ডিএসইর উদ্যোগ

কষ্ট কমেছে পা হারানো আইয়ুব আলীর

প্রকাশ | ২৮ মে ২০১৯, ১৯:২৩ | আপডেট: ২৮ মে ২০১৯, ২১:২২

বোরহান উদ্দিন

ছোটবেলায় এক পা আর হাতের কয়েকটি আঙুল হারিয়েছেন আইয়ুব আলী। জীবিকার তাগিদে চলে আসেন ঢাকায়। চল্লিশ বছর ধরে রিকশার চাকায় ঘুরছে তার জীবনের চাকাও। তবে রিকশার প্যাডেল মারার শক্তিও ক্ষয়ে এসেছে সত্তরোর্ধ আইয়ুব আলীর। নিঃসন্তান এই বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে দুঃখের দিনাতিপাত করছিলেন। তার এই অসহায় জীবনে খানিকটা হলেও শক্তি জুটেছে। ডু সামথিং এক্সেপশনাল (ডিএসই) নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ পাশে দাঁড়িয়েছে তার। তাদের তরফে আইয়ুব আলীর জুটেছে ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা।

ব্যস্ত ঢাকা নগরীতে কোটির বেশি মানুষের বসবাস। আইয়ুব আলী গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় রিকশা চালান। প্রতিদিন অনেক যাত্রীকে আনা নেয়া করে থাকেন। তবে এক দিন তাকে দেখে চোখ আটকে যায় তরুণ ফ্রিল্যান্সার অন্তর মাশঊদের। তিনি ডিএসই গ্রুপের একজন অ্যাডমিন। কথায় কথায় শুনলেন আইয়ুব আলীর দুঃখের বৃত্তান্ত। এরপরই তিনি উদ্যোগ নেন এই বৃদ্ধের জন্য কিছু করার।

পরে বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় গত সোমবার আইয়ুব আলীর হাতে ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা তুলে দেয়া হয়। প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকার মতো খরচ করে তৈরি করে দেয়া হয় রিকশাটি। আর্থিক সহায়তা হিসেবে আরও উদ্বৃত্ত কিছু টাকা আইয়ুব আলীর হাতে সহসাই তুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর মাশঊদ।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, দুই মাস আগে গুলশান এলাকায় এই মানুষটির সঙ্গে দেখা। তার রিকশায় চড়ার পর শারীরিক সমস্যার বিষয়টি নজরে আসে। অত্যন্ত পরিশ্রম এবং কষ্টে রিকশা চালানো দেখে মনটা ভারি হয়ে ওঠে। পরে জানতে পারি এভাবেই গত ৪০ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন আই্য়ুব আলী। নিঃসন্তান এই মানুষটি স্ত্রীকে নিয়ে মধ্যবাড্ডার আদর্শনগরে বসবাস করেন।

মাশঊদ বলেন, ‘ব্যস্ততার জন্য খুব বেশি কথা বলার সুযোগ না হলেও এই মানুষটির জন্য কিছু করার চিন্তা করছিলাম তখন। তাকে ব্যক্তিগত নম্বরটা দিয়ে পরে যোগাযোগ করার জন্য বলি। তার একটি ভিডিও করে রাখি। তার রিকশা চালানোর ভিডিওটি শুরুতে ডিএসইর পেজে দিই যাতে কেউ জীবন নিয়ে হতাশ না হয় সেজন্য মোটিভেশনের কাজ করবে ভেবে। কিন্তু এটি দেখে সবাই তাকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনে দেয়ার পরামর্শ দেন।’

পুরোপুরি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া মেনে আগ্রহীদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নেয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা পুরোনো অটোরিকশা কিনে দেয়ার পরিকল্পনা করলেও সবার পরামর্শ ও সহযোগিতায় তাকে সোমবার বংশাল থেকে তৈরি করা একটি নতুন রিকশা কিনে দিই। ডিএসইর পক্ষ থেকে এটা আমরা ঈদ উপহার হিসেবে দিয়েছি। বৃদ্ধের কষ্ট একটু হলেও লাঘব হয়েছে কীনা জানি না। তবে তার চোখে যে আনন্দাশ্রু দেখতে পেয়েছি সেটাই আমাদের প্রাপ্তি।’

ডিএসইর অ্যাডমিন জেবিন ইসলাম মানবিক এই কাজে এগিয়ে আসার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ডিএসই রমজান মাসব্যাপি ইফতার আয়োজন করে থাকলেও এবার অন্যান্য সংগঠনের মত এই কর্মসূচি পালন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখনই এই রিকশাচালকের সংবাদ শুনে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করি। তার সঙ্গে সাক্ষাত করে একটি ভিডিও গ্রুপে দেয়ার পর অল্প সময়ের ব্যবধানে সদস্যদের সহযোগিতায় অটোরিকশার ব্যবস্থা হয়ে যায়।

তিনি বলেন, আমাদের টিমের সদস্যরাই আমাদের শক্তি। আর সদস্যরা আমাদের উপর ভরসা রাখেন বলেই আমরা এমন উদ্যোগ নিতে পারি। এখানে সকল অর্জন মূলত সদস্যদের। আমরা কেবল মাত্র মাধ্যম। যারা সবসময়ের মতো ভরসা করে পাশে ছিলো টিম ডিএসই এবং ডিএসই এডমিন প্যানেল তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/বিইউ)