নাগরিক সেবা নিশ্চিতে মেয়রের প্রস্তাব

সমন্বয়হীনতা দূর করে আলোচনা শুরু হোক

আরিফুর রহমান
 | প্রকাশিত : ২১ মে ২০১৯, ১৫:০৫

ঢাকার জনসংখ্যা এখন প্রায় দেড় কোটি। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, শিক্ষা, ব্যবসাসহ প্রায় সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু বলে এই রাজধানী শহরে ছুটে আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। ফলে দেশের অন্য যেকোনো শহরের তুলনায় এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি।

এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে শতভাগ না হলেও নাগরিক সেবাদানের প্রতিষ্ঠান ও সুযোগ-সুবিধা যে বাড়ছে না তা নয়। কিন্তু নানাভাবে এই প্রবৃদ্ধির ফলে সমন্বয়ের অভাব তৈরি হচ্ছে। আর তাতে সৃষ্টি হচ্ছে নাগরিক দুর্ভোগ। সেবাবঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসী।

আমরা প্রায়ই দেখি আজ বিদ্যু’ বিভাগের কাজ শেষ হয়েছে তো সেখানে কাজ শুরু করে ওয়াসা। সেটি শেষ না হতেই সিটি করপোরেশনের লোকজকে দেখা যায় কাজ করতে। বছরভর এভাবেই চলছে। বছরের পর বছর। আজ এই স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও রাজধানীতে স্থায়ীভাবে সম্পন্ন ও নির্বিঘœ কোনো পথঘাটের দেখা মেলেনি। সাম্প্রদিক সময়ে অবশ্য রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় সড়ক-ফুটপাত স্থায়ী রূপ দেওয়ার কাজ চলছে। কিন্তু তাও চলছে দীর্ঘদিন ধরে। শেষ হওয়ার লক্ষণ নেই।

নানা সময়ে বিশেষজ্ঞ মতামতে উটে এসেছে, সমন্বয়হীনতা অনেক বড় মাপের প্রতিবন্ধকতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে। নগর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যাবে।

এসব কারণে রাজধানী ঢাকার নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া সংস্থাগুলোকে দুই ভাগে বিভক্ত করার প্রস্তাব জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। সিটি করপোরেশনকে যেভাবে উত্তর ও দক্ষিণ অংশে বিভক্ত করা হয়েছে তেমনি সেবা সংস্থাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব দেন তিনি।

রাজধানী ঢাকার আকার অনেক বড় হয়েছে। দিন দিন বড় হচ্ছে। তাই সিটি করপোরেশনকে ভাগ করা হয়েছে দুই ভাগে। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত খুবই সুদূরপ্রসারী ছিল বলে এখন প্রতীয়মান হচ্ছে। এই অভিজ্ঞতার আলোকে সেবাদানকারী অন্য সংস্থাগুলোকেও দুই ভাগে ভাগ করা সদরকার বলে মনে করছেন ডিএসসিসির মেয়র। এতে নাগরিকদের কাক্সিক্ষত সেবা আরও দ্রুততম সময়ে তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যাবে।

রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা যথাযথভাবে রক্ষার জন্য নগর পুলিশের প্রস্তাব দিয়ে আসছে সিটি করপোরেশনগুলো। এমনকি সেবা সংস্থাগুলোকে সিটি করপোরেশনের অধীন করার প্রস্তাবও রয়েছে।

আমরা মনে করি, এসব নিয়ে আলোচনার সময় এসেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন ধারণা ও পদ্ধতি কাজে লাগাতে হয়। সব সময় যে তা ফলপ্রসূ হয় তা নয়। সে জন্য দরকার বিশেষজ্ঞ মত। দেশে এ ধরনের কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে তার ফলাফল বিশ্লেষণ, অন্য দেশের অভিজ্ঞতা কী তার খোঁজ নেওয়া যেতে পারে।

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ কিংবা কেন্দ্রীকরণ দুই ক্ষেত্রেই ভালোমন্দ আছে। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে সেবা সংস্থাগুলো দুই ভাগ করা হলে তা কতটুকু কাজে দেবে; পরিচালনা, জবাবদিহি, দায়দায়িত্বের মতো বিষয়গুলো কীভাবে বিন্যস্ত হবে, এসব করতে গিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে কি না- এসব নিয়ে আলোচনা, মতামত এখন শুরু করা উচিত।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে মধ্যম আয়ের দেশের দিকে। সব ধরনের সূচকে ইতিবাচক ধারা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। বিশে^র নজর এখন বাংলাদেশের দিকে। বিদেশি বিনোগকারীরা আসছে দলে দলে। আসছে পর্যটকরা। দেশের মানুষের গড় আয় বাড়ছে। জীবনযাত্রা উন্নত হচ্ছে। সেখানে নাগরিক সেবার দৈন্যদশা কাম্য হতে পারে না।

আমরা মনে করি, নাগিরক সেবা ও উন্নয়নে সরকার টাকার জোগান কম দিচ্ছে না। কিন্তু তার ব্যবহার হচ্ছে যথেচ্ছাচারে। সঠিক উপায় ও পদ্ধতি আর সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করলে নাগরিক সেবা অনেকটাই নিশ্চিত হবে বলে আমরা মনে করি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজপাট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা