যশোরে এক মাস পর কবর থেকে গৃহবধূর লাশ উত্তোলন

প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৯, ২২:০৭

যশোর প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

যশোরের মণিরামপুরে মনোয়ারা ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মৃত গৃহবধূ শামছুন্নাহারের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে রবিবার বেলা ১১টার দিকে জয়পুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থান থেকে নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসানের উপস্থিতিতে পুলিশ ওই গৃহবধূর মরদেহ উত্তোলন করেন।

এসময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খান আব্দুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

ওই ক্লিনিকে ভুয়া ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করায় গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে গৃহবধূর স্বামী ক্লিনিকের মালিকসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মণিরামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন তার স্বজনরা। মামলার সূত্র ধরে রবিবার লাশ উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এসআই খান আব্দুর রহমান।

খান আব্দুর রহমান জানান, জয়পুর গ্রামের আসাদুজ্জামানের স্ত্রী শামসুন্নাহারের গত ১১ এপ্রিল রাতে প্রসব বেদনা ওঠে। তখন তাকে মণিরামপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় গেটে অবস্থিত মনোয়ারা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। বাইরে থেকে ডাক্তার আনার নামে সাড়ে ১১ হাজার টাকা চুক্তিতে সিজারের কথা বলে ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাই রোগীকে ভর্তি করান। কিন্তু কোনো ডাক্তার আনেননি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাই নিজেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে শামসুন্নাহারের অপারেশন করেন। প্রসূতি একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন। আব্দুল হাইয়ের সহযোগীরা সেই নবজাতককে এনে বাবা আসাদুজ্জামানের কোলে দেন। আসাদুজ্জামান তার স্ত্রীর কথা জানতে চাইলে ‘রোগী ভালো আছে’ বলে জানান কথিত ডাক্তার।

কিছুক্ষণ পর মালিক আব্দুল হাই জানান, প্রসূতির অবস্থা খারাপ তাকে খুলনায় নিতে হবে। ঘণ্টা দেড়েক পরে আবার তারা জানান, খুলনায় না রোগীকে এই মুহূর্তে যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। পরে ডাক্তারের কথামতো রাত সাড়ে তিনটার দিকে আসাদুজ্জামান ক্লিনিকের অ্যাম্বুলেন্সে স্ত্রীকে নিয়ে যশোরের উদ্দেশে রওনা হন।

ওই সময় অ্যাম্বুলেন্সে ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাই নিজেও ছিলেন। অ্যাম্বুলেন্সে রোগী ওঠানোর সময় ভেতরে আলো বন্ধ করা ছিল। রোগীর স্বামী আলো জ্বালাতে বললে রোগীর ক্ষতি হবে বলে জানান ডাক্তার। পরে অ্যাম্বুলেন্স কিছুদূর গেলে আসাদুজ্জামানের দুই পা জড়িয়ে ধরেন আব্দুল হাই। হাই তাকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রোগীর মৃত্যু হলেও কাউকে কিছু না জানাতে অনুরোধ করেন। অ্যাম্বুলেন্স কুয়াদা বাজার পার হলে ভেতরে আলো জ্বালিয়ে শামছুন্নাহারকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ওই ঘটনায় গত ১৪ এপ্রিল গৃহবধূর স্বামী আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাইসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এসআই আব্দুর রহমান বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে গৃহবধূর মরদেহ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। আবেদনেরভিত্তিতে এসিল্যান্ড সাইয়েমা হাসানের উপস্থিতিতে বেলা ১১টার দিকে মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।

এদিকে মামলার সূত্র ধরে পুলিশ ঘটনার দুইদিন পর ক্লিনিকের মালিক আব্দুল হাইকে আটক করে। তার কিছুদিন পর তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পান।

একই সাথে অভিযুক্ত মনোয়ারা ক্লিনিক সিলগালা করে বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। ক্লিনিকটি এখনো বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। 

(ঢাকাটাইমস/১৯মে/এলএ)