মমতাকেই রক্ষাকবচ দেখছেন পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ মে ২০১৯, ১৪:৩০

লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্তে রাজাবাজার, পার্ক সার্কাস, চিৎপুর বা খিদিরপুরের মতো শহরের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে মুসলিমদের অনেকেই মনে করছেন, এখন সুখের দিন নয়। এই পরিস্থিতিতে তারা আরও ভরসা রাখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরেই।

এক কথায়, বহু রাজ্যে নরেন্দ্র মোদীর ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ মডেল যেভাবে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে কাজ করেছে, তা অন্তত পশ্চিমবঙ্গের শহুরে মুসলিমদের মনে দাগ কাটতে পারেনি। বরং, রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল জোরদার লড়াইয়ের মুখে পড়ার পরেও মমতা তাদের রক্ষাকবচ। এমনকী তৃণমূলের নানা ভুলত্রুটিও তারা ক্ষমা করতে ইচ্ছুক। তাদের ক্ষোভের নিশানায় রয়েছে সিপিএমের রাজনৈতিক-সাংগঠনিক ব্যর্থতাও। খবর এই সময়ের।

রাজাবাজারের বাসিন্দা সাব্বির আহমেদের কথাই ধরা যাক। বয়স ত্রিশের কম। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের বিখ্যাত কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম দেওবন্দে আরবি ভাষা নিয়ে গবেষণারত সাব্বির ভোট দিতে বাড়িতে এসেছিলেন। তার গভীর চিন্তা গেরুয়া শিবিরকে নিয়ে। বাংলার সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গেরুয়া উত্থানের ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। তবে তিনি মনে করেন, বিজেপির পথ সুগম করেছে তৃণমূলের রাজ্যকে বিরোধীশূন্য করার প্রবণতাই। কারণ, বিরোধীরা থাকাটা গণতন্ত্রে ‘সেফটি ভালভ’।

তার কথায়, ‘বাঙালির ইতিহাস নিয়ে আমার যতটুকু চর্চা, তাতে বাংলা ও বাঙালির মেধা-সংস্কৃতি বা বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশের ইতিহাস উত্তর-মধ্য বা পশ্চিম ভারত থেকে খানিক আলাদা। আমরা সহজিয়া চিন্তার জমির মানুষ। ফলে ভোটব্যাঙ্কে ধর্মীয় মেরুকরণে গোঁড়া হিন্দুত্ব যদি এই মাটিতে শিকড় গাড়ে, তা শুধু ইতিহাসের ধারার পরিপন্থী নয়, তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ঘটনা। মুসলিম হিসাবে বলব, এই মুহূর্তে আমাদের রক্ষাকবচ মমতা।’

পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা সুফিয়ান আহমেদের মতে, রেড রোডে নামাজ, ইমামভাতা ইত্যাদি নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে এমন একটা ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে মুসলিমদের খুব তোষণ করছেন মমতা। কিন্তু মুসলিমদের উন্নয়ন কি সত্যি কিছু হয়েছে? চাকরি ক’টা ছেলেমেয়ে পেয়েছে?’ তিনি বলেন, ‘পিএসসির মতো জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে। মমতা এসব দিকে নজর দিন।’ তিনি দুষছেন সিপিএমকেও। প্রশ্ন তুলেছেন, ‘তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ এত বড় দলটা গেল কোথায়?’

রাজাবাজারেই দেখা মিলল আমির আলি, ইমায়েত রহমান, মুহাম্মদ সিরাজুদ্দিন, মুহাম্মদ মায়েরুদ্দিন, সুজাস গুপ্তদের। তারা সকলেই বি কমের ছাত্র। কেউ পড়েন উমেশচন্দ্রে, কেউ বা ভবানীপুর এডুকেশন্যাল সোসাইটিতে। তাদের মতে, যুবাদের চিন্তা একটা ভদ্রস্থ চাকরি জোটানো। তাদের সেই স্বপ্ন যাতে সফল হয়, সেদিকেই সচেষ্ট হোক কেন্দ্র বা রাজ্যের সরকার। তারাও চিন্তিত হিন্দু বনাম মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের বিভাজনে। তারা তাদের বাপদাদাদের কাছেও শুনছেন, এমন ধারার ভোট পশ্চিমবঙ্গে কখনও হয়নি। তবে মমতা আবার ঘুরে দাঁড়াবেন, এমন বিশ্বাস তারা রাখেন। কারণ, মমতাতো অনেক ‘ভালো’ কাজ করেছেন। যেমন, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে। তবে যুবকদের কর্মসংস্থানে আরও নজর দেওয়া দরকার।

খিদিরপুর বাবুবাজারে সন্ধ্যায় ইফতার করছিলেন সাবির ও তার সঙ্গীরা। ফলের থালা এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনারাও বসুন। একটু কিছু মুখে দিন। এই মুহূর্তে যেই আসুক তাকে বসতে বলা, খেতে দেওয়া আমাদের আদত।’ সাবির মনে করেন, মা-মাটি-মানুষের জমিতে বিজেপির থাবা বসানোটা রাজ্যের মুসলিমদের মধ্যে এক বিপন্নতাবোধের সৃষ্টি করছে। রাজাবাজারে ফলের রস বিক্রেতা মুজফ্ফর, বস্ত্র বিক্রেতা মুহাম্মদ ওয়াকিলেরও একই ধারণা। তারা রাজনীতির অত খুঁটিনাটি বোঝেন না। কিন্তু অস্তিত্বের সঙ্কট যে তারা বোধ করছেন, তা জানাতে দ্বিধা করেননি। তারা মনে করেন, মোদির রাজনীতি বিভাজনের অঙ্ক কষেই। বাংলার রাজনীতিতে ‘মমতার’ ছোঁয়াতেই স্বস্তি।

নাখোদা মসজিদের ইমাম সফিক কাজমি মনে করছেন, যত গন্ডগোল ইভিএমে। গেরুয়া শিবিরের এই ‘যান্ত্রিক’ কারসাজিতে রাজ্যে মমতার আসন কমেছে। পার্ক সার্কাসের ফৈয়াজ আহমেদ অবশ্য এখনই ত্রাহি ত্রাহি রব তোলার পক্ষপাতী নন। তার যুক্তি, ‘কোনো একটি দল কয়েকটি বেশি আসন পেলে মুসলিমদের সর্বনাশ হয়ে যাবে মনে করি না। নিজেদের ঘর নিজেরা সামলাও। মনে রাখবেন, গরিব হিন্দু-মুসলমান দু’দলকেই খেটে খেতে হবে।’

ফৈয়াজ আবার ডেকে আনলেন তার বন্ধু ও প্রতিবেশী রাজেন গুপ্তকে। তাকে বললেন, ‘তোমার কি মনে হয়, আমরা এবার ঝগড়া শুরু করব?’ রাজেনের জবাব, ‘১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরের দাঙ্গায় আমার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। এরাই হাতে হাত লাগিয়ে আবার দোকান চালু করল। আমি ওকে বলি সালাম আলেকুম। ও বলে জয় শ্রীরাম।’

ঢাকা টাইমস/২৭মে/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

ইসরায়েলি হামলায় গাজা একটি ‘মানবিক নরকে’ পরিণত হয়েছে: গুতেরেস

ইরানের ওপর ফের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা

যে কারণে ৩০ এপ্রিলের আগে ইরানে হামলা চালাবে না ইসরায়েল

ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ২৮ কর্মীকে বরখাস্ত করলো গুগল

আমিরাতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত, দুবাই বিমানবন্দরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা

ভারতে প্রথম দফায় লোকসভা নির্বাচন শুরু শুক্রবার

ইরানের হাতে রাশিয়ার এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা!

নেসলের বেবিফুডে অতিরিক্ত চিনি  

ইসরায়েল আত্মরক্ষার জন্য সবকিছু করবে: নেতানিয়াহু 

মধ্যপ্রাচ্যে বৈরী আবহাওয়া: আকস্মিক বন্যার পেছনে আছে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতেরও ভূমিকা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :