৩৫ কোটি অবৈধ টাকা

এমডির ‘দোষ’ লুকাচ্ছে এনসিসি ব্যাংক

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ মে ২০১৯, ০৯:২৫

নিজ এবং স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ৩৫ কোটি টাকা পাওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের ব্যাখ্যা প্রকাশ করতে নারাজ এনসিসি ব্যাংক। এমডি নিজেও কথা বলছেন না, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কিছু বলছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংককেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, এনবিআরকে চিঠিও দিয়েছে সংস্থাটি। এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ মে বিকেলে বিশেষ বোর্ড সভা করে এনসিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আর এই বৈঠকেই মোসলেহ উদ্দিনের কাছে ব্যাখ্যা চায় ব্যাংক পর্ষদ।

নির্ধারিত সময় গত ১৫ মের মধ্যে লিখিত জবাব দিয়েছেন মোসলেহ উদ্দিন। তবে তার বক্তব্য গোপন রাখতে চাইছে এনসিসি ব্যাংক।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের রুম থেকে বের হতে দেখা গেছে এমডি মোসলেহ উদ্দিনকে। কেন এখানে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি কিছু জানাতে চাননি।

গত বুধবার বিকালে এমডির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি বলেন, ‘স্যার মিটিংয়ে আছেন। পরে ফোন দেওয়া হবে।’ কিন্তু এ পর্যন্ত আর যোগাযোগ হয়নি।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান নুরুন নেওয়াজ সেলিমকেও ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এমডি স্যারকে পরিচালনা পর্ষদ স্ব-পদে বহাল রাখতে চায়। এজন্য তার দোষ লুকাচ্ছে।’

একজন পর্ষদ সদস্য বলেন, ‘এমডি সাহেবের সাত দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার কথা, তিনি জবাব দিয়েছেন। তবে কী জবাব দিয়েছেন, তা আমরা প্রকাশ করতে চাইছি না।’

বিএফআইইউ বিশেষ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যাংকের ঋণগ্রহীতার টাকা ছাড়াও পরামর্শক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজার থেকেও তার হিসাবে টাকা জমা হয়েছে মোসলেহের হিসাবে। এমডি ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে এসব অর্থের মালিক হয়েছেন বলে বলছে বিএফআইইউ।

এরই মধ্যে পাঁচটি ব্যাংকে থাকা মোসলেহ উদ্দিনের হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ। ব্যাংকগুলো হলো এনসিসি, যমুনা, প্রাইম, সিটি ও প্রিমিয়ার। একই সঙ্গে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের হিসাবও জব্দ করেছে সংস্থাটি। মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের আয়ের উৎস ও সম্পদের বিষয়ে খতিয়ে দেখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

বিএফআইইউর তদন্ত অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংক, দুই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও চারটি ব্রোকারেজ হাউসে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে মোসলেহ উদ্দিন ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে। এসব টাকার কোনো হিসাব তার আয়কর নথিতে নেই। ঋণ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও জমা করা হয়েছে টাকা। এতে ধারণা করা হচ্ছে, ঋণ দিয়ে কমিশনও নিয়েছেন মোসলেহ উদ্দিন।

তদন্তে দেখা গেছে, যমুনা ব্যাংকে থাকা মোসলেহ উদ্দিনের ব্যাংক হিসাবে নিয়মিত ভিত্তিতে টাকা জমা দিয়েছে গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসেই চার দফায় ১ কোটি করে ৪ কোটি টাকা জমা করেছে তারা। এ গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের কাছে যমুনা ও এনসিসি ব্যাংকের ঋণ রয়েছে।

আর সেই টাকার মধ্যে রিলায়েন্স ফাইন্যান্সে ৩ কোটি টাকা ও ১ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত হিসাব খোলেন মোসলেহ উদ্দিন। আবার ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়েও ২ কোটি টাকার আমানত হিসাব খুলেছেন তিনি। এর জোগানদাতাও ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর আশুলিয়ায় ৫১ লাখ টাকায় একটি জমি বিক্রি করেন মোসলেহ। তবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাছ থেকে গ্রহণ করেন ৪ কোটি টাকা।

এনসিসি ব্যাংক এমডির এই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তদন্তে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমডিকে অপসারণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে তারাও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বিএফআইইউ থেকে এমন একটি অভিযোগ বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি বিভাগ এবিষয়ে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছে। তদন্ত শেষ না হলে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্তে এনসিসি ব্যাংকের এমডির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’

মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সাল পর্যন্ত যমুনা ব্যাংকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি এনসিসি ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) হিসেবে যোগ দেন। ২০১৭ সালের আগস্টে তিনি এনসিসি ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব নেন।

ঢাকাটাইমস/২৫মেে/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :