বাস ভাড়া দেয় না পুলিশ

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ মে ২০১৯, ০৯:৩৮
ফাইল ছবি

‘র’ অদ্যাক্ষরের ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের সদস্য। থাকেন মিরপুরের চিড়িয়াখানা এলাকায়। মঙ্গলবার রাতে বাংলামোটর থেকে ডিউটি শেষে নিউ ভিশন পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। যানটি মানিক মিয়া এভিনিউয়ে পৌঁছালে বাসের চেকার বাসে ওঠেন। কতজন যাত্রী আছে গোনা শেষে বলেন পুলিশ পাস কয়জন হাত দেখান। বাসে থাকা দুই পুলিশ সদস্য হাত তোলেন। চেকারের হাতে থাকা কাগজে (কোন স্টপেজে কত যাত্রী) দুজনকে পাস লেখে বাসটি ছেড়ে দেন।

এই পাস থাকার অর্থ হলো, কোনো ভাড়া দিতে হবে না। অর্থাৎ ঢাকায় পুলিশ বাস ভাড়া না দিয়ে চলাচল করে। অভিযোগ আছে, পরিবহন কোম্পানিগুলো পুলিশকে এই বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকে পাল্টা ছাড় পাওয়ার আশায়। ট্রাফিক আইন অমান্যের দায়ে বাসকে জরিমানা করলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কখনো ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ- এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে।

কেবল বাস না, হিউম্যান হলার বা টেম্পোতেও পুলিশ ভাড়া না দিয়ে যাতায়াত করে নিত্যদিন। আর পরিবহন শ্রমিকরা এ নিয়ে নানা কটূ কথা বলেন আড়ালে।

পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তাদের সদস্যদের বিনামূল্যে চড়ার বিষয়টি তারা জানেন। তবে এটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই দেখছেন তারা।

পুলিশ রাজধানীতে বাস বা টেম্পো ভাড়া না দিলেও তাদের প্রত্যেককেই যাতায়াত ভাড়া দেওয়া হয়। কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেওয়া পুলিশ সদস্যের মাসিক বেতনে এই যাতায়াত ভাতা তিন হাজার ২৫০ টাকা।

আর পরিবহন মালিকরা বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেও তারা হয়রানির আশঙ্কায় কিছু বলতে পারেন না।

পরিবহন মালিকরা বলছেন, তারা বাধ্য হয়ে পুলিশকে বিনামূল্যে চড়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। যদি বাসে ভাড়া নেওয়া হয় তাহলে মামলা দিয়ে হয়রানি করত।

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিউনিয়ে কথা হয় নিউ ভিশন পরিহনের চেকার অমৃত সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রায় ২৭টি বাস রাস্তায় চলাচল করে। এসব বাসে প্রতিদিন শতাধিকের বেশি পুলিশ সদস্য যাতায়াত করেন। অনেক সময় পুলিশের স্বজনরাও তাদের সঙ্গে থাকে। তারাও ফ্রিতে চলাচল করে।’

যাত্রাবাড়ী থেকে সাভারগামী লাভলী পরিবহনের চেকার রমিজ শেখ বলেন, ‘পুলিশ পাস মানে ভাড়া নেই। প্রতিদিন আপ-ডাউনে শতাধিক বাস চলাচল করে। প্রতি বাসে দুই থেকে তিনজন করে পুলিশ সদস্য থাকেন। অনেক সময় ১০ জনের মতো পুলিশ থাকেন। প্রতি সিগন্যালে যদি পুলিশ হাত দেখায় তাহলে ফ্রি। পুলিশের অফিসাররা বাসে চলাচল কম করে, বেশিরভাগ সময় কনস্টেবলরা বেশি চলাচল করে। বিভিন্ন থানার এসআইরা ফ্রিতে চলাচল করে থাকেন। বেশিরভাগ সময় রাজারবাগের সামনে থেকে বেশি পুলিশ উঠতে দেখা যায়।’

‘যদি কোনো সময় ফ্রি পাস কাটা না হয় তাহলে বকাবকি করে। তারা গায়ের জোরে এই পাস নেয়। কোম্পানি থেকে পাস দিতে বলা হয়েছে।’

শেকড় পরিবহনের মালিকপক্ষের মোহাম্মদ ইমতিয়াজ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের পরিবহনে ছাত্রদের কোনো হাফপাস নেওয়া হয় না। কিন্তু পুলিশের যেসব লোক ওঠেন তাদের থেকে ভাড়া নেওয়া হয় না। ভাড়া নেওয়া হয় না কারণ যেকোনো সময় রেকার লাগাতে পারে বা মামলা করতে পারে। এ জন্য ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয় না। এই পরিবহনের সঙ্গে এক যুগের বেশি সময় আছি। এখন পর্যন্ত পুলিশের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়নি।’

মামলা থেকে বাঁচতেই কি ভাড়া নেওয়া হয় না, এমন প্রশ্নে এই পরিবহন মালিক বলেন, ‘ভাড়া নিলেও মামলা দেওয়া হয়, হয়রানি করা হয়। না নিলেও একই বিড়ম্বনা। আমরা ভাড়া নেই না যাতে হয়রানি না করে। কিন্তু প্রতিকার পাইনি। প্রতিদিন শতাধিক পুলিশকে ফ্রি নিতে হয়, এতে অনেক টাকা লস হয়। আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।’

জয় নামে লাব্বাইক পরিবহনের মালিকপক্ষের একজন বলেন, ‘পুলিশের ফ্রিতে যাওয়া এটা কোনো আইনে নেই, কিন্তু এটা নিয়মে দাঁড়িয়েছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই, আমরা প্রতীকারও পাচ্ছি না।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই বিষয় আমার জানা নেই। কেউ যদি অভিযোগ দেয় আমরা ব্যবস্থা নেব।’

বেতনের সঙ্গে তো পরিবহন খরচ দেওয়া হয় এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নরমালি আমাদের ট্রাফিকের যারা বাসে চলাচল করে তাদের বাসের ভাড়া লাগে না। ইউনিফর্মে চলাচল করলে অনেক সময় ভাড়া লাগে না। বাট অন্যান্য যারা চলাচল করে তাদের তো ভাড়া লাগে।’

পোশাক পরে একজন পুলিশ সদস্য পাবলিক পরিবহনে উঠলেও কেন ভাড়া লাগবে না জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মেইনলি ট্রাফিকের যারা যায় তারা তো অন ডিউটিতে যায়। এটা দীর্ঘদিনের প্র্যাকটিস হয়ে আসছে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ফ্রি পাস কোনো নিয়মের মধ্যে নেই। পুলিশ যেটা করে সেটা অবৈধ।’ মালিক সমিতি কেন অভিযোগ করে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ কার কাছে করব? যার কাছে করব উনিই তো বাসে ফ্রি চড়েন। পুলিশ বাসে ফ্রি চড়লেও তো সরকার কোনো সাবসিডি (ভতুর্কি) দেয় না।’

ঢাকাটাইমস/২৫মে/এসএস/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :