বঙ্গবন্ধুর অজানা কথা

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু
| আপডেট : ২১ মে ২০১৯, ১১:১৯ | প্রকাশিত : ২০ মে ২০১৯, ২০:১৭
পেছনে কালো চশমা পরা লেখকের বাবা

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ শূন্য ভূমিতে পা রাখেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। শূন্য থেকে বিত্ত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের চারিদিকে তখন শুধু হাহাকার আর যুদ্ধবিধ্বস্ত ধ্বংসের নিদর্শন। যেদিকেই চোখ শুধু নাই নাই আর নাই। সবকিছুতেই বিশৃঙ্খলা-এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে বাঙালি জাতিকে রক্ষার করার লক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বিশ্বের দরবারে সাহায্যের হাত বাড়াতে বাধ্য হন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাংলাদেশের বন্ধু দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসতে থাকে সাহায্য। অন্যদিকে সৌদি আরবসহ মধ্যেপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ, আমেরিকা ও চীন মুখ ফিরিয়ে নেয়- তবে জাতির এতই দুর্ভাগ্য যে বিদেশ থেকে আসা এই সাহায্যের অনেকাংশ গরিবের ঘরে না গিয়ে উঠে আওয়ামী লীগ নামধারী কিছুসংখ্যক সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাবাদীর হাতে। বৈদেশিক সাহায্য দেশের ক্ষুধার্ত মানুষের হাতে না পৌঁছে ক্ষমতাসীন দুর্নীতিবাজরা তা কালোবাজারে বিক্রয় করে দেয়- দুর্নীতিপরায়ন এসব ব্যক্তি বিদেশি সাহায্য বিক্রয় করে রাতারাতি বনে যায় বিত্তশালী। তাই একদিন রাগে দুঃখে কষ্টে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমার কম্বল আমি পাইনি। কোথায় গেল আমার কম্বল? আমি এত কষ্ট করে বিদেশ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য ভিক্ষা করে সাহায্য নিয়ে আসি আর সেই সাহায্য চোরেরা সব চুরি করে নিয়ে যায়।

এই চোরেরা অন্য কেউ ছিল না, ছিল আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজ ও সুবিধাবাদী ব্যক্তি। দেশের এমনি এক দূরবস্থায় একদিন তৃণমূল থেকে একজন আওয়ামী লীগ নেতা ঢাকায় গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে এলে বঙ্গবন্ধু তাকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য তার রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদকে (তোফায়েল ভাই) নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরবর্তী সময়ে সেই তৃণমূলের নেতার কাছে আর্থিক সাহায্য পাঠানো হয়। কয়েক মাস পরে সেই নেতা বঙ্গবন্ধুর কাছে পুনরায় দেখা করে সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে এলে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ নেতাকে তার পাঠানো অর্থ পেয়েছেন কি না জিজ্ঞাসা করেন। তিনি উত্তরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং পাওয়া অর্থের অংকের কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু তা শুনে রেগে গিয়ে চিৎকার করে তোফায়েল আহমেদকে ডাকলেন। নেতার ডাক শুনে দৌড়ে কাছে এলেন তোফায়েল আহমেদ। বঙ্গবন্ধু তখন বললেন, গণভবন থেকে তৃণমূলে যেতে যদি অর্থের অংকের পরিমাণ এভাবে উধাও হয়ে যায় তাহলে দেশের অন্য জায়গার অবস্থাটা কী হতে পারে? এভাবে দেশ চলবে কী করে? কার এতবড় সাহস হলো এখান থেকে অর্থ মেরে খাওয়ার?

জানি না পরবর্তী সময়ে আসল চোর ধরা পড়েছিল কি না! তবে আজ দীর্ঘ বছর পর জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তখন নেত্রীর কণ্ঠেও শুনি একই আওয়াজ- সরকারি কর্মচারীদের এতো বেতন বাড়ানো হলো তবুও তারা কেন ঘুষ খায়? ঘুষের বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রী কণ্ঠেও একই সুর- ‘এভাবে বাংলাদেশ আর কতদিন চলবে?’

জনগণের দাবি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে যেমন আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা কিছুসংখ্যক দুর্নীতিবাজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল ঠিক আজ তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের রোলমডেল সফলের পথে এসব সুবিধাবাদী দুর্নীতিবাজ বাধার সৃষ্টি করছে। দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার আর সন্ত্রাসী কার্যকলাপে এখন সক্রিয়।

আমার এখনো মনে পড়ে ওইসময় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন মনিরুল হক চৌধুরী ও সাধারণ শফিউল আলম প্রধান। তাদের নেতৃত্বে ঢাকার রমনার বটমূলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত এক সভায় আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজদের একটি নামের তালিকা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধুকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সামরিক বাহিনীকে মাঠে নামালে দুর্নীতিবাজরা পালিয়ে রাজধানী ঢাকায় এসে আশ্রয় নেয়।

আজকের ছাত্রলীগের কাছ থেকে কি আমরা এধরনের একটা কিছু একটা আশা করতে পারি না? বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যার পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগ কি পারে না দুর্নীতিবাজদের নাম তালিকা প্রকাশ করতে? দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে ছাত্রলীগ কি পারে না দাঁড়াতে? আমার বাবা আলী মেহেদী খান যেমন জাতির জনককে নিজের মন থেকে আপন করে নিয়েছিলেন ঠিক তেমনি বাবাকে আপন করে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। গণভবন থেকে কিংবা কথাও বের হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বলতেন, মেহেদী সাহেবের নামাজ পড়া হয়েছে নাকি? বঙ্গবন্ধু ভালো করেই জানতেন যে বাবা কোনো সময় নামাজ কাজা করতেন না এবং সময় হাতে পেলেই ওজিফা পড়তেন। সম্ভবত ধর্মের প্রতি দুর্বলতার জন্যই বাবাকে নেতা দেখতেন একটু অন্যরকম।

একদিনের ঘটনা। জাতির জনকের পিতা ও মাতা কিছু দিনের ব্যবধানে ইন্তেকাল করেন। পিতা মাতা দুজনের স্বল্প সময়ের মধ্যে ইন্তেকালে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত ভেঙে পড়েন। মৃত্যু সংবাদ শুনে বঙ্গবন্ধুর নিকটতম আত্মীয় স্বজনে ঘর ভরে যায়। এইসময় বাবা যখন অন্দর মহলে প্রবেশ করছিলেন তখন ভেতর থেকে পরিবারের একজন বলে উঠলেন, ঘরের ভেতরে আবার সিকিউরিটি অফিসার আসবে কেন? বঙ্গবন্ধুর কানে একথা গেলে তিনি তৎক্ষণাত উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, ‘উনি শুধু সিকিউরিটি অফিসারই নন, উনি ভেতরে যাবেন, উনাকে ভেতরে আসতে দেও।’ অন্দর মহলে প্রবেশ করে বাবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বঙ্গবন্ধুর পিতার দেহের পাশে বসে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করেন। অবশেষে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক কবরস্থানে সমাধি করার কাজটা বাবা নিজের হাতে সম্পন্ন করেছিলেন।

একজন সাধারণ পুলিশ অফিসার হওয়া সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার আর ভালোবাসা বাবাকে ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সাথে একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে। বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সবসময় এই মহান নেতার জন্য আল্লাহর দরবারে দওয়া করেছেন আর ভোট দিয়েছেন নৌকায়। আমার বাবা ২০০২ সালে ইন্তেকাল করেন।

লেখক : সুইডিশ লেফট পার্টি (ভেনস্টার পার্টি) সেন্ট্রাল কমিটির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :