সেমিফাইনালে খেলতে পারে বাংলাদেশ

খন্দকার জামিল উদ্দিন
| আপডেট : ২৫ মে ২০১৯, ১৮:২৬ | প্রকাশিত : ২৫ মে ২০১৯, ১৭:২৯

এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের যে আসরগুলোতে বাংলাদেশ অংশ নিয়েছে তার মধ্যে আমার দৃষ্টিতে এবারের দলটিই বাংলাদেশের সেরা দল। কারণ এখানে ৪-৫ জন ক্রিকেটার আছে যাদের তিন-চারটি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। মাশরাফি তো ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ থেকে খেলছে। মাঝখানে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ও খেলতে পারেনি। আর সাকিব-তামিম-মুশফিক খেলছে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ থেকে। ওরা টানা তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছে। রিয়াদ খেলেছে দুইটি বিশ্বকাপ।

তাছাড়া সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান এরা গত বিশ্বকাপে খেলেছে। পেসার রুবেল হোসেনের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। মোস্তাফিজুর রহমানেরও আইসিসি টুর্নামেন্টে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সব কিছু মিলিয়ে আমি বলব, এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অভিজ্ঞ ও সম্ভাবনাময়ী একটি দল নিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে যাচ্ছে। সেই হিসাবে দলটি নিয়ে অবশ্যই আশা করা যায়। আমরা জানি, ইংল্যান্ডে একটু গতিময় পিচ, উপমহাদেশের মতো পিচ না। সেখানে পেস বোলাররা একটু বাড়তি সুবিধা পায়।

তারপরও মনে রাখতে হবে এটা আইসিসির টুর্নামেন্ট। এখানে আইসিসির প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সব কিছু করা হবে। আইসিসি চাইবে, এমন পিচ হোক যাতে বেশি রান হয়। কম রানের খেলা মানুষ দেখতে চাইবে না। সুতরাং একেবারেই যে পেস বান্ধব উইকেট হবে এটা কিন্তু আমরা বলতে পারি না। এখানে আইসিসি যেভাবে চাইবে সেভাবে পিচ হবে। এখানে পেসাররাও সুবিধা পাবে, স্পিনাররাও সুবিধা পাবে। যারা ভাবছেন শুধু পেসাররা সুবিধা পাবে আমি মনে করি না এটা সঠিক চিন্তা। মোট কথা, আইসিসি একটি স্পোর্টিং উইকেট চাইবে।

ওখানকার যে কন্ডিশন সে অনুযায়ী যদি বলি তাহলেও কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞ পেস বোলার আছে। রুবেল আছে, মোস্তাফিজ আছে। মাশরাফি তো আছেই। মিরাজের মতো উঠতি স্পিনার আছে। সাকিব তো আছেই। মোসাদ্দেক যদি সুযোগ পায় তাহলে সেও স্পিন করতে পারে। সাব্বির রহমান মাঝেমধ্যে লেগস্পিন করে থাকে। সৌম্য সরকার মাঝে মধ্যে স্লো মিডিয়াম পেস বল করে থাকে। সেও কিন্তু কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। সব কিছু মিলিয়ে এবার একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল নিয়েই কিন্তু বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ। সেই হিসাবে আমি মনে করি, অন্য বিশ্বকাপের চেয়ে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনাটা বেশি।

পুরো বিষয়টা কিন্তু আবার নির্ভর করবে খেলোয়াড়রা টুর্নামেন্টে পুরো সময় ধরে ফিট থাকবে কি না। কারণ বিশ্বকাপ কিন্তু দেড় মাসের। আমাদের এমনিতেই ইনজুরির সমস্যা আছে। সাকিবের ইনজুরির সমস্যা আছে, মুশফিকের আছে, তামিমের আছে, রিয়াদের আছে, মাশরাফির তো আছে। এগুলোও কিন্তু একটা ভূমিকা রাখবে। তবে আমাদের খেলোয়াড়রা যদি ইনজুরির সমস্যা ছাড়াই বিশ্বকাপটা শেষ করতে পারে তাহলে আমরা দলের কাছ থেকে ভালো একটা ফলাফল আশা করতে পারি। এবার বাংলাদেশের পক্ষে সেমিফাইনালে খেলাটা হয়তো অসম্ভব কিছু হবে না।

সম্ভবত মাশরাফির এটি শেষ বিশ্বকাপ। তিনি হয়তো এই বিশ্বকাপের পর অবসরে যাবেন। সেই হিসাবে মাশরাফিও চাইবেন ভালোভাবে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এটি ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে। অন্য খেলোয়াড়দের কথা যদি আমরা চিন্তা করি, রুবেল, মাহমুদউল্লাহ, তামিম, মুশফিক, সাকিব তাদেরও কিন্তু ৩২-৩৩ বছর বয়স হয়ে গেছে। সুতরাং তারাও যে আরেকটি বিশ্বকাপ খেলতে পারবে এই সম্ভাবনাও কিন্তু ক্ষীণ। তাদেরও এটি শেষ বিশ্বকাপ হতে পারে। সুতরাং সবাই চাইবে এই বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখতে। এই যে, স্মরণীয় করে রাখার বিষয়টা, এই স্পিরিটটা যদি সবাই কাজে লাগাতে পারে, সবাই যদি মাঠে তাদের সেরাটা ঢেলে দিতে পারে তাহলে ভালো কিছু আশা করাটা মনে হয় অস্বাভাবিক হবে না।

সবাই কিন্তু সবার সঙ্গে খেলবে। বাংলাদেশ ৯টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। আমরা যদি আমাদের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারি তাহলে আমার মনে হয়, ভালো কিছু করা সম্ভব।

তিনটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ

১. পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।

২. দলের মধ্যে সমঝোতা ও শৃঙ্খলাটা পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে ঠিক রাখা।

৩. ফিট থাকা

এই তিনটা জিনিস যদি আমরা একসঙ্গে পাই তাহলে দলের কাছ থেকে ভালো ফলাফল আশা করতেই পারি।

বাংলাদেশের যে খেলোয়াড়রা বিশ্বকাপ খেলতে যাবে তারা বিশ্বের অনেক ভেন্যুতেই খেলেছে। সবাই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। প্রায় ১৪-১৫ বছর ধরে তারা ক্রিকেট খেলছে। বেশিরভাগ খেলোয়াড়েরই বিশ্বের বিভিন্ন ভেন্যুতে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সুতরাং আমি মনে করি যে, আটটি ভেন্যুতে খেলা এটা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না? বাংলাদেশ ভালো করেই জানে যে, তাদের অনেক ভেন্যুতে খেলতে হবে। অতীতে আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করেছি। যেমনÑ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা। সুতরাং অনেক ভেন্যুতেই আমাদেরকে খেলতে হয়েছে। সুতরাং আমি মনে করি, এটা কোনো সমস্যা না। বাংলাদেশের জন্য এটা যা সবার জন্য সেটা তা। যে ভেন্যুতেই খেলি না কেন, আমার গেম প্ল্যান ঠিক রাখতে হবে, স্ট্র্যাটেজি ঠিক রাখতে হবে, আমার নিজের সেরা পারফরম্যান্স ঢেলে দিতে হবে এবং পুরো দলটা একটা দল হিসাবে মাঠে খেলবে। এরকম যদি আমরা করতে পারি তাহলে ভেন্যু আসলে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করার কথা নয়।

বাংলাদেশের তো অবশ্যই টার্গেট শেষ চারে জায়গা করে নেওয়া। এখানে প্রথম কয়েকটা ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি প্রথম চারটা ম্যাচের মধ্যে তিন ম্যাচে জয়লাভ করতে পারি তাহলে যে স্পিরিটটা আসবে সেটা কাজে লাগিয়ে হয়তো আমরা চার নম্বরে জায়গা করেও নিতে পারি। কিন্তু প্রথম দুই-তিনটা ম্যাচে যদি বাংলাদেশ খারাপ করে তাহলে খেলোয়াড়দের মধ্যে যে স্পিরিট বা তাগিদ সেটা আমরা মিস করব। সেজন্য প্রথম তিন ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই তিন ম্যাচে যদি আমরা জিততে পারি তাহলে আশা করি শেষ চারে উঠতে কোনো সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশের একজন সমর্থক হিসাবে আমার তো আশা থাকবেই যে, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে। এটা আমার হৃদয় বলে। কিন্তু মন বলে ভিন্ন কথা। এখানে বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো আছে। বিশেষ করে ইংল্যান্ড তাদের নিজেদের মাটিতে খেলছে। ইংল্যান্ডের বর্তমান যে টিম কম্বিনেশন সেটা কিন্তু দুর্দান্ত। আইপিএলেও কিন্তু তাদের খেলোয়াড়রা দুর্দান্ত পারফর্ম করছে।

আবার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াও কিন্তু অসাধারণ খেলছে। সম্প্রতি তারা পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে। বিশ্বকাপে তারা স্মিথ ও ওয়ার্নারকে পাচ্ছে। এদিকে ভারতও কিন্তু চমৎকার ক্রিকেট খেলছে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই তারা শক্তিশালী। ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে তারা পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে।

ওদিকে নিউজিল্যান্ড কিন্তু ভারসাম্যপূর্ণ দল। গত তিন-চারটি সিরিজে তারা কিন্তু কাউকে পাত্তা দেয়নি। ইংল্যান্ডের কন্ডিশন আর নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন কিন্তু একই। গত বিশ্বকাপে তারা ফাইনালে খেলেছে। সুতরাং অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দল যেখানে খেলবে সেখানে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা করাটা ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ চ্যাম্পিয়ন হতে হলে যেরকম দুর্দান্ত দলের প্রয়োজন, দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দল এখনো সেরকম হয়ে ওঠেনি। আমাদের দলটা সেরকম হতে পারতো যদি মাশরাফি-সাকিব-মুশফিক-তামিম-রিয়াদ এদের মতো আরো তিন-চারজন খেলোয়াড় দলে থাকতো। সিনিয়রদের পাশাপাশি সৌম্য-সাব্বির-ইমরুল কায়েসের মতো খেলোয়াড়রা যদি লাগাতার ভালো পারফরম্যান্স করে নিজেদের ওই জায়গায় নিতে পারতো তাহলে আমাদেরও হয়তো সেরকম একটা সম্ভাবনা তৈরি হতো যেটা শ্রীলঙ্কা ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে করে দেখিয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনো আমাদের চার-পাঁচটা খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। যখন একটা দল এরকম চার-পাঁচজন খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করে তখন সেই দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশাটা খুব একটা যৌক্তিক বলে আমি মনে করি না। কিন্তু আমি তো বাংলাদেশের সমর্থক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমর্থক, আমার হৃদয় তো চাইবে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হোক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, গুটি কয়েক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় নিয়ে বিশ্বকাপ জয় করার আশাটা আসলে দুরূহ।

শিরোপা দৌড়ে যারা

এক নম্বরে ইংল্যান্ড

আমার বিচারে হট ফেভারিট হিসাবে আমি ইংল্যান্ডকে রাখব। কারণ ইংল্যান্ডের মাটিতে খেলা হবে। তারা কিন্তু এখনো বিশ্বকাপ জয় করতে পারেনি। তারা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয় করেছে। কিন্তু বিশ্বকাপ তাদের অধরাই রয়ে গেছে। এর আগে চারবার (১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ ও ১৯৯৯) তাদের দেশে বিশ্বকাপ হয়েছে। এখন তাদের দলে যারা আছেন তারা সবাই দুর্দান্ত ফর্মের মধ্যে আছেন। বেয়ারস্টো, জস বাটলার, অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান, ওপেনার জ্যাসন রয় সবাই অসাধারণ খেলছে। বোলিংয়ে জেমস অ্যান্ডারসন। যদিও সে ওয়ানডে খেলে না। বোলিংয়ে ওদের নতুন সেনসেশন আছে স্যাম কারেন। ওদের মঈন আলী আছে। বোলিংয়ে ভ্যারিয়েশন আছে। লেগ স্পিনার আদিল রশীদ আছে, আলেক্স হেলস আছে। বেন স্টোকসের মতো অলরাউন্ডার আছে। সব দিক মিলিয়ে ওদের টিম কম্বিনেশনটা কিন্তু চমৎকার। শিরোপা জয়ের সম্ভাবনার দিক থেকে আমি ইংল্যান্ডকে এক নম্বরে রাখব।

দুইয়ে ভারত

দুই নম্বরে আমি ভারতকে রাখব। কারণ ভারত সব দিক থেকেই শক্তিশালী। অস্ট্রেলিয়াকে সেদেশের মাটিতে হারিয়েছে ভারত। ইংল্যান্ডের মাটিতেও ভারত ভালো করেছে। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে বেশ কিছুদিন যাবৎ তারা ভালো ক্রিকেট খেলছে। ওদের যে ফাস্ট বোলিং অ্যাটাক সেটাও কিন্তু অসাধারণ। বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ সামি। খলিল নামে আরেকজন আছে। জানি না তারা সুযোগ পাবে কি না? আবার চাহালের মতো স্পিনার আছে তাদের। লেগস্পিনার কুলদীপ যাদব আছে। স্পিনারদের তালিকায় রবীন্দ্র অশ্বিন আছে, রবীন্দ্র জাদেজা আছে।

তিন নম্বর অস্ট্রেলিয়া

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনার তালিকায় অস্ট্রেলিয়াকে আমি তৃতীয় অবস্থানে রাখব। তারা দুর্দান্ত পারফর্ম করছে। অ্যারোন ফিঞ্চের নেতৃত্বে স্মিথ-ওয়ার্নারকে ছাড়াই ভারত সফরে এসে তারা যেভাবে খেলল তাতে তারা কৃতিত্বের দাবি রাখে। ওদের উসমান খাজা-অ্যারোন ফিঞ্চ ফর্মে আছে। ডেভিড ওয়ার্নার আইপিএলে দারুণ ব্যাটিং করছে। বোলিং আক্রমণে অ্যাডাম জাম্পা, নাথান লায়ন আছে। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়াও কিন্তু শিরোপার দাবিদার।

দুর্দান্ত দল নিউজিল্যান্ড

চার নম্বরে আমি নিউজিল্যান্ডকে রাখব। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, কেন উইলিয়ামসন, রস টেইলর, টম লাথাম, কলিন মুনরো, মার্টিন গাপটিলসহ দুর্দান্ত সব ক্রিকেটার আছে ওদের। অলরাউন্ডার আছে জিমি নিশাম, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। ভালো দিক হচ্ছে উইলিয়ামসনের মতো দারুণ একজন অধিনায়ক আছে কিউইদের। এই চারটি দলের যে কেউ শিরোপা পেতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকাকেও গোনায় ধরতে হবে

দক্ষিণ আফ্রিকার দলটা এবি ডি ভিলিয়ার্সরা অবসরে যাওয়ার পর একটু ব্যাকফুটে চলে গেছে। হাশিম আমলা সেরকম ফর্মে নেই। ডি কক ফর্মে আছে, ডু প্লেসিস আছে, মার্করাম আছে। আরো কিছু নতুন খেলোয়াড় আছে প্রোটিয়াদের। দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ভালো টিম ছিল তারা কিন্তু শেষবেলায় গিয়ে কিছু করতে পারেনি। এবার কিন্তু তারা ঝলক দিয়ে উঠতে পারে যখন তাদের নিয়ে কেউ আশা করছে না। এটা অসম্ভব কিছুই না। সুতরাং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না।

পাকিস্তান আনপ্রেডিক্টেবল

পাকিস্তান তো বরাবরই আনপ্রেডিক্টেবল। তারা আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে গ্রুপ পর্বে ভারতের কাছে যেভাবে পর্যুদস্ত হলো। কিন্তু ফাইনালে ভারতকে তারা লেজে-গোবরে করে ছেড়ে দিয়েছে। সুতরাং পাকিস্তানকেও বাইরে রাখা যাবে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজও আনপ্রেডিক্টেবল দল। তাদের দুর্দান্ত সব পারফর্মার আছে। ক্রিস গেইল খেলবে, আন্দ্রে রাসেল খেলবে। ওদের নিকোলাস পুরান আছে। ওপেনিংয়ে শাই হোপ আছে। ওদেরও কিন্তু দারুণ সব ওয়ানডে ক্রিকেটার আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিন্তু যেকোনো অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে। তারা কিন্তু কয়েকটি ম্যাচ জিতে শক্তিশালী দলকে শিরোপার দৌড় থেকে আউট করে দিতে পারে। সেই ক্ষমতা কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের আছে।

আর শ্রীলঙ্কা টুর্নামেন্টে যেন ভালো পজিশনে থাকতে পারে সেই চেষ্টাটা তাদের থাকবে। বিশ্বকাপ জেতার সম্ভাবনা তাদের খুবই ক্ষীণ। সবই নতুন খেলোয়াড় তাদের। যদিও সম্প্রতি তারা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ একটি টেস্ট সিরিজ খেলেছে। আমি মনে করি, ওরা টুর্নামেন্টে অঘটনের জন্যই খেলবে। চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে হয়তো শ্রীলঙ্কা থাকবে না। আর বাংলাদেশের কথা তো আগে বলেছি।

আমি মনে করি, যেহেতু প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে খেলবে সেহেতু একটি জমজমাট টুর্নামেন্ট হতে যাচ্ছে। সাত-আটটি ম্যাচ খেলার আগ পর্যন্ত কেউই মনে হয় নিশ্চিত হতে পারবে না যে, কোন চারটি দল সেমিফাইনালে খেলবে। দেখা যাবে কেউ ভালো টিমের সঙ্গে জিতেছে। আবার দুর্বল টিমের সঙ্গে হেরে গেছে। এরকমও কিন্তু অনেক ঘটনা ঘটে যেতে পারে এই টুর্নামেন্টে। সুতরাং খুব জমজমাট একটি টুর্নামেন্ট হবে। এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী দল নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাচ্ছে। আশা করব বাংলাদেশ তাদের সেরা পারফরম্যান্সটা দিবে। বাংলাদেশ যদি ভালো খেলতে পারে তাহলে সেমিফাইনালে ওঠাটা তাদের জন্য বিচিত্র কিছু নয়, অস্বাভাবিক কিছু না। বাংলাদেশ যদি এক থেকে চারের মধ্যে থাকতে পারে আমি মনে করি যে, এটা বাংলাদেশের জন্য একটা সেরা সাফল্য হিসাবে বিবেচিত হবে।

ব্যতিক্রমী উদ্বোধন এবং জমজমাট বিশ্বকাপ

মলে কিন্তু ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠান হয়। সংবর্ধনা, রানীর কোনো অনুষ্ঠান। সুতরাং এরকম একটা জায়গায় আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে এটা অবশ্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আর ১৫৩টি দেশের লোক টিকিট কিনেছে এটা খুবই আশার কথা। এটা কিন্তু প্রমাণ করে আইসিসি যে গ্লোবালাইজেশনের দিকে যাচ্ছে, ক্রিকেটটাকে যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে সংক্ষিপ্ত পরিসরের ক্রিকেট অনেকেই পছন্দ করছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আকর্ষণের কারণে ক্রিকেট মাঠে দর্শকের সংখ্যা বাড়ছে। আইসিসি গ্লোবালাইজেশনের দিকে যাচ্ছে এটা খুবই ভালো দিক। যত বেশি গ্লোবালাইজেশন হবে তত কিছু দেশের যে একচেটিয়া আধিপত্য সেটা থাকবে না। এটা ক্রিকেটের জন্যই ভালো হবে। আমি মনে করি, এ ব্যাপারে আইসিসির যে কর্মকাণ্ড তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য যে, তারা এত দেশকে আকৃষ্ট করতে পারছে। ১৫৩টি দেশের লোক যে বিশ্বকাপ ক্রিকেট দেখবে এটা তো আমরা এক সময় চিন্তাও করতে পারিনি। সেক্ষেত্রে আমি আইসিসিকে ধন্যবাদ দিব। বিশ্বব্যাপী তাদের ক্রিকেটটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার যে পরিকল্পনা তাতে যেভাবে এগোচ্ছে তারা ভালোভাবেই সফলকাম হয়েছে। একটা সফল বিশ্বকাপ আমি প্রত্যাশা করছি। সেটা আরো বেশি সফল হবে যদি বাংলাদেশ ভালো পারফরম্যান্স করে, আমাদের মুখ উজ্জ্বল করে। আমরা সবাই সেই পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে থাকব। আগামী বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পতাকা জ্বলজ্বল করে লর্ডসে উড়বে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

খন্দকার জামিল উদ্দিন: সাবেক বিসিবি পরিচালক

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :