কৃষক বাঁচাতে সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে

প্রকাশ | ২৬ মে ২০১৯, ১৪:০৮ | আপডেট: ২৬ মে ২০১৯, ১৪:০৯

আরিফুর রহমান

নানা গণমাধ্যমে কদিন ধরে কৃষকের হা-হুতাশের সচিত্র সংবাদ ঘুরেফিরে আসছে। আর তাতে দেশে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া। গত কয়েক বছর ধরেই শুনে আসছি, ধান চাষ করে লোকসান দিতে হচ্ছে কৃষককে।

এসব সংবাদ থেকে কৃষি খাতের এবারের চিত্র- জমিতে ধান পেকেছে, কিন্তু শ্রমিকের অভাবে তুলতে পারছেন না। আবার শ্রমিক পেলেও তাদের যে পারিশ্রমিক, তা দিয়ে পোষাবে না কৃষকের। এই না পোষানোর আগের কারণগুলো হলো, হাল চাষ, সেচ, সার-কীটনাশকের খরচ। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে চাষ করতে কৃষকের যে খরচ হয়, ধান বিক্রি করে তা উঠে আসে না। তাই বাম্পার ফলনের পরও তাদের মুখ মলিন।

এটা ঠিক যে সরকারের নানা উদ্যোগ আর কৃষকের পরিশ্রমের ফলে দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এমনকি সরকার বিদেশে চাল রপ্তানির কথাও ভাবতে পারছে। এটা আমাদের অগ্রগতির অন্যতম একটা স্মারক নিঃসন্দেহে। কিন্তু যাদের ঘামে-শ্রমে এই অর্জন, তারা যদি বঞ্চিত হন, তাদের চোখে যদি লোকসানের পানি টলমল করে, তাহলে তা আমাদের জন্য শুভকর হবে না।

আমরা কৃষককে দেশের প্রাণশক্তি বলে থাকি। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তারা আমাদের খাদ্যের জোগান দিচ্ছেন। জিডিপির বড় একটা অংশ অর্জিত হয় কৃষি থেকে। কৃষকের কল্যাণে সরকার কৃষিতে ভর্তুকি দেয় বটে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয় বলে বিভিন্ন মহল বলে থাকেন। এ ছাড়া এই খাতের উন্নয়নে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেভাবে কৃষি যান্ত্রিকীকরণও ঘটেনি এখনো।

ধান চাষ করে দিনের পর দিন লোকসান গুনতে গুনতে এখন অনেক কৃষক অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন। তাতে ধান চাষের চেয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়। আবার বিভিন্ন খাদ্যপণের জোগান বাড়ছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক। কিন্তু সবাই যদি সেদিকে ঝুঁকে পড়ে তাহলে ধান চাষের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে আবার দেশ খাদ্য ঘাটতির দিকে যাবে। খাদ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া হবে। সেটা হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই।

এখন তাহলে করণীয় কী? আমরা মনে করি, প্রথমত, ভর্তুকি বাড়িয়ে কৃষকের সার-কীটনাশক কেনার খরচ কমাতে হবে। দ্বিতীয়ত, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে হাল চাষ, নিড়ানি ও ফসল তোলার কাজটি সহজলভ্য করতে হবে কৃষকের জন্য। এর কোনোটিই কৃষকের পক্ষে করা সম্ভব না। সরকারকেই তা করে দিতে হবে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কম খরচে বেশি ফসলের জন্য সমবায় ভিত্তিতে চাষাবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এটা সরকারি সংস্থা ও কৃষকরা মিলে করতে পারে। তবে উদ্যোগটা আর নীতিমালা সরকারকে করে দিতে হবে। তাতে অল্প জমির মালিকরাও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের আওতায় আসতে পারবেন বলে আমরা মনে করি।

কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, চাহিদা ও উৎপাদনের ভারসাম্য রক্ষা, খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা স্থায়ীভাবে ধরে রাখতে সরকারকে সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। তা না হলে বর্তমান ও ভবিষ্যতের শিল্প অগ্রসরতার যুগে দেশের কৃষককে রক্ষা করা কঠিন হবে বরে আমরা আশঙ্কা করি।

আর সরকার ধান কিনছে মোট উৎপাদনের ২০ ভাগের এক ভাগ। কৃষককে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে এটা আরও বাড়াতে হবে। আর অবশ্যই সরকারকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। মাঝখানে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকতে পারবে না। দেশের জেলা উপজেলায় কৃষি অফিস আছে, সেখানে লোকবলও আছে, তাদের মাধ্যমে কেনা হোক ধান। তা হলে ধানের সরকারি মূল্য পুরোটা কৃষকের পাওয়া নিশ্চিত হবে।