‘মাদকে সয়লাব ময়মনসিংহ’

সরকার মো. সব্যসাচী
| আপডেট : ১৮ মে ২০১৯, ১৫:২২ | প্রকাশিত : ১৮ মে ২০১৯, ১৫:২০

'নিজের থুথু উপরের দিকে ছুড়ে দিলে তা নিজের উপরই এসে পড়ে'-এই প্রবাদটি জানার পরেও আজ কিছু বলতে বাধ্য হচ্ছি৷ আমার প্রিয় ময়মনসিংহ, যেখানে আজো আমার স্বপ্নগুলো ডানা মেলে৷ যেখানে আমার প্রতিটি নিশ্বাস-প্রশ্বাস বাঁকে বাঁকে মিশে আছে৷

আজ এক অভিশাপ ভর করেছে আমার প্রিয় জন্মস্থানে৷ আজ ময়মনসিংহের বাতাস ক্রমে ক্রমে বিষাক্ত হয়ে পড়ছে৷ মাদকের ভয়াল থাবা গ্রাস করে বেড়াচ্ছে আমার প্রিয় ময়মনসিংহে৷

ময়মনসিংহের চিহ্নিত কিছু স্থানে প্রকাশ্যে বিক্রি ও সেবন হচ্ছে মাদক দ্রব্যাদি৷ যারা মাদকদ্রব্য বিক্রি করছে তারা যেমন ময়মনসিংহ শহরে বুক ফুলিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে আর যারা মাদক দ্রব্য কিনছে ও সেবন করছে তারাও কম কিসে৷

ধীরে ধীরে এসকল মাদক চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ জনতা৷ সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বেশিসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীরাই নিজেদেরকে মাদক দুনিয়ায় যুক্ত করে ফেলছে৷ কেননা ময়মনসিংহে মাদকদ্রব্য হয়ে উঠেছে অত্যন্ত সহজলভ্য৷ চাইলেই আপনি পাচ্ছেন সকল ধরনের মাদক দ্রব্য৷

আজ এই মাদক চক্রগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠছে৷ এখনি যদি চক্রগুলোর দৌরত্ব বন্ধ করা না যায় তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম থুবড়ে পড়বে আস্তাকুঁড়ে৷

মাদক চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সময় এখনি৷ এদেরকে প্রশ্রয় দিচ্ছি আমার, আপনার মতো লোকজনেরাই৷ কারও একার পক্ষে এটার সমাধান করা অসম্ভব৷ সমাজের সর্বস্তরের মানুষজনদের সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনকে এর সমাধান করতে হবে৷ তা না হলে মাদকের নিরাপদ অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে আমাদের প্রাণের ময়মনসিংহ৷

স্কুল-কলেজের বহু ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে মাদক সেবন করছে নদীর এপারে-ওপারে, বিপিন পার্ক, জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালার সামনে দিয়ে চলে যাওয়া নদীর পাড়, জয়নুল আবেদীন পার্কের সারিন্দা থেকে ব্রক্ষ্মপুত্র ভ্যালির আশপাশে নিমিষেই সেবন করছে মাদকদ্রব্য৷

তাই প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষকগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, পাশাপাশি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি প্রত্যেক বাবা-মার প্রতি, আপনারা আপনাদের সন্তানের প্রতি সোচ্চার হোন৷ আপনারা আপনাদের সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেন৷ বেশি করে খোঁজ খবর নেন আপনার সন্তানের৷ অনেক সময় দেখা যায়, অবাধ্য সন্তানের ভয়ে বাবা-মা কিছু বলেন না-তাতে করে বিপদ আরও বেশি হয়৷ অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য করার চেষ্টা করুন তা না হলে আপনার এই অবাধ্য সন্তানকে প্রশাসনের কাছে তুলে দেন৷

ময়মনসিংহের কয়েকটি কলেজের রাতের চিত্র আরও ভয়াবহ৷ যেখানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মাদকদ্রব্য৷ আর মাদক সেবন করার নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে কলেজগুলো৷ প্রশাসনের নীরব ভূমিকা আরও বিপদগামী করে তুলেছে ময়মনসিংহবাসীদের৷ আপনার সন্তান কলেজের ভিতরে কি করছে রাতের আঁধারে তা খোঁজ নেন দয়া করে৷ কলেজ প্রশাসনদের গা ছাড়া ভাব দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেয়৷ আপনি ইচ্ছা ও অনিচ্ছাকৃতভাবে এসব না দেখার ভান করে পার করে দিবেন প্রতিদিন৷ তার বিনিময়ে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের প্রজন্ম৷ তার দায়ভার আপনাদের উপরই বর্তায়৷

আর নয় প্রতিবাদ, এবার হোক প্রতিরোধ৷ যে সকল এলাকায়, যে সকল স্কুল-কলেজে মাদকের অভয়ারণ্য সেগুলোর আশ্রয়দাতাদের খুঁজে বের করুন৷ সমাজের যে সকল মানুষ এ চক্রের সঙ্গে জড়িত তাদের কথা সকলেরই জানা৷

তাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রইলো এখনি সময় আমাদের প্রাণের শহর ময়মনসিংহকে বদলে দেওয়ার৷ এখনি সময় প্রশাসনের সমাজের গুণীজনদের সঙ্গে নিয়ে টিম গঠন করে আদর্শবান মানুষদেরকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা৷

আর লক্ষ্য রাখতে হবে যারা মাদক নিয়ে ব্যবসা করছে তারাই যেন মাদক নির্মূলের মিছিলে সামনে থেকে নেতৃত্ব না দেয়৷ মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়দাতাদের নির্মূল করেই শুরু হোক মাদক ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন৷

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :