আসবাব কেনায় অস্বাভাবিক খরচ

রূপপুর প্রকল্প যেন বিতর্কে না পড়ে

আরিফুর রহমান
 | প্রকাশিত : ২১ মে ২০১৯, ১৫:২০

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনের আসবাবপত্র ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনায় অস্বাভাবিক খরচের অভিযোগ উঠেছে। একটি বালিশ কিনতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে এর দাম বাবদ ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। সেই বালিশ নিচ থেকে ফ্ল্যাটে ওঠাতে খরচ ৭৬০ টাকা। শুধু আসবাবপত্র কেনা ও সেগুলো তুলতে ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ২৯২ টাকা।

সরকারি অর্থের এমন হরিলুটের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি। কী করে এমন অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিলটি অনুমোদন দেওয়া হলো তাও খতিয়ে দেখতে হবে। সরকার যেখানে সব জায়গায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বদ্ধপরিকর, সেখানে এ ধরনের ঘটনা বিব্রতকর ও অনভিপ্রেত। সরকারি অর্থের এমন অপচয় মেনে নেওয়ার মতো নয়।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এই অস্বাভাবিক খরচের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুটি আলাদা কমিটি গঠন করেছে। এটি প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, গণমাধ্যমে আসার আগে বিষয়টি কি কারো নজরেই আসেনি? এই বিল যাদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল তারা থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যারা বিলটি অনুমোদন দিয়েছেন, তাদের কাছে কি বিষয়টি একবারও অস্বাভাবিক মনে হয়নি? গণমাধ্যমে আসার পর কেন তাদের কাছে মনে হলো, বিষয়টি অস্বাভাবিক! তাহলে কি ধরে নেওয়া হবে, গণপূর্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ ওই বিভাগটি এভাবেই চলছে? কারোই কি কোনো জবাবদিহি থাকবে না? কেনাকাটায় স্বচ্ছতা থাকবে না?

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ প্রকল্পের প্রতিটি ব্যয়ের সুষ্ঠু আর্থিক নিরীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। শুধু প্রকল্পের কর্মকর্তাদের জন্য বানানো ভবনে যদি এমন আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য মেলে, তাহলে মূল প্রকল্পের অবস্থা নিয়ে শঙ্কা জাগাই স্বাভাবিক। গৃহায়ণ ও গণপূর্তের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয়। প্রায়ই নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ আমরা দেখতে পাই। এসব অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত কমিটি গঠন হয়। তদন্ত হয়। কিন্তু তদন্তে কী পাওয়া যায় বা গেল তা আর প্রকাশ্যে আসে না। কারা দোষী বা কারা নির্দোষ কিছুই জানা যায় না। এসব বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আরও দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ভবনের আসবাব ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনায় যে পুকুরচুরি অভিযোগ সামনে এসেছে, এর তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে বলে আমরা আশা করি। তা না হলে সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক বৃহৎ এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় নিয়ে যে অস্বচ্ছতার চিত্র প্রকাশ হয়েছে তা রয়েই যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজপাট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা