সরগরম হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লী

প্রকাশ | ২০ মে ২০১৯, ১৩:২১

রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের লাখ লাখ তাঁত মালিক ও তাঁত শ্রমিকেরা তাঁতবস্ত্র উৎপাদনে সর্বোচ্চ ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁত মালিক ও তাঁত শ্রমিকদের টানা কর্মচাঞ্চল্যতা আর তাঁতের খটখট শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে এ জনপদ। সিরাজগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি গামছার ব্যাপক কদর রয়েছে দেশ ও বিদেশে। সারা বছরের এই মৌসুমে হস্তচালিত তাঁতবস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। আর সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে তাঁতী ও শ্রমিকরা বাড়তি একটু আয়ের জন্য কোমর বেঁধে কাজ করে চলেছেন। ফলে বর্তমানে তাঁতের খটখট শব্দ আর তাঁত মালিক এবং শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততায় শেষ সময়ে সরগরম হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লীগুলো।

তাঁতীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে সর্বশেষ যতটুকু সময় রয়েছে ততটুকু সময়ে শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, বেলকুচি, কামারখন্দ, চৌহালী, এনায়েতপুরে ছাতার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অগণিত সচল তাঁত কারখানাগুলোতে পুরোদমে তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের কাজ চলছে। তাঁতীরা সারা বছরে তাঁতবস্ত্র উৎপাদন করতে গিয়ে ঋণপানের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। এ মৌসুমে উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র কাপড়ের হাটে বিক্রি করে সারা বছরের লোকসান পুষিয়ে নেন। এজন্য এ সময় তারা অতি ব্যতিব্যস্ত সময় অতিবাহিত করে থাকেন।

ঈদ এলেই আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠার জন্য তাঁতী ও তাঁতশ্রমিকদের খরচ বহুগুণে বেড়ে যায়। আর সেই বর্ধিত খরচের টাকার যোগান দিতেই তাঁতীরা কোমর বেঁধে কাজ করছেন। তারা জানিয়েছে, এতেই তাদের  সুখ, এতেই তাদের শান্তি।

সিরাজগঞ্জে তাঁত কারখানায় সচল তাঁতের মধ্যে পিটলুম, হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুম রয়েছে। এসব তাঁত কারখানায় সম্পৃক্ত থেকে প্রায় আড়াই লাখ তাঁত শ্রমিক জীবিকা নির্বাহ করছে। এর মধ্যে লক্ষাধিক শ্রমিক সরাসরি তাঁত বুনোন করছে। বাকিরা সুতা রঙ, ডিজাইন তৈরি, সুতা পারি, চরকায় সুতা কাটা, সানা বয়া তৈরি, কাপড় ভাঁজ, লেবেলিং, মোড়কজাতকরণ, হাটবাজারে কাপড় পৌঁছে দেয়া, কাপড় বিক্রিসহসহ নানা কাজে অতি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ঈদ উপলক্ষে এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে  তাঁতপল্লীর আড়াই লাখ নারী পুরুষ মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। নাওয়া খাওয়ার সময় যেন এদের হাতে এখন নেই। গভীর রাত জেগে এরা কাজ করছে। এ কাজে বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও সহযোগিতা করছে। ফলে ছোট বড় সবাই এখন তাঁতের কাজে ব্যস্ত।

তাঁত শ্রমিক সুজন সরকার ও মো. রহিম শেখ জানান, পরিশ্রম অনুযায়ী তারা মজুরি পাচ্ছেন না। তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে সপ্তাহে ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান। বাজারে কাপড়ের দাম বাড়লেও তাদের মজুরি বাড়েনি। আগের তুলনায় কাপড় তৈরিতে সময় এবং পরিশ্রম বেশি হলেও মালিক নামমাত্র মজুরি বাড়িয়েছেন। ঈদকে সামনে রেখে পরিবারের চাহিদা মেটাতে বাড়তি রোজগারের আশায় তারা রাতদিন কাজ করছেন বলে জানান।

তাঁতীরা জানান, এ বছর তাঁতের কাজ অনেকাংশে কমে গেছে। এ শিল্পের কাঁচা মালের দাম বাড়ায় অর্থের যোগান দিতে না পেরে অনেক তাঁত মালিকের তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে তাঁত মালিকদের লোকসানের পাশাপাশি তাঁত শ্রমিকদের উপার্জন কমে গেছে। ফলে এবারের ঈদ উৎসব উদযাপনে বর্ধিত চাহিদানুযায়ী অর্থের যোগান দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে তাদের মধ্যে সংশয় আছে। তবে তারা সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করছেন বলে জানান।

(ঢাকাটাইমস/২০মে/জেবি)