হাসপাতালে না আসা ১৬৭ ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশ | ১৮ মে ২০১৯, ০৮:৩৫ | আপডেট: ১৮ মে ২০১৯, ০৯:৩৭

জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা টাইমস
প্রতীকী ছবি

চাকরিতে আছেন, অথচ হাসপাতালে আসছেন না, এমন ১৬৭ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কর্মকর্তারা বলছেন, আইনগত নিষ্পত্তি শেষে তাদেরকে প্রয়োজনে চাকরিচ্যুত করা হবে।

এই সংখ্যাটি নিশ্চিত করলেও কোন কোন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারা কোন কোন হাসপাতালে কত দিন ধরে অনুপস্থিত, এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, যে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে, তারা কোনো যোগাযোগই রাখছেন না হাসপাতালের সঙ্গে। তারা কোথায় আছেন, সেই তথ্যও নেই। এদের কেউ কেউ তিন বা সাড়ে তিন বছর ধরেও কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তবে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ না করলেও তাদের ব্যাংক হিসাবে বেতন গেছে। যদিও মামলার পর বেতন বন্ধ করা হয়েছে। এর আগে অনুপস্থিতির বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

১৬৭ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার তথ্য মিলেছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অনুপস্থিত এক চিকিৎসকের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে। মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীন তরফপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন রেজুয়ানা ইসলাম তরা গত সাড়ে তিন বছর ধরে কর্মস্থলে আসছেন না। তিনি কোথায় আছেন সে তথ্য জানেন না দপ্তরের কেউ।

এই চিকিৎসকের বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা টাইমসে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। সে সময় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহরিয়ার সাজ্জাত। কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়টি জানতে চাইলে গত বৃহস্পতিবার তিনি জানান, রেজুয়ানার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

রেজুয়ানা ইসলাম ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট মির্জাপুরের তরফপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেন। ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি আর হাসপাতালে আসছেন না। তবে তিনি যে হাসপাতালে আসছেন না, সেই তথ্য টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জনকে জানাতে সাত মাস সময় নেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর এই তথ্য জানানো হলেও পৌনে তিন বছরেও কোনো ব্যবস্থা নেননি সিভিল সার্জন।

গত ফেব্রুয়ারিতে এ বিষয়ে ঢাকা টাইমসের জন্য প্রতিবেদন তৈরির জন্য সিভিল সার্জন শরীফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, রেজুয়ানার কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।

মির্জাপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহরিয়ার সাজ্জাত জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পর রেজুয়ানা ইসলামসহ সারাদেশে ১৬৭ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তবে তারা কোথায় আছেন তাদের খোঁজ নেই।

অনুপস্থিত রেজুয়ানার বেতন-ভাতার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘যেহেতু তার বা তার মতো অন্যদের খোঁজ নেই বেতন-ভাতা পাওয়া প্রশ্নই উঠে না। সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

চাকরি করেও সরকারি হাসপাতালে যান না- এমন চিকিৎসকের সংখ্যাই বেশি। দেশের ১১টি হাসপাতালে দুর্নীতি দমন কমিশনের একদিনের অভিযানে ৬০ শতাংশ চিকিৎসকের অনুপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে।

গত জানুয়ারিতে আলোচিত সেই অভিযানের পর নানা সময় বিভিন্ন হাসপাতালের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন এসেছে। এমনও দেখা গেছে, তিন দিনের ছুটি নিয়ে সাড়ে তিন বছর ধরে লাপাত্তা চিকিৎসক। সেবা না দিলেও জনগণের করের টাকার সাড়ে ১৩ লাখ টাকা বেতন ভাতা হিসেবে এক চিকিৎসকের পকেটে ঢোকার ঘটনাও ঘটেছে।

আর চিকিৎসকদের গণহারে কাজে ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসার পর খোদ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি এসেছে, হাসপাতালে না গেলে চাকরি থাকবে না। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রায় পৌনে ২০০ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলার এই ঘটনা ঘটল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে জানান, চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তার পর তারাও তৎপর হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দেশবাসীর কাছে চিকিৎসকদের বিষয়ে ভালো বার্তা যাচ্ছে না। তাই তারা চাইছেন, ডাক্তাররা যারা চাকরি করবেন, তারা সময় মতো অফিসে আসবেন।

তবে পরিস্থিতির যে খুব বেশি উন্নতি হয়েছে তা নয়। কারণ, সম্প্রতি নড়াইল সরকারি হাসপাতালে সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার ঝটিকা অভিযানেও চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। এরপর চার জন চিকিৎসককে বরখাস্ত করা হয়েছে।

চিকিৎসকদেরকে হাসপাতালে আনতে গত জানুয়ারিতে একটি বিশেষ উদ্যোগের আলোচনা হয়েছিল। তার অব চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে হাসপাতালে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ডিজিটাল হাজিরা পদ্ধতি চালু নিয়ে আলোচনা হয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। তবে এখনো সে পদ্ধতি চালু হয়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটি সব সরকারি দপ্তরে একসঙ্গে চালু হলে সেটা ভালো দেখায়। কেবল হাসপাতালে এই পদ্ধতি চালু হলে চিকিৎসক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভালোভাবে নাও নিতে পারেন। তারপরও বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে।’

চিকিৎসক নিয়োগের খবর নেই

সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলো তীব্র চিকিৎসক সংকটে ভুগছে। ডাক্তারদের একটি বড় অংশ কেবল অনুপস্থিত তা নয়, বিপুল সংখ্যক পদও ফাঁকা। গত ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন সে সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তবে সেই নিয়োগ এখনো হয়নি। তবে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, চলতি বছর চার হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। আর আগামী বছর নিয়োগ দেওয়া হবে আরো পাঁচ হাজার। এই নিয়োগের জন্য সুপারিশ এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি।

(ঢাকাটাইমস/১৮মে/জেবি)