অবৈধ পথে মানবপাচার চক্র

ইউরোপের স্বপ্ন দেখিয়ে যেভাবে পাচার

প্রকাশ | ১৭ মে ২০১৯, ১৯:১৮

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিলাসী জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে বিশে^র বিভিন্ন উন্নত দেশে বিশেষ করে ইউরোপে মানব পাচার করে একটি চক্র। বাংলাদেশ থেকে প্রথমে বিমানে করে কলকাতা হয়ে শ্রীলঙ্কা নিয়ে যাওয়া হতো। পরে ইস্তাম্বুল হয়ে তাদের ছোট্ট নৌকা বা ট্রলারে করে ইউরোপের উদ্দেশে তুলে দেওয়া হয়। বৈরী আবহাওয়ায় অনেক নৌকা ডুবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে মানব পাচারকারীদের এ ধরনের পাঁচ-ছয়টি এজেন্সি রয়েছে দেশে।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মুফতি মাহমুদ খান।

৯ মে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরের তিউনেশিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে ৮৫-৯০ জন নিহত ও নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে ৩৯ জন বাংলাদেশি রয়েছে। এ ঘটনায় শরীয়তপুরের নড়িয়া ও সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় দুটি মামলা করেন স্বজনরা।

ওই নৌকাডুবিতে প্রাণ হারানো বাংলাদেশি তরুণদের পাচারের পেছনে রয়েছে দেশের তিন হোতা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা হলেন- এনামুল হক তালুকদার, মোহাম্মদ আক্কাস মাতুব্বর ও আব্দুর রাজ্জাক ভূঁইয়া।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মাহমুদ খান মুফতি বলেন, ‘মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে উচ্চ বেতনে বিদেশে কর্মসংস্থানের লোভ দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অপরাধ করে আসছে চক্রটি। এই মানব পাচারকারী চক্রটি ইউরোপ পাঠানোর জন্য ৮ লাখ টাকা করে নেয়। ৫ লাখ টাকা লিবিয়া যাওয়ার আগে এবং বাকি ৩ লাখ টাকা লিবিয়া যাওয়ার পর ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে নিচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পাঠানো মানব পাচারকারীদের এ ধরনের পাঁচ-ছয়টি এজেন্সি রয়েছে, যার দুটি এজেন্সির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

গ্রেফতারকৃত এনামুল হক এবং রাজ্জাক একটি সিন্ডিকেটের সদস্য। এনামুল হক বিএ পাস করে সিলেটে ‘ইয়াহিয়া ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সি চালায়। এক যুগের বেশি সে এই পেশায় নিয়োজিত। আর আব্দুর রাজ্জাক এইচএসসি পাস। সে গ্রেফতারকৃত এনামুলের ব্রোকার হিসেবে কাজ করত।

যেভাবে পাঠানো হয়

ইউরোপে মানব পাচারকারী চক্র প্রথমে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়াতে পাঠানো হয়। এজন্য তারা তিনটি রুট ব্যবহার করে। প্রথমে বাসযোগে কলকাতা। কলকাতা বিমানবন্দর যোগে দিল্লিতে। দিল্লি থেকে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়। ভিকটিমরা শ্রীলঙ্কায় এজেন্টদের তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকদিন অবস্থান করেন। তারপর বিমানযোগে ইস্তাম্বুল তুরস্কের ট্রানজিট হয়ে লিবিয়ার ত্রিপলি পাঠানোর ব্যবস্থা করে। ভিকটিমরা ত্রিপলিতে পৌঁছানোর পর, সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি কথিত ‘গুড লাক ভাই’সহ আরও কয়েকজন এজেন্ট তাদের গ্রহণ করে থাকে। ত্রিপলিতে আরো কয়েক দিন অবস্থানের পর ভিকটিমদের আত্মীয়-স্বজন হতে বাকি অর্থ আদায় করে সমুদ্রপথে ইউরোপে পাঠানো হয়। 

আবার বাংলাদেশ থেকে দুবাইয়ের মাধ্যমেও লিবিয়ায় পাঠানো হয়। দুবাইয়ে পৌছে তাদেরকে বিদেশী এজেন্টদের তত্ত্বাবধানে ৭/৮ দিন অবস্থান করানো হয়। বেনগাজিতে পাঠানোর জন্য এজেন্টরা কথিত ‘মরাকাপা’ নামক একটি ডকুমেন্ট দুবাইতে পাঠায়। যা দুবাইয়ে অবস্থানরত বিদেশি এজেন্টদের মাধ্যমে ভিকটিমদের নিকট দেওয়া করা হয়। ওই ডকুমেন্টসহ বিদেশী এজেন্ট তাদের আম্মান (জর্ডান) ট্রানজিট নিয়ে বেনগাজী লিবিয়ায় পাঠায়। বেনগাজীতে বাংলাদেশি এজেন্ট তাদের বেনগাজী হতে ত্রিপলিতে স্থানান্তর করে। এভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ পথে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে।

ঢাকাটাইমস/১৭মে/ ইএস