নামি প্রতিষ্ঠানের পণ্যে ভেজাল

আমরা আর কাকে বিশ্বাস করব?

প্রকাশ | ১৬ মে ২০১৯, ২২:০৭

আরিফুর রহমান

খাদ্যপণ্যে ভেজাল নিয়ে দেশজুড়ে যখন তোলপাড় তখন নামিদামি কোম্পানিগুলোতে ভরসা রাখারও আর উপায় রইল না। মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের পরীক্ষা বলছে এসিআই, প্রাণ, সিটি গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের মতো প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের অনেক খাদ্যপণ্যও নিরাপদ নয়।

দৈনিক ঢাকা টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য জানা গেছে। ওই খবরে বলা হয়েছে, বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ৫২টি পণ্য বাজার থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। এর মধ্যে বহুল কাটতি থাকা সরিষার তেল, লবণ, লাচ্ছা সেমাই, ঘিসহ মশলা রয়েছে।  

ভেজালের তালিকায় আরো আছে ড্যানিস ফুড কোম্পানির কারি মশলা, ওয়েল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের লাচ্ছা সেমাই, মোল্লা সল্ট লবণ, বাঘাবাড়ি স্পেশাল ঘি, সান চিপসের নাম। ডানকানের মতো নামি প্রতিষ্ঠানের পানিও পানের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ নয়।

এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই কিন্তু ‘আন্ডার গ্রাউন্ড’ কোম্পানি নয়। পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে আকর্ষণীয় মোড়কে সাজিয়ে তারা বাজারজাত করে। ফলে স্বভাবতই খোলা পণ্যের চেয়ে তাদের প্যাকেটজাত পণ্যের দাম যথেষ্টই বেশি। তার পরও ক্রেতারা স্বাস্থ্যসম্মত ও ভেজালমুক্ত বিবেচনায় বেশি দাম দিয়ে এসব কোম্পানির পণ্য কিনে থাকে।

এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে কোম্পানিগুলো দিনের পর দিন ঠকিয়ে গেছে ক্রেতাদের। ঠকানো না হয় টাকার ওপর দিয়ে গেল। কিন্তু টাকা নিয়ে কোম্পানিগুলো যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য ক্রেতাদের গছিয়ে দিল তার দায় কে নেবে? এর বিচার কী হবে।

সাধারণত, এসব পণ্যে মেশানো ভেজালের প্রভাব শরীরে তাৎক্ষণিক বোঝা যায় না। এই সুযোগটাই মূলত নিচ্ছে কোম্পানিগুলো। এই ভেজালের ক্ষতিকর উপাদান ধীরে ধীরে শরীরে জমা হয়, নানা রোগ বাসা বাঁধে। এমনকি তা ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিসহ মৃত্যুর কারণ হয়।

এখন কথা হলো, এসব পণ্যের গায়ে বিএসটিআইয়ের লগো সংযুক্ত থাকে। তার মানে এসব পণ্য মানসম্মত বলে বিবেচিত। ক্রেতা নিশ্চিন্তে কিনতে পারে। তাহলে কী করে ভেজালযুক্ত হয়ে বাজারে আসছে পণ্যগুলো?

যেভাবেই আসুক, এ কথা বলতেই হচ্ছে, কোম্পানিগুলো ক্রেতাদের সঙ্গে অসাধুতা করেছে। মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। এই অপরাধ মানুষ হত্যার শামিল। আর বিএসটিআইয়ের লগো ব্যবহার করে মানসম্মত পণ্য না দিয়ে প্রতারণা ও আইন ভঙ্গ করেছে।

আমরা আশা করি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেজালকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেবে। একই সঙ্গে বিএসটিআইসহ সরকারি কোনো সংস্থার যোগসাজশ যদি থাকে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে, তবে তাদেরও খুঁজে বের করা হোক।

বাজার থেকে যেসব পণ্য তুলে নিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে সেটা এখনই পালন করা উচিত। আমরা আশা করি, হাইকোর্টের রায়ের একটি সুদূরপ্রসারী ফল আসবে। যেসব প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের প্রতারিত করেছে, ওরা সাবধান হয়ে যাবে। পণ্যের যে গুণগত মান, সেটা নিশ্চিত করতে এই রায়টা মাইলফলক হয়ে থাকবে।