ফেনী ছাত্রলীগ

কমিটির চার বছর পার, নেতারা ‘সংসারী’

প্রকাশ | ১৪ মে ২০১৯, ১৯:৩৬ | আপডেট: ১৪ মে ২০১৯, ২১:১৬

আরিফ আজম, ফেনী থেকে

চার বছর আগে জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি হয় ফেনী জেলা ছাত্রলীগের। ২০১৫ সালের ১৪ মে জাঁকজমক সম্মেলনের মাধ্যমে এ কমিটি করা হয়েছিল। এক বছর মেয়াদের এ কমিটির সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে আওতাধীন সবকটি ইউনিটের মেয়াদও। জেলা ছাত্রলীগের বেশিরভাগ নেতাই বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। কেউবা জীবিকার টানে পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। এরপরও আর নতুন কমিটির মুখ দেখছে না ফেনী ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম না থাকায় অনেক নেতারা সাংসারিক জীবনে পা রেখেছেন। বৃহত্তম একটি ছাত্র সংগঠনের এ পরিস্থিতি নেতৃত্ব বিকাশের অন্তরায় বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

সংগঠন সূত্র জানায়, ছাত্রলীগকে তৃণমূলে চাঙ্গা করতে ২০১৫ সালের ১৪ মে নতুন জেলা কমিটি করা হয়। ওই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন যথাক্রমে তৎকালীন সদর উপজেলা সহ-সভাপতি সালাহউদ্দিন ফিরোজ ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাবেদ হায়দার। তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম এক বছরের জন্য ওই কমিটি অনুমোদন করেন।

জেলা ছাত্রলীগের অধীনে আটটি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ফেনী পৌরসভা, ফেনী সরকারি কলেজ ও ছয় উপজেলা কমিটি। ছাত্রলীগের এই শাখাগুলো কোনো না কোনো সমস্যায় আছে।

সরকারি কলেজ, সদর উপজেলা ও দাগনভূঞা, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা শাখায় কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। ফেনী পৌর ও সোনাগাজী উপজেলা শাখায় মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। পরশুরাম উপজেলা শাখা চলছে আহবায়ক কমিটি দিয়ে।

নেতাকর্মীরা জানান, জেলা সভাপতি ফিরোজ সংসারী হয়েছেন। সম্প্রতি কন্যা সন্তানের বাবাও হয়েছেন ফিরোজ। তার শশুর বাড়ি ছাগলনাইয়ার উত্তর আঁধার মানিক গ্রামের মানিক উকিল বাড়ি। আর সম্পাদক জাবেদ হায়দার সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শিবপুর গ্রামের এক প্রবাসীর মেয়ের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

এছাড়াও সহ-সভাপতি সুলতানা রাজিয়া শান্তা ও আলী আশরাফ রুবেল হাজারী, তারিকুল ইসলাম শাকিল, ইব্রাহিম ভূঞা, যুগ্ম-সম্পাদক জমির উদ্দিন পাটোয়ারি বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাম উদ্দিন ইমন, ক্রীড়া সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শামীম, সদস্য নাহিদ মজুমদার, কামরুল হাসান শাহও বিবাহিত বলে জানা গেছে।

আর প্রবাসে পাড়ি দিয়েছেন এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন উপ-গণযোগাযোগ সম্পাদক শিমুল উদ্দিন, প্রকাশনা সম্পাদক সাইদুর রহমান জুয়েল। অন্যদিকে সহ-সভাপতি আবদুর রহিম পিন্টু ও ডালিম কুমার শীল ব্যাংকে চাকরি করছেন।

একাধিক নেতা জানান, জেলা কমিটির অনেকেই নিজ নিজ প্রয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই সংগঠনকে গতিশীল করতে জেলা সহ মেয়াদোত্তীর্ণ সকল কমিটি ভেঙে দেয়ার দাবি জানান তারা।

আওতাধীন ইউনিট কমিটি

সদর উপজেলা: জেলা কমিটি হওয়ার আগে ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে মো. ফখরুল ইসলামকে সভাপতি, আবদুস শুক্কুর মানিককে সাধারণ সম্পাদক ও জাবেদ হায়দারকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। এক বছর মেয়াদের ওই কমিটি পরবর্তীতে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ করা হয়।

এদের মধ্যে একাধিক সহ-সভাপতির মধ্য থেকে সালাহউদ্দিন ফিরোজ ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাবেদ হায়দার বর্তমানে যথাক্রমে জেলা সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।

এদিকে সদর উপজেলার কমিটির সহ-সভাপতি জাহেদুল ইসলাম জাহিদ, যুগ্ম-সম্পাদক রবিউল হক বিপ্লব, সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হক পারভেজ, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহাদাত হোসেন রাহাত, উপ-ধর্ম সম্পাদক আলাউদ্দিন সোহেল প্রবাসে রয়েছেন। বিয়ে করে সাংসার জীবনে ব্যস্ত সভাপতি মো. ফখরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি কাজী মাসুদ রানা, সদস্য শাহাদাত হোসেন রিন্টু, ইমাম হোসেন ইমাম।

সোনাগাজী উপজেলা: ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সাইদুল হক ও আবদুল মোতালেব চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ১৬ মার্চ সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব চৌধুরী রবিনকে সভাপতি ও আমিরাবাদ ইউনিয়ন সভাপতি ইফতেখার হোসেন খন্দকারকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। ইয়াবা সেবনের ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় বহিষ্কার হন ইফতেখার। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন মীর এমরান।

অন্যদিকে ফেনী পৌর শাখা সভাপতি পদে আছেন ইয়াছিন আরাফাত রাজু ও সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আকবর অভি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকলেও এত দিনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদপ্রত্যাশীরা।

জেলা পর্যায়ের একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে রাজপথে সক্রিয়, ছাত্রত্ব, ক্লিন ইমেজ আছে এবং সর্বদা শিক্ষার্থীবান্ধব থাকেন এমন কর্মীদের নিয়ে জেলা কমিটি গঠন প্রয়োজন।

সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নতুন কমিটি গঠনের বিকল্প নেই। নচেৎ সংগঠনে যোগ্য নেতৃত্ব সংকট পড়বে বলে তাদের মত।

সংগঠন শক্তিশালী হলে দল উপকৃত হবে। এ জন্য তারা ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সোমবার ছাত্রলীগের নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবিবের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সবেমাত্র দায়িত্ব পেয়েছি। কেন্দ্রের নির্দেশনার বিষয় জানা নেই। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকই ভালো বলতে পারবেন।’

বিষয়টি নজরে আনতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সোমবার বিকালে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ঢাকাটাইমস/১৪মে/ইএস/ডিএম