অসুস্থ মাকে বেডে তোলায় কিশোরকে পেটালেন ডাক্তার

প্রকাশ | ১৪ মে ২০১৯, ১৭:১৫ | আপডেট: ১৪ মে ২০১৯, ১৭:২৩

বরগুনা প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

তার অপরাধ অসুস্থ মাকে হাসপাতালের মেঝে থেকে বেডে তুলেছেন। আর এজন্য তাকে পিটিয়ে আহত করেছেন চিকিৎসক। মারধরের শিকার হওয়া কিশোরের নাম মো. জিলানী। সে পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া এলাকার মো. নেছার উদ্দিনের ছেলে। আর তার ওপর হামলাকারী চিকিৎসকের নাম আনোয়ার উল্লাহ। তিনি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার।

গত সোমবার কিশোরকে মারধরের ওই ঘটনার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। সেই সঙ্গে ওই ডাক্তারের বিচারও চেয়েছেন তারা।

ভাইরাল হওয়া ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. আনোয়ার উল্লাহ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে তেড়ে এসে জিলানীকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। হাসপাতালের নার্স, কর্মী ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সামনে প্রকাশ্যে ওই কিশোরকে মেরে আহত করেন ডা. আনোয়ার উল্লাহ।

এ সময় হাতে স্যালাইন লাগানো এক নারী রোগী ডা. আনোয়ার উল্লাহকে নিবৃত্ত করতে গেলে বাধা উপেক্ষা করে জিলানীকে মারধরের পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

মারধরের শিকার হওয়ার পরও ওই কিশোরকে ডাক্তারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। ভিডিওতে শোনা যায় ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে ওই কিশোর বলেছে, ‘অপরাধ করেছেন আপনারা, আর হেইতে কতা কইলে মোগো শাস্তি।’

জিলানীর ভাষ্য, তার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সোমবার সকালে অচেতন অবস্থায় পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তার মাকে কোনো চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে ফেলে রাখেন নার্স ও চিকিৎসকরা।’

জিলানী বলে, ‘আমার মায়ের কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে পরে তাকে ফ্লোর থেকে নারী ওয়ার্ডের একটি বেডে তুলি। এ সময় এক নার্স এসে আমাকে নিষেধ করলে আমি তার নিষেধ উপেক্ষা করি। এর কিছুক্ষণ পরই ডা. আনোয়ার উল্লাহ এসে আমাকে মারধর করে। অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন।’

এদিকে ডা. আনোয়ারের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এবারই প্রথম নয় বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন।

তিনি বলেন, ‘আমরা এ ধরনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে শুনেছি। কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারণে তখন আমরা কোনো কথা বলিনি। কিন্তু এখন এই সীমা অতিক্রম করেছেন তিনি। তার শাস্তির দাবিতে এবার সোচ্চার হবো।’

তবে কিশোরকে মারধরের অভিযোগ প্রকারন্তরে স্বীকার করেছেন আনোয়ার উল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘নারী ওয়ার্ডে এক কিশোর ডাক-চিৎকার করছে- নার্সদের কাছে একথা শুনে নারী ওয়ার্ডে যাই। এ সময় ওই কিশোরের কথা আমি মোবাইলে রেকর্ড করতে চাইলে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন আমি তাকে মারধর করি।’

তবে কেন কিশোরের বক্তব্য রেকর্ড করতে চেয়েছিল আর পুলিশ না ডেকে মারধর কেন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

এদিকে ঘটনাটির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বরগুনার জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ।

ঢাকাটাইমস/১৪মে/ডিএম