প্রাণকর্মী হিসেবে আমাদের বঞ্চিত করেছে।’

সাইফ বাবু বলেন, ‘কমিটি প্রকাশ হওয়ার পরপরই ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ কর্মীরা কমিটির প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক একটি বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। কিন্তু সেই বিক্ষোভ মিছিলে হামলা করে নারী নেতৃবৃন্দসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করা হয়েছে। হামলার প্রতিবাদে যখন মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানেও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়েছে। আর এই হামলাটি চালিয়েছে কমিটিতে জায়গা করে নেওয়া কিছু গর্বিত ভাই-বন্ধুরা।’

এসময়  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘অধিকাংশ ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীকে বাদ দিয়ে যে কমিটি করা হয়েছে তা ভেঙে দিতে হবে।’ এছাড়া অধিক তদন্তের মাধ্যমে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও অর্থবহ কমিটি করার দাবি জানান তিনি।

বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলনে হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান সাইফ বাবু।

তিনি বলেন, ‘বিচারের আশ্বাস নয় আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের কৃতকর্মের সাজা পাক।’

সাংবাদিক সম্মেলনে রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার বলেন, যারা মধুর ক্যান্টিনে মারধর করেছে তাদেরকেই তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটি আমরা মানি না। ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সরাসরি নির্দেশেই হামলা চালানো হয়েছে। আবার তারা হামলাকারীদের দিয়ে তদন্ত কমিটি করেছে। আমরা বিশ্বাস করি যদি বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে সঠিক তথ্য যায়, তা হলে তিনি বিতর্কিত এ কমিটি ভেঙে দেবেন।

এ সময় তিনি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কমিটি বাতিল করা না হলে সবাই মিলে অনশন করার হুঁশিয়ারি দেন। এছাড়া একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলে তদন্ত কমিটি মানবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সিনিয়র কোন নেতা বললে তা তারা মানবেন না।

(ঢাকাটাইমস/১৪মে/বিইউ/এমআর)