খালেদাবিরোধী জিএম সিরাজ এখন বিএনপির প্রিয়মুখ

প্রকাশ | ২৮ মে ২০১৯, ০৯:৩৯

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

এক যুগ আগে দলের নেতৃত্ব থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলে সোচ্চার জি এম সিরাজই এখন বিএনপির প্রিয়মুখ। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বগুড়া-৫ আসন থেকে পরাজিত প্রার্থীকে পাঁচ মাসের ব্যবধানে আবার দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেওয়ার শূন্য আসনে উপনির্বাচনে ধানের শীষ পেয়েছেন সিরাজ।

ছয় মাসের ব্যবধানে দুটি আসন থেকে জি এম সিরাজকে কেন প্রার্থী করতে হবে, সেটা বুঝতে পারছেন না সদর আসনের নেতারা। এর আগে নিষ্ক্রিয় এই নেতাকে বিএনপিতে ফিরিয়ে এনে দলের জেলা শাখার আহ্বায়ক করা হয়েছে। আর কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দলীয় কার্যালয়ে তালাও ঝুলিয়েছেন  স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে তুমুল বিতর্কিত জি এম সিরাজ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দলে অবস্থান হারান। এরপর রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। কিন্তু একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তাকেই ‘আপ্যায়ন করে’ এলাকায় পাঠায় বিএনপির কেন্দ্র। যদিও মেনে নিতে চাননি স্থানীয় নেতারা। তবে শেষমেশ দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই চলতে হয় তাদের।

ওই নির্বাচনে ‘খালেদা জিয়ার আসন’ হিসেবে পরিচিত বগুড়া সদরে বিএনপির হয়ে জেতেন মির্জা ফখরুল। তবে ভোটে কারচুপির অভিযোগ এনে শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া বিএনপি মহাসচিব তার কথা অনুযায়ীই চলেন। অন্যরা শপথ নিলেও তিনি সংসদে যেতে চাননি।

সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ওই আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে। তবে ফখরুল সংসদে না গেলেও এই আসন থেকে বিএনপি একজনকে সংসদে পাঠাতে চাইছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো খালেদা জিয়ার অমতে তার নামে কেনা হয় মনোনয়ন ফরম। দুর্নীতির মামলায় দ-িত হওয়ায় ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত এই নেত্রী তার নামে মনোনয়ন ফরম তোলার ঘটনাটি জানতে পেরে রাগান্বিত হয়ে বিএনপির প্রতিনিধিকে ফিরিয়ে দেন। এরপর জি এম সিরাজের আগে প্রতীক তুলে দেয় দল।

সিরাজ বগুড়া সদর এলাকার বাসিন্দা নন। বাড়ি শেরপুরে। ২০০১ সালে শেরপুর-ধুনট আসন থেকে ভোটে জেতেন তিনি। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দলে সংস্কারের সুর তুলে খালেদা জিয়াকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিতে সক্রিয় হয় বিএনপির একটি অংশ। প্রচার আছে, সে সময়ের সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেই এই দাবিটি সামনে আনা হয়। সে সময় বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নার ভুঁইয়ার বাসায় এক অনুষ্ঠানে ‘বিএনপিতে ঈমাম পরিবর্তন দরকার’ বলে মন্তব্য করেন জিএম সিরাজ।

এক যুগ আগের সেই বক্তব্য অস্বীকারও করছেন না বিএনপিতে ফেরা এই নেতা। তার দাবি, একটি অবস্থার প্রেক্ষিতে এমনটা বলেছিলেন। তবে তার দলের প্রতি আনুগত্যের কমতি ছিল না। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘ঈমাম পরিবর্তনের বিষয়টি আগে পরের কথার মাঝখান দিয়ে উঠে আসছিল। তবে তখন খুব আন্ডারপ্রেশারে ছিলাম।’

সিজাদের কদর বিএনপিতে ইদানীং এত বেশি যে চলতি মাসে দীর্ঘদিন পর বিলুপ্ত হওয়া বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটির আহ্বায়ক করা হয় তাকে। যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে বগুড়ায়।

আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ‘হটাও সিরাজ, বাঁচাও দল’ স্লোগানে টানা কর্মসূচি চলেছে বগুড়ায়। সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের সমর্থকরা বিএনপি কার্যালয়ে একাধিকবার তালাও ঝুলিয়ে দেয়। সিরাজের কুশপুতুলও দাহ করা হয়। তবে শেষে কার্যাালয়ের দখল নিয়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার ঘোষণা দেন সিরাজ।

বিএনপির নেতারা জানান, জিএম সিরাজকে দলে ফিরিয়ে নেয়া, গত নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া এবং জেলা বিএনপির আহ্ববায়ক করার সবই হয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে। খালেদা জিয়া নিজেও এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না।

এক আসনের লোক হয়ে অন্য আসনে নির্বাচন করার সুযোগকে কীভাবে দেখছেন- এই প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘বগুড়া-৫ আর ৬ আমার কাছে কোনো বিষয় না। নাচতে জানলে উঠান পাকা না কাঁচা সেটা বিষয় না। তবে যেহেতু চেয়ারপারসনের আসন এটা সেজন্য একটু বাড়তি চাপ অনুভব করছি। যদিও সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারব দল থেকে নির্বাচন করতে পারলে।’

বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুসারে আগামী ২৪ জুন হবে ভোট। এই আসনটিতে এবার ইভিএমে ভোট নেবে নির্বাচন কমিশন।

উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলটির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াসহ পাঁচ প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও মনোনয়নে খালেদা জিয়া সই করেননি। স্কাইপ ব্যবহার করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বগুড়া জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জিএম সিরাজ বলেন, ‘দলের ছোট্ট একটি অংশ কমিটির বিরোধিতা করছে। এটা ভোটে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পারবে বলে মনে হয় না।’

ঢাকাটাইমস/২৮মে/বিইউ/এমআর