বিমানে বিনয়ী প্রধানমন্ত্রীতে মুগ্ধতার রেশ কাটছে না

প্রকাশ | ২৯ মে ২০১৯, ১১:২৯

জাপান থেকে ড. কাজী এরতেজা হাসান

বাইগার নদীর তীর ঘেঁষে ছবির মতো সাজানো সুন্দর একটা গ্রাম। সে গ্রামটির নাম টুঙ্গিপাড়া। বাইগার নদী এঁকে-বেঁকে গিয়ে মিশেছে মধুমতী নদীতে। এই মধুমতী নদীর অসংখ্য শাখা নদীর একটা হলো বাইগার নদী। নদীর দু’পাশে তাল, তমাল ও হিজল গাছের সবুজ সমারোহ। ভাটিয়ালী গানের সুর ভেসে আসে হালধরা মাঝির কণ্ঠ থেকে, পাখির গান আর নদীর কলকল ধ্বনি এক অপূর্ব মনোরম পরিবেশ গড়ে তোলে।

প্রায় ২০০ বছর পূর্বে মধুমতী নদী এ গ্রাম ঘেঁষে বয়ে যেত। এই নদীর তীর ঘেঁষেই গড়ে উঠেছিল জনবসতি। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ধীরে ধীরে নদীটি দূরে সরে যায়। চর জেগে ওঠে আরও অনেক গ্রাম। সেই ২০০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব নিয়েই তাঁর পূর্ব-পুরুষরা এসে এই নদীবিধৌত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সুষমামণ্ডিত ছোট্ট গ্রামটিতে তাদের বসতি গড়ে তোলে এবং তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল কলকাতা বন্দরকে কেন্দ্র করে। অনাবাদী জমিজমা চাষবাস শুরু করেন এবং গ্রামে বসবাসকারী কৃষকদের নিয়ে একটা আত্মনির্ভরশীল গ্রাম হিসেবেই এ গ্রামটিকে বেশ বর্ধিষ্ণু গ্রামরূপে গড়ে তোলেন। 

দেশভাগের সেই অস্থির, অশান্ত সময়ে  ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর  টুঙ্গিপাড়া গ্রামেই জন্মেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, মাদার অব হিউম্যানিটি এবং রাষ্ট্রনায়ক থেকে বিশ্বনায়কে  পরিণত হওয়া আমাদের পরম শ্রদ্ধার প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাকে নিয়ে বিশেষণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। তিনিই আমাদের বাংলাদেশিদের আশার শ্রেষ্ঠ বাতিঘর।

জাতির জনকের অসমাপ্ত কাজকে এগিয়ে নিতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরেছিলেন ঝাঞ্ছা বিক্ষুব্ধ এক সময়ে। তারপর নানা ঘাত প্রতিঘাত, দুর্যোগ মোকাবিলা করে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে পরিচিত করিয়েছেন। নিজের একক ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় বর্তমান বিশ্বের উজ্জ্বলতম রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে শেখ হাসিনা অন্যতম। আজ বাংলাদেশ মানেই শেখ হাসিনা বলতে দ্বিধা করেন না প্রভাবশালী অনেক রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্রগুলো একসময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত করতো, তারাই আজ শেখ হাসিনাকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিচ্ছে।

আমাদের ভাবতেই ভালো লাগে, এমন একজন বিশ্ব নেতাকে খুব কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছি। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমরা গর্ব করে বলতে পারব যে, আমরা বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি; কিন্তু আমরা শেখ হাসিনাকে দেখেছি। বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র জাপান সফরে আসার সময় উড়ন্ত বিমানে সব রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙে তিনি আমাদের সবার খবর নিতে আসেন।  ভূপৃষ্ঠ থেকে হাজার হাজার ফুট উচ্চতায় বিমানটি যখন উড়ছিল, কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম। আপা (নেত্রী) আসছেন। মুহুর্তেই আমার চোখের ঘুম উধাও। তিনি আসলেন এবং আমাদের সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন। ছোট আপাও (শেখ রেহানা) আমাদের খোঁজ খবর নিলেন। এতটা বিনয়ী হয়ে তিনি আমাদের পাশে এসে কথা বলছিলেন যেন অতি আপন মানুষ আমাদের স্নেহ ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলেন।

এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। একজন রাষ্ট্রনায়ক হয়ে তিনি কতটা বিনয়ী হতে পারেন, তাকে না দেখলে তা শেখা যাবে না। আমি  দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মানুষ অন্তর থেকে যত বিশুদ্ধ হবেন, যত ধার্মিক হবেন; ততটাই বিনয়ী হবেন। আমার শ্রদ্ধেয় নেত্রীকে এর আগেও দেখেছি, তিনি উড়ন্ত বিমানে কম্পাস দিয়ে পশ্চিম দিক নির্ধারণ করে কিবলামূখী হয়ে নামাজ আদায় করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তার এই ধর্মপ্রীতি আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করে। দেশের কল্যাণে তার মতো রাষ্ট্রনায়ক আরো অনেক দিন সুস্থ থেকে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করবেন এটা আমি বিশ্বাস করি।

প্রধানমন্ত্রী হয়েও সাধারণের অসধারণ শেখ হাসিনার বিনয়ের মুগ্ধতার রেশ এখনো কাটছে না। এভাবেই তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকুন এই দোয়া আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে করছি।

লেখক: সম্পাদক, ভোরের পাতা