খালি হাতে ডুব দিয়েই নদী থেকে মাছ ধরেন সমর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ মে ২০১৯, ১২:১৫

পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাটের রূপনারায়ণ নদে তখন চলছে ভরা জোয়ার। কানায় কানায় ভর্তি নদ। হঠাৎ জলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এক প্রৌঢ়। গেল গেল রব আশেপাশে। কিছুক্ষণ পরে ভেসে উঠলেন ওই ব্যক্তি। তার হাতে রয়েছে একটি মাছ।

রূপনারায়ণের পাড়ের বাসিন্দাদের কাছে পরিচিত মুখ সমর। ভরা কোটাল, বর্ষা, জোয়ার, ভাটা, দিন বা রাত— রূপনারায়ণে ডুব দিয়ে খালি হাতে মাছ ধরাই এক সময় পেশা ছিল সমরের। জলের তলায় অনায়াসে থাকতে পারতেন মিনিট পাঁচেকেরও বেশি। আর যখন উঠতেন, তখন তার হাতে থাকত চিংড়ি বা আস্ত বোয়াল।

কোলাঘাট পুরাতন বাজারের বাসিন্দা সমর ওই সব মাছ বিক্রি করে চালাতেন নিজের পেট। বর্তমানে বয়সের ভারে তাকে বদল করতে হয়েছে পেশা। কিন্তু রূপনারায়নের অমোঘ টান অস্বীকার করতে পারেন না তিনি। তাই অন্য কাজের ফাঁকে ৫৩ বছর বয়সে এখনও রূপনারায়ণে ঝাঁপ দিয়ে খালি হাতে মাছ ধরেন সমর।

খালি হাতে ভরা নদী থেকে মাছ ধরেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সমর জানান, ছোট বেলায় ঠাকুরদা এবং এক কাকার কাছে খালি হাতে মাছ ধরার কৌশল শিখেছিলেন তিনি। পড়াশোনা বিশেষ করেননি। তাই মাছ ধরাকেই পেশা করেছিলেন। ভরা জোয়ারে, রাতের অন্ধকারে যখন ভয়ঙ্কর রূপনারায়ণে নামার কেউ সাহস দেখাতেন না, তখন সারারাত ধরে নদে ডুব দিয়ে সমর তুলে আনতেন পারুল ট্যাংরা, নোনা ট্যাংরা, পাতি ট্যাংরা, বোয়াল, ভেটকি, পায়রাচাঁদার মত অসংখ্য মাছ। ধরতেন চিংড়িও। তা বিক্রি করে এক সময় দিনে এক হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হতো সমরের।

সমর জানিয়েছেন, যুবক বয়সে সমরের একটানা জলে ডুবে থাকার ক্ষমতা দেখে তাকে সরকারি ডুবুরির চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে বাবা মায়ের আপত্তির কারণে সমরের যোগ দেওয়া হয়নি ওই চাকরিতে। বর্তমানে এক দশকেরও বেশি সময় হল রূপনারায়ণে কমেছে মাছের যোগান। তাই মাছ ধরার পেশাকে সমর বিদায় জানিয়েছেন বছর পনেরো আগেই। এখন তিনি ওড়িশার সম্বলপুরে কাজ করেন। তবে বাড়ি ফিরলেই নেমে পড়েন রূপনারায়ণে। কিন্তু এখন সেই মাছ বিক্রি করে ৫০০ টাকাও উপার্জন হয় না বলে জানান সমর।

সমর বলেন, ‘জলের মধ্যে ডুব দিয়ে তিনি শুনতে পান মাছের আওয়াজ। সেই মিহি আওয়াজে সাড়া দিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরেন তাদের। একবার খালি হাতে ১০ কেজি ওজনের পারুল ট্যাংরা এবং ১ কেজি ওজনের একটি বাগদা ধরেছিলাম।’

সমরের কথায়, ‘রূপনারায়ণে রেলব্রিজের পিলারের গোড়ায় পাথরের খোপে বড় বড় মাছ লুকিয়ে থাকে। গভীর রাতে ওই জায়গাতেই ডুব দিয়ে মাছ ধরা সহজ।’

ডুব সাঁতারের দক্ষতাকে নজরে রেখে ২০১০ সালে রূপনারায়ণে নৌকাডুবির পরে স্থানীয় পুলিশ গিয়েছিল সমরের বাড়ি। প্রাথমিকভাবে উদ্ধারের সাহায্য পাওয়ার জন্য। তবে সে সময় রাজ্যের বাইরে কাজ গিয়েছিলেন সমর। তাই সাহায্য করতে পারেননি দুর্গতদের। কিন্তু এখনও এলাকার পুকুরে কারও কিছু হারিয়ে গেলে ডুবুরির ভূমিকা পালন করেন সমর।

সমর জানান, জীবনের ২৫ বছর রূপনারায়ণই ছিল তার আয়ের উৎস। কিন্তু সে জন্য অনেক ‘খেসারত’ দিতে হয়েছে তাকে। জলের চাপে ফুটো হয়ে গিয়েছে তার কানের পর্দা। পর্যাপ্ত উপকরণ ছাড়া অধিকাংশ সময় জলে ডুবে থাকার ফলে কমেছে দৃষ্টিশক্তি। এখন বুকে ঘন ঘন জমে যায় কফ্‌। কিন্তু তাতে কোনো আক্ষেপ নেই সমরের। বরং হেসে তার মন্তব্য, ‘আরে রূপনারায়ণের সঙ্গে তো আমার আত্মার সম্পর্ক। ডুব দিয়ে যদি কোনও দিন নাও উঠতে পারি, সেটাও সুখের।’ সূত্র: আনন্দবাজার

ঢাকা টাইমস/২৬মে/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :