মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা দেশদ্রোহেরও শামিল

প্রকাশ | ১৬ মে ২০১৯, ২২:১৭

আরিফুর রহমান

কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে ‘ভুয়া’ সম্বোধন না করার নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের কেউ এ ধরনের আচরণ করলে তাদের আদালতে তলব করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইসংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

নিঃসন্দেহে এই নির্দেশনা সময়োপযোগী ও প্রশংসার দাবি রাখে। মুক্তিযোদ্ধারা বাঙালি জাতির বীর সন্তান। জীবন বাজি রেখে এ দেশ স্বাধীন করেছেন তারা। তাদের প্রতি আমাদের সব সময় শ্রদ্ধা ও সমীহ মনোভাব পোষণ করতে হবে, এ বিষয়ে কোনো তর্ক চলে না। তর্ক করার মনোবৃত্তি পোষণ করাও অন্যায় বলে বলে মনে করি।

এটাও ঠিক যে, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বসূচক অবদানের জন্য তাদের প্রতি সমাজ ও সরকারের যে গৌরববোধ, তার মহিমা ভোগ করতে অনেক অমুক্তিযোদ্ধা এমনকি স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বিতর্কিত ভ’মিকা পালনকারী কেউ কেউ  মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ ও তালিকাভুক্ত হয়েছে কিংবা হওয়ার চেষ্টা করছে।

এ ব্যাপারে আদালতের ভাষ্য, মুক্তিযোদ্ধা সনদ ভুয়া হতে পারে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা কখনো ভুয়া হতে পারে না। তাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দের ব্যবহার করা যাবে না। একজন ভুয়া সনদধারীর কারণে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ভুয়া বলা যায় না।

আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষের ভাষা ব্যবহারে নির্বিচার ও অবলীলায় শব্দ প্রয়োগ ও শব্দচয়ন দেখা যায়। এমনকি অনেক উচ্চশিক্ষিত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এ ক্ষেত্রে অসতর্ক দেখা যায়। আর রাজনীতিবিদদের বিষয়ে তো বলাই বাহুল্য। আমরা যখন-তখন যার-তার উদ্দেশে নানা অশালীন শব্দ প্রয়োগ করতে দ্বিধা করি না কিংবা ভাবি না। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে ভুয়া বলে সম্বোধন করতে আমাদের বাধে না। এটা জাতি হিসেবে আমাদের ছোট বই বড় করে না।

কারও চরিত্রহনন কিংবা কোনো অর্জনকে অশালীন ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে মানহানির বিরুদ্ধে দেশে আইন আছে। ফৌজদারি আইনে ৫০০ ও ৫০১ ধারায় মামলা ও শাস্তির বিধান রয়েছে তাতে। সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছর। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে ভুয়া বলে সম্বোধন করার অপরাধ এর চেয়েও বড় শাস্তির দাবি রাখে নিঃসন্দেহে। এমনকি যে দেশের জন্য একজন মানুষ জীবন বাজি রেখেছিলেন, এক সাগর রক্ত পেরিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, তাকে অপমান করা দেশদ্রোহেরও শামিল বলে আমরা মনে করি।

আদালত যে সতর্কতা জারি করেছে, তাতে এরপর আর কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের ভুয়া বলে সম্বোধন করার সাহস দেখাবে না বলে আমাদের বিশ্বাস।

একই সঙ্গে আর একটি বিষয়ে আদালতের কাছ থেকে এমন নির্দেশনা আশা করি আমরা: যারা সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করে বা করেছে, কিংবা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে বেড়ান তাদেরও আদালতে তলবের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।