বরের বদলে বিয়ের অনুষ্ঠানে পাত্রের ভূমিকায় বোন!

প্রকাশ | ২৬ মে ২০১৯, ২১:৫৩

ঢাকা টাইমস ডেস্ক

‘যার বিয়ে তার হুঁশ নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই’। বাংলা এই প্রবাদই যেন সত্যি হয়ে উঠেছে গুজরাটের ছোট উদয়পুর জেলার তিন তিনটি গ্রামে। তবে পাড়াপড়শির জায়গায় এখানে ঘুম ছুটে যায় পাত্রের বোনের। কারণ, এখানে বিয়ের আসর হাজিরই থাকে না বর। তার প্রতিনিধি হিসেবে পুরো বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন বরের বোন। আর বোন না থাকলে গ্রামের অবিবাহিত কোনো তরুণী। বছরের পর বছর ধরে এই রীতিই পালন করে আসছেন গ্রামবাসীরা। তাদের বিশ্বাস, এই রীতি না মানলে সংসার জীবনে নানা অশান্তি এবং বিপদের মুখে পড়তে হয়।

ছোট উদয়পুর জেলার সুরকেধা, সানন্দা, অম্বলের মতো আরও তিন-চারটি আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে বিয়ে মানেই এমন ‘বরহীন’ অনুষ্ঠান। গোটা বিয়ে পর্বে বরের কোনো ভূমিকাই নেই। তিনি শুধু শেরওয়ানি-পাগড়ি পরে হাতে তলোয়ার নিয়ে বরের বেশে বাড়িতে মায়ের সঙ্গে বসে থাকেন। বাকি বরযাত্রীদের নিয়ে যাওয়া থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানের সিঁদুর দান কিংবা সাত পাক ঘোরা-সহ যাবতীয় বিয়ের আচার সেরে নববধূকে বাড়িতে নিয়ে  আসেন বরের বোন বা পাড়ার কোনো তরুণী। ভুরিভোজ থেকে নাচ-গানের মতো বাকি অনুষ্ঠানেও কোনো খামতি থাকে না।

গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, এই রীতি না মানলে দাম্পত্য জীবন সুখের হয় না। সংসারে নেমে আসে নানা বিপদ, অশান্তি। হাতের কাছে উদাহরণও রয়েছে। কয়েকজন এই রীতি ভাঙারও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের সংসারে নিত্য কলহ থেকে বিবাহ-বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়িয়েছে, দাবি গ্রামবাসীদের। তাই আর ঝুঁকি নেননি অন্যরা। ফিরে এসেছেন আবার আদিকাল ধরে চলে আসা পুরোনো রীতিই।

গ্রামের মক্কেলে-মাতব্বররাও এই রীতি মেনে চলার পক্ষেই সায় দিয়েছেন। সুরকেধার ‘মুখিয়া’ রামসিংহভাই রাঠোয়াবলেন, ‘বেশ কয়েক বার কিছু লোক এই নিয়ম ভঙ্গের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের জীবনে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে বা সংসার সুখের হয়নি অথবা অযাচিতভাবে কোনো বিপদ নেমে এসেছে।’

পুরোহিতদের বক্তব্য, ব্যতিক্রমী এই প্রথা আদিবাসীদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। স্মরণাতীত কাল থেকেই এই রীতি চলে আসছে। তবে একটা গল্পগাঁথা প্রচলিত আছে এই এলাকায়। এলাকার আদিবাসীদের বিশ্বাস, তাদের আরাধ্য দেবতা চিরকুমার ছিলেন। তাই পাত্রকে বিয়ের আসরে হাজির না করে এবং বাড়িতে রেখে দিয়ে এলে বিয়ে সুখের হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৬মে/ডিএম/মোআ)