বদর: সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের দিন

মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন
 | প্রকাশিত : ২২ মে ২০১৯, ২১:৩৮

১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস। হিজরি দ্বিতীয় বর্ষের রমজান মাসের এই দিনে বদর প্রান্তরে ইসলামের প্রথম সম্মুখযুদ্ধে মহান রাব্বুল আলামিন সরাসরি সাহায্যদানের মাধ্যমে মুসলমানদের বিজয় দান করেন। তাই এ দিবসকে ইয়াওমুল ফুরকান বা সত্য-মিথ্যার পার্থক্যের দিন বলা হয়। সত্যপথের অনুসারী অল্পসংখ্যক রোজাদার মুসলমান বিশাল অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত মিথ্যার অনুসারী কাফের মুশরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করে সত্য মিথ্যার চির পার্থক্য সূচিত হয়ে যায়।

মুহাম্মদ সা. ও তাঁর অনুসারীরা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে মদিনায় শান্তিতে অবস্থান করবে, চতুর্দিকে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাবে, মুহাম্মদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে এটা কাফের কুরাইশ বাহিনী কখনোই চায়নি। কোনো মুসলমান পেলেই কোনো কারণ ছাড়াই শুধু ঈমান আনার অপরাধে তার ওপর অত্যাচারের খড়গ চালাতো। নির্মম নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে হত্যা করতে বিবেকে বিন্দুমাত্র নাড়া দিতো না। এদিকে কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ও তার বাহিনী সিরিয়া থেকে বিভিন্ন রসদ সামগ্রী নিয়ে মক্কায় ফিরছিলেন। মহানবী সা. তার সাহাবাদের কুরাইশদের গতিরোধ করার জন্য নির্দেশ দেন। মুসলমানরা বের হয়েছে এ সংবাদ মক্কায় পৌঁছার সাথে সাথে তারা রণশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মদিনায় আক্রমণ ও মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে বদর প্রান্তরে এসে জড়ো হয়। এদিকে আবু সুফিয়ান ও তার দল রাস্তা পরিবর্তন করে নিরাপদে পৌঁছে যায়। মহানবী সা.-এর সাথে জনবল ছিল মাত্র ৩১৩ জন। এদের ৭০ জন মুহাজির ও বাকিরা আনসার। অপরদিকে কাফের, কুরাইশ বাহিনীর সংখ্যা ছিল এক হাজার। এরধ্যে ১০০ জন অশ্বারোহী, ৭০০ জন উষ্ট্রারোহী ও বাকিরা পদব্রজী ছিল। মূলত মুসলমানদের যুদ্ধ উদ্দেশ্য ছিল না বরং কাফেরদের ব্যবসায়ী কাফেলাকে ধরা উদ্দেশ্য ছিল। রাসুল সা. যখন কাফেরদের বের হওয়ার কথা জানতে পারলেন তখন সাহাবাদের সংঘবদ্ধ করে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার সাথে ওয়াদা করেছেন দুটি দলের একটি হয়তো ব্যবসায়ী কাফেলা অথবা অন্যটি সৈন্যবাহিনী। সাহাবারা রাসুলুল্লাহ সা.-এর বিচলিত অবস্থা দেখে বললেন, হে রাসুল সা. আপনি আমাদেরকে ধৈর্যশীল, যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ় অবস্থানকারী, আনুগত্যশীল, সাহসী, অকুতোভয় ও নির্দেশ বাস্তবায়নে আপসহীন ও দ্রুতগামী পাবেন। নবী করিম সা. মুহাজির ও আনসারদের কথা শুনে খুশি হয়ে বললেন- তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। আমি আল্লাহ তায়ালার শপথ করে বলছি আমার এমন মনে হচ্ছে যে, আমি যেন মুশরিক জাতির হত্যাযজ্ঞ লক্ষ্য করছি। অতঃপর নবী করীম সা. সাহাবিদের নিয়ে বদর কূপের কাছে পৌঁছেন। কুরাইশরা অপর প্রান্তে অবস্থান করলো। রাতে আল্লাহ তায়ালা এমন বৃষ্টিবর্ষণ করেন যা কাফেরদের জন্য বিরাট বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তারা সামন অগ্রসর হতে পারেনি। অপরদিকে মুসলমানদের জন্য সুবিধা হয়। সম্মুখযুদ্ধ শুরু হলে রাসুলল্লাহ সা. আল্লাহর কাছে দু'হাত তুলে ফরিয়াদ করতে থাকেন। আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন।

যুদ্ধে কাফের কুরাইশ বাহিনী শোচনীয় পরাজয় বরণ করে এবং তারা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৭০ জন কাফের নিহত ও ৭০ জন বন্দী হয়। অপরদিকে মুসলমানদের মধ্য থেকে ১৪ জন শহীদ হন। বদরযুদ্ধের মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সুনিশ্চিত হয়েছে। এটি ছিল একটি অসম যুদ্ধ। যুদ্ধে অল্পসংখ্যক সৈন্যবাহিনী বেশিসংখ্যক সৈন্যবাহিনীর ওপর বিজয় অর্জন করেছিল।

লেখক : ধর্মীয় নিবন্ধকার

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :