মোদির প্রযুক্তি-জ্ঞানে ‘বিস্মিত’ মার্কিন বিজ্ঞানী

প্রকাশ | ১৫ মে ২০১৯, ১০:৪২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন আশির দশকে গুজরাটে বসে ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেছেন তিনি। শুধু তাই নয় সেসময় সেই ছবি ইমেইলে পাঠিয়েছেন লালকৃষ্ণ আদভানীর কাছেও। অথচ বিশ্বে মেইলে ছবি চালাচালির প্রযুক্তির শুরু হয়েছিল ১৯৯২ সালে। কিন্তু মোদি কীভাবে সেসময় এমন কাজ করেছেন তা নিয়ে বিস্মিত হয়েছেন ১৯৯২ সালে মেইলে ছবি পাঠানোর পদ্ধতির আবিষ্কারক মার্কিন বিজ্ঞানী নাথানিয়েল বোরেনস্টাইন।

১৯৯২ সালে যু্ক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির কম্পিউটার বিজ্ঞানী নাথানিয়েল বোরেনস্টাইন চমকে দেন বিশ্বকে। ইমেইলের সঙ্গে গাধাবোটের মতো তিনি জুড়ে দিয়েছিলেন একটা অডিয়ো ফাইল, আর একটা রঙিন ছবি। ইন্টারনেটের ইতিহাস বলছে, সে দু’টিই দুনিয়ায় প্রথম ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট। তাহলে ১৯৮৭-৮৮ সালে নরেন্দ্র মোদী কীভাবে সেই অসাধ্যসাধন করেছিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বোরেনস্টাইন বলেন, ‘কার্যত অসম্ভব। যদি এমনটা ঘটে থাকে, তা হলে প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত প্রযুক্তি-জ্ঞানের প্রশংসা করতেই হয়।’ খবর আনন্দবাজারের।

মোদি দাবি করেছেন, আশির দশকে গুজরাট থেকে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলে তা দিল্লিতে ‘ট্রান্সমিট’ করে চমকে দিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আদভানীকে। মোদির এমন দাবির পর তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।

শুধুমাত্র ইমেইলই নয় বরং মোদি যেসময়ে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলার দাবি করেছেন সেসময়ে ডিজিটাল ক্যামেরা বাজারে আসেনি। এছাড়া ১৯৮৬ সালে ভারতে এডুকেশনাল রিসার্চ নেটওয়ার্কে মেইল চালাচালি শুরু হলেও, আমজনতার হাতে তা আসে ১৯৯৫ সালে ভিএসএনএলের হাত ধরে।

ওই সময়ের কথা উল্লেখ করে বোরেস্টাইন বলেন, মোদি যেসময়ের কথা বলছেন, তখনও তিনি নিজে নেট হাতড়ে চলছিলেন- কীভাবে তাতে মাল্টিমিডিয়া মেসেজ জোড়া যায়। অঙ্কে স্নাতক বোরেনস্টাইন ১৯৮৫ সালে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পিএইচডি করেন এবং সেই সময়েই ইমেইলে ছবি ইত্যাদি অ্যাটাচ করার জন্য তৈরি করেন অ্যান্ড্রু প্রোজেক্ট। এতে দ্বিতীয় কোনও কম্পিউটারে মেইল মারফত ছবি পাঠানো যেত। কিন্তু তা ছিলো বড় ঝামেলার কাজ। এনকোডেড মেসেজ ডিকোড একাজ করতে হতো।

সেসময় অ্যান্ড্রুর অভিনব ক্ষমতা দেখে চমকে গিয়েছিলেন অ্যাপলের প্রাণপুরুষ স্টিভ জোবস এবং তখনই বোরেনস্টাইন ও তার টিমকে অ্যাপলে চাকরির প্রস্তাব দেন। বোরেনস্টাইন অবলীলায় সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। দু’টো বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে ১৯৮৯ সালে তিনি টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগ দেন বেল কমিউনিকেশন রিসার্চে। পরে ১৯৯২ সালের ১১ মার্চ ছিলো সেই ঐতিহাসিক দিন। রঙিন ছবি হিসেবে ইমেইলে নিজের টিমের ছবি জুড়লেন বোরেনস্টাইন। আর অডিয়ো ফাইলে- ১৯৩৪ সালে তৈরি গান ‘লেট মি কল ইউ সুইটহার্ট’ এর প্যারোডি ‘লেট মি মেইল ইউ’ জুড়ে দেন। এরপরই পথ চলা শুরু হল ইন্টারনেট প্রোটোকল ‘মাল্টিপারপাস ইন্টারনেট মেল এক্সটেনশনস’ (মাইম) এর। সহজ হয়ে গেল ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট।

মোদি কি তাহলে আশির দশকে মাইম এর আগের ধাপ অ্যান্ড্রু বা ওই জাতীয় কোনো পদ্ধতিতে ছবি ‘ট্রান্সমিট’ করছিলেন? বোরেনস্টাইন বলেন, ‘কার্যত অসম্ভব। সেই সময়ে ভারতে অ্যান্ড্রু সিস্টেম কেউ ব্যবহার করতেন বলে আমার অন্তত জানা নেই। যদি এমনটা ঘটে থাকে, তা হলে প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত প্রযুক্তি-জ্ঞানের প্রশংসা করতেই হয়। মনে রাখতে হবে, সেক্ষেত্রে ছবি ডিকোড করতে হলে দ্বিতীয় পক্ষেরও সমান দক্ষ হওয়া প্রয়োজন।’

বোরেনস্টাইন বর্তমানে আন্তর্জাতিক ইমেইল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ‘মাইমকাস্ট’ এর মুখ্য বিজ্ঞানী। তার সম্পর্কে বলা হয়, দু’বছর বয়সে তিনি প্রথম ‘অ্যাডাল্ট বই’ পড়েন। আর তৃতীয় শ্রেণিতে কলেজের বই। ফেসবুকে তার একটা প্রোফাইল আছে বটে, কিন্তু সেখানে লেখা— ‘মেসেঞ্জারে নয়, প্রয়োজনে ইমেইল করুন’। সদ্য ষাট পেরিয়েছেন এই বিখ্যাত বিজ্ঞানী। এখনও সফটওয়্যার ডিজাইনিং নিয়েই স্বপ্ন দেখেন। টুইটারে হাইকু লিখছেন— ‘বেস্ট ডিজাইনার নোজ/ ইনভেনশন ফল্‌স ফ্রম দ্য স্কাই/ হেল্প ইজ এভরিহোয়্যার...।’

আশির দশকে মোদীর ডিজি-ক্যামে ছবি তোলার দাবি তবু যেন হজম করতে পারছেন না। মোলায়েম করেই বললেন, ‘হতেও পারে। তিনি হয়ত সেই সময়ে অত্যন্ত আধুনিক কোনো ল্যাব ব্যবহার করেছিলেন। হয়ত তিনি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কর্পোরেট রিসার্চ ল্যাবে গিয়েছিলেন! তবে একটা কথা বলতে পারি, ১৯৮৫ সালে আমি নিজে কোডাকের অফিসে গিয়েছিলাম। ডিজিটাল ফোটোগ্রাফি তখনও বাস্তব রূপ পেয়েছিল বলে মনে হয়নি।’

ঢাকা টাইমস/১৫মে/একে