ভালো নেই রূপগঞ্জের জামদানি পল্লীর তাঁতীরা

আতাউর রহমান সানী, রূপগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ২৮ মে ২০১৯, ১০:৪২

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকায় তাঁতীদের নিপুণ হাতে তৈরি জামদানি শাড়ির সুনাম দেশজুড়ে। এই শাড়ি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। এখানকার জামদানিই শ্রেষ্ঠ বলে সমাদৃত ক্রেতাদের কাছে। তবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানালেন, নানা কারণে তারা ভালো নেই। দক্ষ জনবল, পুঁজির অভাব, ভারতীয় শাড়ি ভিড়ে গত কয়েক বছরে জামদানির কদর কমে গেছে অনেকটা। তারা এই শিল্পে এখন টিকে আছেন কোনোরকমে। এজন্য তারা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শীতলক্ষা নদীর তীর ঘেঁষে নোয়াপাড়া গ্রাম। গ্রামজুড়েই সারি সারি তাঁতের সমারোহ। এ এলাকাতে প্রায় প্রতিটি ঘরেই চলে জামদানি তৈরির কর্মচাঞ্চল্যতা। কেউ সুতা টানছে কেউবা সুতা কাটছে। কেউ আবার নকশা তৈরিতে ব্যস্ত। সবার কঠোর পরিশ্রম ও নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে হরেক রকমের নকশার জামদানি শাড়ি। পরিবারের প্রতিটি সদস্যেরই যেন নিঃশ্বাস ফেলার ফুরসত নেই।

ঈদের আর কয়েকদিন মাত্র বাকি। তাই ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন রূপগঞ্জের জামদানি পল্লীর তাঁতীরা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা কাজ করছেন। সবার মনে একটাই আকাক্সক্ষা ঈদের আগে জামদানি তৈরির কাজ শেষ করে পরিবারের সঙ্গে ভালোভাবে ঈদ করা।

এই গ্রামে এক হাজার পরিবার জামদারি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে কয়েক দশক ধরে। তারা এখানে ১২’শ টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ পর্যন্ত জামদানি শাড়ি তৈরি করে থাকেন। একেকটি শাড়ি তৈরি করতে এক সপ্তাহ থেকে দুই মাস পর্যন্ত সময় লাগে। জামদানির দাম যত বেশি এটি তৈরি করতে সময় তত বেশি লাগে। তাই ঈদকে সামনে রেখে তারা রাতদিন কাজ করে জামাদানি তৈরি করছেন।

সপ্তাহে শুক্রবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত এখানে জামদানির হাট বসে। তখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে জামদানি কিনে নিয়ে যায়।

সারাদেশে নোয়ারপাড়ার জামদানির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে পাইকার এসে এখান থেকে জামদানি কিনে নিয়ে যায়। এছাড়াও এখানকার তাঁতীদের তৈরি জামদানি শাড়ি ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, লন্ডন ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।

তাঁতীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাচীনকালের মিহি মসলিনের কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে জামদানি শাড়ি বাঙালি নারীদের জন্য অতিপরিচিত একটি নাম। মসলিনের উপর নকশা করে জামদানি শাড়ি তৈরি করা হয়। ১৭’শ শতাব্দীতে জামদানি দিয়ে রাজাদের শেরওয়ানী নকশা করা হতে বানানো হতো। বর্তমানে দেশের মার্কেটগুলোতে বাহারি রঙের দেশি, বিদেশি হরেক রকমের কাপড়ের সমাহার লক্ষ্য করা যায়। এসব কাপড় জামদানি শাড়ির তুলনায় দাম কম হওয়ায় জামদানি শাড়ির কদর কিছুটা কমেছে।

মোহনা জামদানি হাউজের মালিক সাদ্দাম হোসেন জানান, তার বাপ-দাদারাও জামদানি শাড়ি তৈরি করতেন। তিনিও বাপ-দাদার ব্যবসাই করছেন। ভারতীয় মেশিনের তৈরির জামদানি শাড়ির ভিড়ে কদর কমছে তাদের হাতের তৈরি জামদানি শাড়ির। ভারতীয় শাড়ির দাম তুলনামূলক অনেক কম হওয়ায় ক্রেতারা ভারতীয় শাড়ির দিকে ঝুঁকছেন। গত দুই বছরের জামদানির কদর কমেছে কয়েকগুণ। তবু তিনি বাপ দাদার ব্যবসাকে ধরে রাখতে দিনরাত কাজ করে চলছেন। জামদানি শিল্পকে তার পূর্ণ রূপ ফিরিয়ে দিতে সরকারি সহযোগিতা খুব বেশি প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

নাঈম জামদানি হাউজের মালিক সেলিম জানান, পুঁজি স্বল্পতার কারনে তারা তাদের ব্যবসাকে বড় করতে পারছেন না। জামদানি তৈরি কাচামালের দাম বাড়লেও বাড়েনি জামদানি শাড়ির দাম। এছাড়া পাইকারদের দৌরাত্মের কারণে তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া তারা তেমন কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধাও পাচ্ছেন না।

আল-আমিন জামদানি হাউজের মালিক আল-আমিন জানান, দক্ষ কারিগরের অভাবে জামদানি শিল্প এখন হুমকির মুখে। বর্তমানে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তবে, এখনো জামদানি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। দক্ষ কারিগর, পুঁজি ও পাইকারদের দৌরাত্ম কমাতে পারলে জামদানি শিল্প আরও এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

জামদানি পল্লীর বিসিকের সভাপতি জহিরুল ইসলাম জানান, এবারের ঈদে পাঁচ কোটি টাকার জামদানি বিক্রির টার্গেট রয়েছে। তবে বিগত সময়ের তুলনায় জামদানির চাহিদা কমেছে কয়েক গুণ। এই শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

ঢাকাটাইমস/২৮মে/প্রতিনিধি/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :