বিদেশে ভাগ্যান্বেষণের অবৈধ যাত্রা ঠেকান

আরিফুর রহমান
 | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০১৯, ২২:০৩

সাগরপথে অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকালে গত শুক্রবার তিউনিশিয়ার উপকূলসংলগ্ন ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে যে ৬৫ জন নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩৭ জন বাংলাদেশি। আর যাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে তাদেরও বেশির ভাগ বাংলাদেশি বলে জানা গেছে জাতিসংঘের অভিবাসীবিষয়ক সংস্থার (আইওএম) বার্তায়।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ভাষ্য, অবৈধভাবে সমুদ্রপথে লিবিয়া থেকে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তারা। ভূমধ্যসাগরের ভয়ংকর এ পথে প্রায় সময়ই শরণার্থীসহ নৌকাডুবির খবর পাওয়া যায়। এ দিক দিয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে লিবিয়া থেকে শরণার্থীরা নৌকাযোগে ইউরোপের দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করে থাকে।

এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে তারা সবাই ভাগ্যান্বেষণে এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করেছিলেন। নানা দেশ ঘুরে, পাহাড়-নদী ডিঙিয়ে অবেেশষ তারা সাগর পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের তীরে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিধাতা তাদের দিকে ফিরে তাকাননি। কারও সলিল সমাধি হয়েছে। আর যারা বেঁচে আছেন, তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

ভাগ্যান্বেষণে মানুষের ভিনদেশে পাড়ি জমানো নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই ধারা। অতীতে স্থলপথের পাশাপাশি সাগরপথেও ছিল এই ভাগ্যান্বেষণ যাত্রা। তখন পাসপোর্ট-ভিসার ঝামেলা ছিল না বলে পায়ে হেঁটে কিংবা তুলনামূলক নিরাপদ জলযানে সবার সমক্ষে মানুষ এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি জমিয়েছে নির্বিঘেœ। কিন্তু এখন সে সুযোগ আর নেই। উদ্দিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সেখানে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাসপোর্ট-ভিসাসহ আছে আরও নানা আইন-কানুন।

তাই অনেকে বিপুল টাকা খরচ করে অবৈধ পথে ঝুঁকি নেয় জীবনের। বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে ইউরোপে পৌঁছাতে জনপ্রতি ২০ লাখ টাকাও খরচ হয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, মাসের পর মাস খেয়ে-না খেয়ে কাটাতে হয় তাদের। এত খরচ এত কষ্ট, তবু মানুষের এই যাত্রা থামে না কখনো।

নানা সময়ে সাগরে নৌকা ডুবে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশীর সলিল সমাধি হয়েছে। তাতে বাংলাদেশিও ছিলেন। এরপর সরকার অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তা যে কোনো কাজে আসেনি, বোঝা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে মেক্সিকো সীমান্তে মার্কিন সরকার যেসব অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের আটক করেছিল, সেখানেও বেশ কিছু বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন।

অবৈধ পথে নাগরিকদের ভিনদেশে পাড়ি জমানো কোনো দেশের ভাবমূর্তির জন্য ইতিবাচক নয়। বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সামনে পড়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবৈধ পথে বিদেশ গমনের পথ বন্ধ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। বিশেষ করে যারা তরুণ-যুবকদের প্রলুব্ধ করে অবৈধ পথে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার ব্যবসা খুলে বসেছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। না হলে ভাগ্যান্বেষণের ফাঁদে পড়ে বিদেশের সাগর-মহাসাগর আর বন-জঙ্গলে প্রাণ হারাতে থাকবে আমাদের শত শত তরুণ প্রাণ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজপাট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা