সাতক্ষীরায় ওষুধ চোর খুঁজতে তদন্ত শুরু

প্রকাশ | ২৬ মে ২০১৯, ২১:০৩ | আপডেট: ২৬ মে ২০১৯, ২১:০৫

সাতক্ষীরা প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে মাটির নিচে কারা ১৫ বস্তা ওষুধ পুঁতল, তাদের খুঁজে বের করতে গঠন হয়েছে তদন্ত কমিটি। দুটি কমিটির কাছেই সাত দিনের মধ্যে তাদের কাছ থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। এর একটি করেছে জেলা প্রশাসন, অন্যটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শাহজাহান আলী দাবি করেছেন, এই ওষুধের গায়ে সরকারি সিল নেই। এতে লাল সবুজ চিহ্নও নেই। এ ওষুধ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোরের নয়।

তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘আমরা যে গজ ব্যান্ডেজ ব্যবহার করি তা থান কাপড়ের তৈরি। অথচ যা পাওয়া গেছে তা কাগজের। তা ছাড়া স্টোরে থাকা কোনো ওষুধ খোয়া যায়নি বলে স্টোরকিপার আহসান হাবিব ও স্টোর অফিসার বিভাস চন্দ্রর কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়েছি।’

‘ওষুধ ক্রয় বা গ্রহণের পর তা সার্ভে কমিটি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করানো হয়। সেসব তালিকা অনুসরন করলে পরিষ্কার হবে যে এ ওষুধ সরকারি নয়।’

এই ঘটনাটি তিনি এই হাসপাতালে যোগ দেওয়ার আগে ঘটেছে বলেও জানান শাহজাহান আলী। বলেন, ‘আমি এখানে যোগদান করেছি ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর।’

গত শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরের সেপটিক ট্যাংকের কাছ থেকে মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় ১৫ বস্তা ওষুধ উদ্ধার করা হয়। ভোরে বৃষ্টির পানিতে ওষুধ ভর্তি বস্তগুলি বেরিয়ে পড়লে তা সবার নজরে আসে। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ওষুধ ছাড়াও ক্যানোলা, জিপসোনা, গজ ব্যান্ডেজ ও চিকিৎসা সামগ্রী। বেরিয়ে পড়া এসব ওষুধ ফের মাটিচাপা দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের সাথে দরকষাকষির সময় তা জানাজানি হয়ে যায়।

এই ঘটনাটি নিয়ে সাতক্ষীরায় শুরু হয়েছে তোলপাড়। এই ওষুধ যারা এখানে পুঁতে রেখেছে তাদেরকে খুঁজে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি উঠেছে। তত্ত্বাবধায়ক যাই দাবি করেন, সাধারণ মানুষের ধারণা এগুলো সরকারি ওষুধ।

পুলিশ ওষুধের নমুনা নিয়ে এলেও বাকি প্রায় সব সেখানেই পড়ে রয়েছে। কয়েকজন আনসার সদস্য এলাকাটি ঘিরে রেখেছেন।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওষুধ চুরির ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে আসার পর এগুলো পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসা হবে।

জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, তিনি পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. বদিউজ্জানকে আহ্বায়ক করে অপর সদস্যরা হলেন পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষের প্রতিনিধি এবং ইউএনও সদর দেবাশীষ চৌধুরী।

জেলা প্রশাসক জানান, আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তদন্ত দলকে।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শাহজাহান আলি জানান, তার নির্দেশে একই বিষয়ের ওপর তিন সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক রুহুল কুদ্দুসকে আহবায়ক করে কমিটির অপর সদস্যরা হলেন চিকিৎসক প্রবীর কুমার বিশ^াস ও আক্তারুজ্জামান। এই কমিটিও আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে।

এই ঘটনাটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাতক্ষীরার সংসদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকও। তিনিও মনে করেন এগুলো সরকারি ওষুধ। বলেন, ‘অতি দ্রুত তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনরে আওতায় আনতে হবে। সরকার ওষুধ দেয় বিনামূল্যে রোগীদের মাঝে বিতরণের জন্য। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ এ ওষুধ বিক্রি করে খায়। তারা দেশের শত্রু।

সাতক্ষীরার নাগরিক আন্দোলন  মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, ‘দরিদ্র মানুষষের চিকিৎসার জন্য দেওয়া সরকারের ওষুধ ও সরঞ্জাম যারা চুরি কওে, সেসব চোরদেও যে কোনো মূল্যে জনগণের সামনে আনতে হবে। তুলতে হবে বিচারের কাঠগড়ায়।’

(ঢাকাটাইমস/২৬মে/ডিডব্লিউ/জেবি)