ভারতে এক্সিট পোল নিয়ে কেন এত অনাস্থা?

প্রকাশ | ২১ মে ২০১৯, ২০:৫৮

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

ভারতে সাধারণ নির্বাচনের এক্সিট পোল বা বুথফেরত জরিপের ফল নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আবারো চরমে উঠেছে। সে দেশে প্রায় প্রতিটি এক্সিট পোল নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি অনায়াসে জিতবে বলে পূর্বাভাস করার পর সব বিরোধী দলই একে মিথ্যা অপপ্রচার বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।

তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি টুইট করেছেন, এক্সিট পোলের 'গুজব' ছড়িয়ে আসলে ভোট গণনায় কারচুপিরই জমি তৈরি করা হচ্ছে।

কিন্তু ভারতের মতো এত বড় ও পুরনো গণতন্ত্রে কেন এক্সিট পোলের ওপর এই অনাস্থা?

আসলে বহু পশ্চিমা দেশেই যেটা জনমত যাচাইয়ের একটা স্বীকৃত পন্থা, সেই এক্সিট পোলের ওপর ভারতে যে নিশ্চিন্তে ভরসা করা যায় না তার অনেকগুলো কারণ আছে।

'ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ওপিনিয়ন' ভারতে প্রথম এক্সিট পোল করেছিল ৬০ বছরেরও বেশি আগে - ১৯৫৭ সালে দেশের দ্বিতীয় লোকসভা নির্বাচনের সময়।

তখন থেকে আজ অবধি এ দেশে এক্সিট পোলের রায় কখনো সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে, কখনো আবার তা সঠিক পূর্বাভাসও করেছে।  তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে এক্সিট পোলে বিরোধীরা যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তা প্রায় নজিরবিহীন।

কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ যেমন বলছেন, ‘এক্সিট পোলে যে পরিসংখ্যান এসেছে তা সম্পূর্ণ ভুল - আমরা কিছুতেই সেটা বিশ্বাস করতে পারছি না।’

‘এর আগেও আমরা বহুবার দেখেছি, বিজেপিকে যখনই জরিপে জিতিয়ে দেওয়া হয়েছে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।’

তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আরও এক ধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘এই এক্সিট পোলটা আসলে গুজব ছাড়া কিছুই নয় - আর এই গুজব ছড়িয়েই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে কারচুপির গেমপ্ল্যান বা ষড়যন্ত্র ছকা হচ্ছে।’

কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আবার মনে করছেন, এই এক্সিট পোলগুলো তাদের কর্মীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার কৌশল।

কর্মীদের উদ্দেশে এক অডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, এই সব এক্সিট পোলের পর তাদের আরও বেশি সাবধান হতে হবে, স্ট্রংরুম ও ভোট গণনাকেন্দ্রগুলোতে সারাক্ষণ সতর্ক নজর ও পাহারা রাখতে হবে।

এটা ঠিকই যে ২০০৪-য়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপি যে ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না, কোনও এক্সিট পোলই তার আভাস পায়নি।

২০০৯তে ইউপিএ যে ক্ষমতায় ফিরতে পারবে, সেটাও বলতে পারেনি কোনো পোল।

আবার ২০১৪তে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির জয়ের আন্দাজ মিলেছিল এক্সিট পোল থেকেই, যদিও জেতার বহরটা বেশির ভাগ জরিপই অনুমান করতে পারেনি।

কিন্তু কেন ভারতে এক্সিট পোল আজও পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়?

দেশের নামী সেফোলজিস্ট জয় ম্রুগ পাল্টা প্রশ্ন করছেন, ‘তার আগে বলুন জীবনে কতবার দেখেছেন আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পূর্ণ নির্ভুল ছিল?’

‘তাও তো আবহাওয়াবিদ্যায় যে পরিমাণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা, গাণিতিক মডেলিং বহু বছর ধরে হয়ে আসছে - তার ভগ্নাংশও কিন্তু ভোটের পূর্বাভাসে হয়নি।’

‘তার ওপর ভারতে ভোটারদের চরিত্র এত বৈচিত্র্যময় ... এবং সবচেয়ে বড় কথা এদেশে যে 'ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট' সিস্টেম চালু আছে তাতে কাজটা অনেক কঠিন হয়ে যায়।’

‘একটা নাম্বার গেম, তার সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা, পারিপার্শ্বিক জ্ঞান সব মিলিয়েই এটা করতে হয়, আর তাতে কিছু ভুলের সম্ভাবনা থেকেই যায়!", খোলাখুলি স্বীকার করে নিচ্ছেন তিনি।

কিন্তু এক্সিট পোলগুলো কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতপূর্ণ, এমনটা মনে করার কি কোনো কারণ আছে?

সেফোলজিস্ট থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া যোগেন্দ্র যাদব সে কথা মনে করেন না। তার মতে, ‘এক্সিট পোল নিয়ে ভারতের এত বছরের অভিজ্ঞতা এটাই বলে যে সচরাচর তারা ভোটের গতিপ্রকৃতির সঠিক দিশাটা দেখাতে পারে।’

‘সব পোল যদি বলে অমুক পার্টিই জিতবে, তাহলে দেখা যায় সেই পার্টিই কিন্তু জেতে - যদিও জয়ের বা পরাজয়ের মার্জিনটা এক্সিট পোল সব সময় ঠিক বলতে পারে না।’

‘কিন্তু একতরফা ভোট হলে বেশির ভাগ সময় জয়ী দলের জয়ের ব্যবধান এক্সিট পোলের পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি হয়ে থাকে।’

ফলে ভারতে বিশেষজ্ঞরা এ কথা মানতে নারাজ যে এ দেশের এক্সিট পোলের কোনো বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতা নেই।  যদিও এই মুহুর্তে অন্তত দেশের বিরোধী রাজনীতিবিদরা তাদের মতামতকে কোনো দাম দিচ্ছেন না - তারা অপেক্ষা করছেন ২৩ মে আসল ভোট গণনার দিন পর্যন্ত। -বিবিসি বাংলা

(ঢাকাটাইমস/২১মে/জেবি)