গুগল অ্যাপগুলোর ওপর কতটা নির্ভরশীল আমরা?

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৯, ০৯:০৬

ঢাকা টাইমস ডেস্ক

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন কোম্পানি হুয়াওয়ে গুগলের কিছু সফটওয়্যার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরে বিপদে পড়েছে। গুগলের ভীষণ জনপ্রিয় ইউটিউব, গুগল ম্যাপ, জিমেইল এর মতো অ্যাপগুলোর ওপর মানুষ কতটা নির্ভরশীল, তার ওপর নির্ভর করছে এই চীনা কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে হুয়াওয়েকে এমন একটি তালিকায় রাখা হয়েছে যে তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো আমেরিকান কোম্পানি লাইসেন্স ছাড়া বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না।

গুগলের এ সিদ্ধান্তের ফলে হুয়াওয়ে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের কিছু আপডেট করতে পারবে না এবং কয়েকটি গুগল অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবে না। হুয়াওয়ে তরতর করে সামনে এগোচ্ছিল, সম্প্রতি স্মার্টফোন বিক্রিতে হুয়াওয়ে জনপ্রিয় মার্কিন প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকেও ছাড়িয়ে যায়।

মোবাইলে গুগল অ্যাপ ব্যবহার করতে না পারলে মানুষ কতটা গ্রহণ করবে ওই ফোন, বা আদৌ করবে কিনা এ নিয়ে ভাবছেন এই চীনা প্রতিষ্ঠানটি।

গুগল সার্চ

শুরুতে গুগল ছিল সার্চ ইঞ্জিন প্রোভাইডার। ইন্টারনেটে যে কোনো তথ্য খুঁজে পেতে সার্চ ইঞ্জিন প্রোভাইডারগুলোর মধ্যে এখনো গুগলই জনপ্রিয়তার শীর্ষে। পৃথিবীজুড়ে ৮৯ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেটে কিছু খুঁজতে হলে গুগলে খোঁজে।

গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বী সার্চ ইঞ্জিন, বাইদু, আসলে এর সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বীও নয়। ৮ শতাংশ লোক বাইদু ব্যবহার করে, যাদের বেশিরভাগই চীনে বাস করে। চীনে গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

চীনে হুয়াওয়ে ব্যবহারকারীদের ওপর গুগলের নিষেধাজ্ঞার তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না এটা যেমন সত্যি, তেমনি এটাও সত্যি যে পৃথিবীর বাকি সব দেশে, যেখানে গুগল ছাড়া মানুষ চলতেই পারে না, সেখানে এ নিষেধাজ্ঞার কারণে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বিক্রিতে বেশ ভাটা পড়বে।

ইউটিউব

২০০৬ সালে ইউটিউব কিনে নেয় গুগল। ইউটিউব এতটাই জনপ্রিয় যে এটি একটি নতুন পেশার সৃষ্টি করেছে। যার নাম ইউটিউবার।

আপনি যদি কম্পিউটারে গেইম খেলায় বেশ দক্ষ হন, কিংবা ভালো মেকআপ করতে পারেন অথবা অন্য কোনো কিছু শেখান— লাখ লাখ লোক আপনার ভিডিও দেখতে পারে, আপনার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে পারে আর রাতারাতি আপনি হয়ে যেতে পারেন কোটিপতি!

ফোর্বস ম্যাগাজিন এর প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর শীর্ষ ১০ ইউটিউবার মোট ১ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় করেছে। মানুষের খ্যাতি ও অর্থের বাসনাকে প্রভাবিত করে ভালোই কামিয়েছে ইউটিউব। তবে এই একটি ক্ষেত্রেই গুগলকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

মার্কেটিং কোম্পানি সেন্সর টাওয়ারের হিসাব মতে, ২০১৮ সালে যে অ্যাপগুলো সবচেয়ে বেশি ডাউন লোড করা হয়েছে তার মধ্যে তিন নম্বরে রয়েছে টিকটক। ২০১৬ সালে প্রথম এই অ্যাপ বাজারে আসে। অল্প দিনেই টিকটক নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটিতে পৌঁছেছে। বাইটড্যান্স নামের এক চীনা কোম্পানি প্রথমে ‘ডোয়িন’ নামে এ অ্যাপ চালু করে। এখনো চীনে এ অ্যাপ ডোয়িন নামেই পরিচিত।

এ অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি খুবই ছোট দৈর্ঘ্যের ভিডিও বানাতে পারবেন। ইউটিউব তো বটেই, এটি ইনস্টাগ্রামের জনপ্রিয়তাকে আরও বেশি হুমকির মুখে ফেলেছে। আবার এটিও প্রমাণ করেছে যে মানুষের রুচি কত দ্রুত বদলে যেতে পারে।

ইউটিউব এখন গুগলের বেশ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। প্রায় ১৮ কোটি লোক ইউটিউব ব্যবহার করে। তবে এ চিত্র পাল্টে যাওয়াও অসম্ভব কিছু না। নতুন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর আবির্ভাবের ফলে এই অ্যাপও হয়ত একদিন তার জনপ্রিয়তা হারাবে।

গুগল ম্যাপ

গুগল ম্যাপ খুবই জনপ্রিয় অ্যাপ। এর একটি বড় কারণ এর কোনো ভালো বিকল্প না থাকা। ২০১২ সালে অ্যাপল তাদের নিজস্ব ম্যাপ তৈরি করেছিল বটে, তবে সেটি বিস্তারিত তথ্যের অভাব ও ভুলভাল দিকনির্দেশনার কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

ম্যাপ নিয়ে সমস্যা এতই প্রকট হয় যে, অ্যাপল তাদের ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তাদের ম্যাপ ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করে। এক জরিপে জানা গেছে, ৬৯ শতাংশ আইফোন ব্যবহারকারী অ্যাপলের ওই অ্যাপের চেয়ে গুগল ম্যাপ বেশি পছন্দ করে।

তবে সার্চ ইঞ্জিনের মতই, চীনে গুগল ম্যাপের তেমন জনপ্রিয়তা নেই। চীনে বাইদুর ম্যাপিং সফটওয়্যারই বেশি জনপ্রিয়। বাইদুর নতুন ভয়েস অ্যাক্টিভেটেড ম্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ কোটি। তারা চীনের বাইরেও তাদের জনপ্রিয়তা তৈরি করতে চায়। তারা হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধ গুগল অ্যাপগুলোর বিকল্প হিসেবে তাদের অ্যাপগুলো ব্যবহারের প্রস্তাব দিতে পারে।

নতুন সফটওয়্যার আসার সম্ভাবনা

এতদিন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাছে দুইটি প্ল্যাটফর্ম ছিল। আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য আইওএস আর অন্য ডিভাইসগুলোতে অ্যানড্রয়েড ব্যবহার করা হত। হুয়াওয়ের ওপর গুগলের এই নিষেধাজ্ঞার পরে হয়ত তৃতীয় কোনো অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আসতে পারে।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই বলেন, ‘আমেরিকান প্রশাসন আমাদের শক্তিকে খাটো করে দেখছে। আমরা আমেরিকান সফটওয়্যার ছাড়াই চলতে পারি।’

হুয়াওয়ে আমেরিকার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরেমি থম্পসন বলেন, ‘আমরা নতুন পরিকল্পনা করছি। তবে সেটা কী হবে তা এখনই বলা যাবে না। আমরা নতুন বিকল্প তৈরির চেষ্টা করছি। যেটা আমাদের ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হবে।’

হুয়াওয়ে নতুন বিকল্প তৈরি করা মানে অ্যাপল ও অ্যানড্রয়েডের বাইরে আরো কিছু প্ল্যাটফর্ম তৈরি হওয়া। তবে এই প্রতিযোগিতায় কে জিতবে তা বলা মুশকিল। এই চীনা কোম্পানি হয়ত তাদের নিজের দেশের বাজার ও সরকারের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করবে।

আরেক আমেরিকান জায়ান্ট টেক কোম্পানি মাইক্রোসফট একসময় আমেরিকার মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেমের ৪২ শতাংশ দখল করেছিল। শেষ পর্যন্ত তারা বাজারে টিকতে পারেনি। একসময়ের জনপ্রিয় মোবাইল নির্মাতা কোম্পানি নোকিয়া কিনে তারা তাদের মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল যা পরে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।

ঢাকা টাইমস/২৩মে/একে