বেরোবিতে সোয়া কোটি টাকা বণ্টন নিয়ে অসন্তোষ

প্রকাশ | ২০ মে ২০১৯, ০৯:৫৮

ইভান চৌধুরী, বেরোবি প্রতিনিধি
ফাইল ছবি

চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা থেকে মোট আয়ের উদ্বৃত্ত সোয়া কোটি টাকা শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অর্থের পরিমাণ কমবেশি হওয়ায় শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা অসন্তোষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ সেশনে ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি বাবদ মোট ৩ কোটি ৪২ লাখ ৭০৫ টাকা আয় করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেখান থেকে ৮ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ কেটে নেয় টেলিটক। অবশিষ্ট ৩ কোটি ১৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে ৪০ শতাংশ হারে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা জমা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার খরচ বাবদ ব্যয় হয় ৭৪ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা। সব হিসাবের পর অবশিষ্ট ১ কোটি ১৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা। গত সোমবার বণ্টন করে দেয়া হয়।

জানা গেছে, এই সোয়া কোটি টাকা থেকে সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক, ডিন ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে সম্মানী বাবদ তিনি পেয়েছেন তিন লাখ টাকা।

ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল পেয়েছেন ১০ হাজার টাকা। আর, বাকি অর্থ অনুষদভিত্তিক ভাগ করে  দেয়া হয়েছে। যে অনুষদে বেশি ফরম বিক্রি হয়েছে সে অনুষদ বেশি পরিমান অর্থ পেয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, কলা অনুষদ পেয়েছে ২১ লাখ ৪২ হাজার  ১৪১ টাকা, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ৪১ লাখ ২৭ হাজার ২০৯ টাকা, বিজনেস অনুষদ পেয়েছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ২৯ টাকা, বিজ্ঞান অনুষদ ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৮৬৮ টাকা, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ ৬ লাখ ৫ হাজার ২৬৯ টাকা এবং জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদ পেয়েছে  ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৯৯ টাকা।

 

কয়েকজন শিক্ষক জানান, এ বছর সবচেয়ে বেশি অর্থ পেয়েছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত শিক্ষকরা। তারা গড়ে ৬৫-৭০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। এই অনুষদের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা এক শিক্ষক একাই পেয়েছেন এক লাখ ৩২ হাজার টাকা।

সবচেয়ে কম পেয়েছেন বিজনেস অনুষদভুক্ত শিক্ষকরা। তারা গড়ে ৩০-৩৫ হাজার টাকা করে পেয়েছেন।

এ ছাড়া, কর্মকর্তারা নামমাত্র সম্মানী পেয়েছেন। তুলনামূলক কম টাকা পাওয়া শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন শিক্ষক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, পরীক্ষা চলাকালীন দায়িত্বরত প্রত্যেক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে মোটা অঙ্কের কেন্দ্র ফি দেওয়া হয়। এ ছাড়া, ওই সময় প্রত্যেক অনুষদ খরচ বাবদ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আগাম নিয়ে থাকে।

তারা আরও জানান, একজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণ করতে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। কিন্তু, ফরম পূরণের সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।

ভর্তি পরীক্ষা থেকে আয়ের অর্থ বণ্টন করে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, শিক্ষকরা যে পরিমাণ পরিশ্রম করেন তার তুলনায় সম্মানী কম পান। তবে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে এ ধরনের প্রশ্ন উঠবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, ভর্তি পরীক্ষা বাবদ শিক্ষকদের দীর্ঘদিন বিভিন্ন কাজ করতে হয়। তার পারিশ্রমিক স্বরূপ এই অর্থ তাদের দেওয়া হয়। এটি মোট আয়-ব্যয়ের অংশ, অতিরিক্ত অংশ নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বক্তব্য জানতে  তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাতে সাড়া দেননি।

(ঢাকাটাইমস/২০মে/জেবি)