৫৯ এলাকায় ওয়াসার পানিতে দূষণ বেশি যেসব কারণে

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৯, ০৯:১৬ | আপডেট: ২৩ মে ২০১৯, ১২:৪০

কাজী রফিক
ফাইল ছবি

রাজধানীর ৫৯টি এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানি বেশি দূষিত- এটা খোদ সংস্থাটির তথ্য। তবে কী কারণে এসব এলাকার নাগরিকরা বেশি দুর্ভোগে? অনুসন্ধান বলছে, কোনো একক কারণ নেই। ওয়াসা ছাড়াও অন্য সেবা সংস্থার কাজ, বাড়ি মালিকদের অসচেতনা এমনকি যে নাগরিক ভুক্তভোগী, তিনিও দায়ী এর পেছনে।

সড়কের উন্নয়ন কাজ করতে সিটি করপোরেশন কর্মীরা তাদের থাকার জন্য ঘর নির্মাণ করেন। এসব ঘরে তাদের পানির ব্যবস্থা করতে সড়ক খুঁড়ে ওয়াসার পাইপ বের করে নেন কর্মীরা। কাজ শেষে এসব পাইপ মেরামত না করেই রেখে যান তারা। ফলে দূষিত হচ্ছে লাইনের পানি।

ওয়াসার প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক শহিদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অনেক সময় কাজ করতে গিয়ে পাইপ ফেটে যায়। কিন্তু সিটি করপোরেশন কর্মীরা তাদের পদস্থ কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান না। ফলে পাইপগুলো ফাটাই থাকে আর সেখান দিয়ে নোংরা আবর্জনা ঢুকে পড়ছে। আর জনগণ ময়লাযুক্ত পানি পাচ্ছে।

পানি দূষণের অন্যতম কারণ ‘লতা পাইপ’কে। বিভিন্ন জলাশয়ে ওয়াশার পাম্প থেকে চিকন প্লাস্টিকের পাইপে বাসায় পানি নেওয়া হয়। আর এসব পাইপ প্রায়ই মাটির নিচেও থাকে না। মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদিয়া হাউজিং, আলী অ্যান্ড নুর রিয়েল এস্টেট, চান মিয়া, সাত মসজিদ হাউজিং, আদাবর মিরপুরের কাজীপাড়া খালপার, সাংবাদিক কলোনি খালপারসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাশয়ের পাশে এসব পাইপ চোখে পড়ে। প্রায়ই এগুলো ফেটে যায় আর খালের নোংরা পানি ঢুকে পড়ে বাসায়।

এলাকার বাসিন্দারা বিশেষ করে রাস্তার পাশের দোকানিরা প্রায়ই এসব পাইপ কেটে সেখান থেকে পানি নিয়ে যায়। আর নিজেদের সামান্য লাভের লোভে ভুগছে এলাকার মানুষ।

মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খালে দিয়ে দেখা যায়, খালের দুই পারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিপুল পরিমাণ পাইপ। যার এক মাথা ওয়াসার লাইনের সাথে, আর অপর মাথা ঢুকেছে বসতবাড়িগুলোতে। খালে বিভিন্ন সময়ে আঘাত লেগে পাইপ ফেটেছে এমন চিত্রও চোখে পরে। আর সেই ফাটা অংশ কোনো ভাবে জোড়া দেয়া হয়েছে।

কোথাও কোথাও খাল সংলগ্ন চায়ের দোকানগুলোতে পানি নেয়া হচ্ছে পাইপে জোড়া অংশ খুলে। খালের পারের দিকে থাকা এসব ফাঁটা অংশ খালের পানি বাড়লে নোংরা পানিতে ডুবে যায়। আর তখনি খালের নোংরা পানি পাইপ দিয়ে যাচ্ছে এলাকাবাসীর বাসাবাড়িতে।

গত ১৬ মে আদালতে জমা দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয় ওয়াসার ১০টি জোনের ৫৯টি এলাকার পানি দূষিত। এর মধ্যে এক নম্বর জোনের যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, মুগদা, রাজারবাগ, কুসুমবাগ, জুরাইন, মানিকনগর, মান্ডা, ধোলাইরপার ও মাতুয়াইল। দুই নম্বর জোনের বাঘলপুর, লালবাগ, বকশীবাজার ও শহীদনগর। তিন নম্বর জোনে জিগাতলা, ধানমন্ডি, শুক্রাবাদ, কলাবাগান, ভূতেরগলি ও মোহাম্মদপুর। চার নম্বর জোনের শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ, মনিপুর, পাইকপাড়া, কাজীপাড়া ও মিরপুর। পাঁচ নম্বর জোনের মহাখালী ও তেজগাঁও।

ছয় নম্বর জোনে সিদ্ধেশ্বরী, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, মগবাজার, নয়াটোলা, রামপুরা, মালিবাগ ও পরীবাগ। সাত নম্বর জোনে কদমতলী, দনিয়া, শ্যামপুর, রসুলবাগ মেরাজনগর, পাটেরবাগ, শনির আখড়া, কোনাপাড়া ও মুসলিমনগর। আট নম্বর জোনে বাড্ডা, আফতাবনগর, বসুন্ধরা ও ভাটারা। নয় নম্বর জোনে উত্তরা, খিলক্ষেত, সায়েদাবাদ, মোল্লারটেক ও রানাগোলা। দশ নম্বর জোনে কাফরুল, কাজীপাড়া, মিরপুর, কচুক্ষেত ও পল্লবী পানি দূষিত এমন প্রতিবেদন দেয় ওয়াসা।

ওয়াসার প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক শহিদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে জানান, যে সকল এলাকার কথা বলা হয়েছে সেসব এলাকার সম্পূর্ণ লাইনে সমস্যা নেই। আংশিক অংশে সমস্যা রয়েছে। কোনো কোনো এলাকার একটি মাত্র গলির লাইনে সমস্যা।

জুরাইন এলাকার পানির অবস্থা

গত ২৪ এপ্রিল ওয়াসার পানি পরিষ্কারের জন্য এক অভিনব প্রতিবাদ জানায় রাজধানীর জুরাইন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। জুরাইনবাসীর পক্ষে মিজানুর রহমান এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। প্রতিবাদ স্বরূপ ওয়াসার পরিচালক তাসকিম এ খানকে ওয়াসার পানি দিয়ে শরবত খাওয়াতে যান তারা। যদিও ওয়াসা পরিচালক তা খাননি।

ঘটনার প্রায় এক মাস পরেও বদলায়নি জুরাইন এলাকার পানির চিত্র। স্থানীয়রা বলছেন, প্রায় পাঁচ শতাংশ এলাকার পানির উন্নতি হয়েছে। কিন্তু ৯০ শতাংশের বেশি এলাকার পানির অবস্থা আগের মতোই। আবার কোথাও কোথাও আগের তুলনায় খারাপ।

মিজানুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ঘটনার পর দৃশ্যমান কাজের মধ্যে একটি পাম্প ঠিক করেছে ওয়াসা। তবে এলাকায় পরিষ্কার পানি পাওয়া যাচ্ছে, ওই পানির বিষয়েও আমাদের সন্দেহ আছে। কোনো বিশ্বস্ত পরীক্ষাগারে পরীক্ষা না করে আমরা এই পানিকে নিরাপদ হিসেবে মানতে পারছি না।’

এই এলাকার পানির সমস্যার কথা স্বীকার করেছে ওয়াসাও। প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, তারা সংকট সমাধানে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, ‘জুরাইন এলাকার পানির লাইন ৪০ থেকে ৫০ বছরের পুরোনো। নানা উন্নয়নের কাজের সঙ্গে সঙ্গে এই এলাকার পানির লাইন মাটির প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট নিচে চলে গেছে। এই পাইপ লাইনকে মাটির পাঁচ ফুটের মধ্যে নিয়ে আসতে কাজ করছি আমরা। এতে করে এই এলাকার পানির সমস্যা সমাধান সম্ভব।’