মহাসড়কের কাজে ধীরগতি, ধুলো-কাদায় নাকাল ঘাটাইলবাসী

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৯, ১০:১০

রেজাউল করিম খান রাজু, ঘাটাইল প্রতিবেদক

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ ধীরগতিতে চলছে। এর ফলে ধুলো আর কাদায় নাকাল হতে হচ্ছে ঘাটাইলের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে। বিপাকে পড়তে হচ্ছে সড়কটি দিয়ে চলাচল করা বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের।

টাঙ্গাইল-জামালপুর মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে জামালপুর সদর হয়ে সরিষাবাড়ি পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। ঘাটাইল উপজেলা সদরের পৌর এলাকার হাসপাতাল মোড় থেকে বীর ঘাটাইল পর্যন্ত অংশের এক কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ চলছে ঢালাইয়ের মাধ্যমে। এ কাজের ধীরগতির কারণে প্রতিদিন দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের কারণে এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে প্রতিটি যানের সময় লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। এছাড়া ধুলো ও বৃষ্টির সময় জমে থাকা কাদার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী, পথচারী, স্কুল-কলেজ পড়য়া শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে।

সামান্য বৃষ্টিতে কাদার সৃষ্টি হলে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে সড়কটি। সড়কের এক পাশ যান চলাচলের উপযোগী না করেই অপর অংশের কাজ শুরু করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

মহাসড়কটির পাশেই উপজেলা প্রশাসন, ঘাটাইল সেনানিবাস, পৌর প্রশাসন, একটি সরকারি কলেজ, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি বালিকা বিদ্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ১৫টি কিন্ডারগার্টেন, ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অবস্থিত। এছাড়া ২০টি রোডের যানবাহন ঘাটাইল হয়ে চলাচল করে। উন্নয়ন কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় সড়কটি দিয়ে চলাচল করা মানুষের ভোগান্তির সীমা নেই।

এই ভোগান্তি শুধু পৌর এলাকারই নয়, ভোগান্তি আছে উপজেলার হামিদপুর থেকে দেউলাবাড়ি পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার মহাসড়কের আশপাশের ব্যাবসায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, যানবাহনের যাত্রী, পথচারী, হাটবাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সাধারণ মানুষের।

ঘাটাইল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মোমেন বলেন, ‘মহাসড়ক ঘেঁষে আমাদের বিদ্যালয়টির অবস্থান। ধুলোবালি, কাদা ও যানজট মারিয়েই শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে।এজন্য মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ দ্রুত করার দাবি জানান তিনি।

কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, যানজট, ধুলোবালি ও কাদার কারণে এখন ব্যবসা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টারের পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তিন মাসে দুই শ গজ কাজও শেষ হয়নি। কাজ কবে শেষ হবে আর কবে যে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে তা আল্লাহই ভালো জানেন।

জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে উপজেলা আইনশৃঙ্গলা কমিটির সভায় সড়কের উন্নয়ন কাজের ধীরগতি এবং ধুলো-কাদা ও যানজট নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় বক্তারা দ্রুতগতিতে কাজের সমাপ্তি এবং জনসাধারণের ভোগান্তি দূরীকরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জনভোগান্তি দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন।

ঘাটাইল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, কাজের ধীরগতির কারণে সড়কের পাশের ব্যবসায়ীরা চরম বেকায়দায় রয়েছে। ধুলা ও কাদার কারণে তারা ঠিকমত ব্যবসা করতে পারছেন না। সড়কের একপাশ চলাচলের উপযোগী না করে সড়কের কাজ শুরু করায় এই ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিমুল এহসান বলেন, কাজের গতি বাড়াতে মহাসড়কের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাকশনকে তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ওয়াহিদ কন্সট্রাকশনের স্থানীয় পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা  কথা বলতে রাজি হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ২১তম সভায় টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা-জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮৯ দশমিক ৮২ কোটি টাকা। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ ২০২০ সাল নাগাদ প্রায় ৭৭ দশমিক ৬০ কিলোমিটার মহাসড়কটি চার লেনে পরিণত করবে।

ঢাকাটাইমস/২৩মে/প্রতিনিধি/এমআর