‘যাত্রীদের অসততার’ অজুহাতে ভাড়া বাড়াল বিআরটিসি

প্রকাশ | ২১ মে ২০১৯, ০৯:২৫

কাজী রফিক

সেবা চালু হওয়ার সময় ঘোষণা ছিল সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ১০ টাকা। কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই তা হয়ে গেল দ্বিগুণ। বাসে উঠলেই এখন দিতে হবে ২০ টাকা। যাত্রীরা প্রশ্ন তুলছেন, রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা কীভাবে এই কাজ করতে পারে।

তবে বাসের কর্মীরা দুষছেন যাত্রীদের একাংশের অসততাকে। তাদের দাবি, ১০ টাকার টিকিট কেটে বেশি দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার প্রবণতার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ২৬ মার্চ ধানমন্ডি থেকে কাঁটাবন-নিউমার্কেট-আজিমপুর রুটে চালু হয় বিআরটিসির চক্রাকার বাস। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসগুলোতে সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করা হয় ১০ টাকা। ২০ ও ৩০ টাকার আরো দুটি টিকিট রাখার কথা জানানো হয়।

বাসগুলো আজিমপুর-নিউমার্কেট-সায়েন্সল্যাব-ধানমন্ডি-২ নম্বর রোড-সাত মসজিদ রোড-ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোড-সোবহানবাগ-রাসেল স্কয়ার-কলাবাগান-৬ নম্বর রোড মোড়-৩ নম্বর রোড-সায়েন্সল্যাব-নিউ মার্কেট-আজিমপুর-পলাশী-নীলক্ষেত-কাঁটাবন-বাটা ক্রসিং-সায়েন্স ল্যাব-২ নম্বর রোড হয়ে সাত মসজিদ রোডে চলাচল করে।

তবে এখন কাউন্টারগুলোতে সর্বনিম্ন টিকিট রাখা আছে ২০ টাকার। সঙ্গে আছে ৩০ টাকার। বাসের কর্মীরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ যাত্রীদের অসততা। বহু যাত্রী ১০ টাকার টিকিট কেটে ২০ টাকা বা ৩০ টাকার গন্তব্য পাড়ি দিয়েছে। সব যাত্রীকে তল্লাশি করা সম্ভব নয়।

তবে এই সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে বিআরটিসি কোনো গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি। কেবল বাসে একটি বিজ্ঞপ্তি এঁটে দেওয়া হয়েছে। এমনকি টিকিট কাউন্টারের কর্মীরাও এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেন না।

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই বেআইনি হয়েছে। তারা এভাবে ভাড়া বাড়াতে পারে না।’

বাসে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয় বলেও অভিযোগ মিলেছে। লোকমান হোসেন নামে একজন বলেন, ‘বাসের ভেতরে দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকে না। তারপরেও যাত্রী তুলছে। আবার তার ওপর ১০ টাকার ভাড়া করেছে ২০ টাকা।’

মোহাম্মদপুর থেকে চক্রাকারে ঘুরে আজিমপুরের পলাশী রুটে বাস চলে ১৯টি। যাত্রী ওঠানামার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ছয়টি কাউন্টার। অভিযোগ আছে, বাসে দাঁড়িয়ে থাকার জায়গা না থাকার পরেও কাউন্টারের দায়িত্বরত কর্মীরা যাত্রীদের বাসে উঠতে চাপ দেন।

শহিদুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘বাসে বসা তো অনেক পরের বিষয়, দাঁড়ানোর কোনো জায়গা নেই। ড্রাইভার বলছে, আর কেউকে তুইলেন না, দরজা বন্ধ করা যাচ্ছে না। তারপরেও কাউন্টারের লোক বাসে যাত্রী উঠাচ্ছে। এসি বাসে মানুষ ঘেমে যাচ্ছে। এমন বাজে সার্ভিসের পরেও ভাড়া বাড়াল। এটা ঠিক না।’

এই বাস সেবাটি নিয়ন্ত্রণ করা হয় বিআরটিসির কমলাপুর ডিপো থেকে। ডিপো ম্যানেজার নায়েব আলীর কাছে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এখানে বেআইনি কিছু হয়নি।

কেন সেবা চালুর এক মাস যেতে না যেতেই সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়াতে হলো- এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা দায়ী করেন, যাত্রীদের একাংশের অসততাকে। তিনি বলেন, ‘অনেকেই ১০ টাকার টিকিট কেটে বাসে উঠে ৩০ টাকার পথ যেত। এতে প্রচুর লোকসান হয়। আবার অনেকেই ৫-৭ জন একত্রে টিকিট না নিয়ে উঠে যায়। এসব কারণে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা ১০ টাকার টিকিটটা বাদ দিয়েছি।’

‘এক লিটার ডিজেলে ঢাকার বাহিরে গাড়ি চলে তিন কিলোমিটার। ঢাকার ভেতরে চলে মাত্র এক কিলোমিটার। খরচ পোষাতে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। কারণ এখান থেকে কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়।’