পারভেজের কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করুন

প্রকাশ | ২৯ মে ২০১৯, ১১:৩১

শরিফুল হাসান

দুই বছর আগে যে মানুষটি নিজে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ২০ জন মানুষকে জীবিত উদ্ধার করে সাহসী খেতাব পেয়েছিলেন আজ সড়ক দুর্ঘটনায় তিনিই গুরুতর আহত। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। বলছি পুলিশ কনস্টেবল পারভেজের কথা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়ার জামালদি বাসস্ট্যান্ডের সামনে ২৭ মে সকালে একটি বেপরোয়া কাভার্ডভ্যান ধাক্কা দিলে গুরুতর আহত হন পারভেজ। একই সঙ্গে ডান পায়ের গোড়ালি ও হাতে মারাত্মক আঘাত পান। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় লোকজন। সেখান থেকে ঢাকার রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পঙ্গুতে চিকিৎসাধীন কনস্টেবল পারভেজের জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের চিকিৎসকরা পারভেজের জীবন বাঁচাতে তার পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন।

মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার ডান পায়ে হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়।

পারভেজকে এখন অপারেশন থিয়েটার থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আমি জানি না পারভেজ শুয়ে শুয়ে দুই বছর আগের কথা ভাবছেন কি না।

সেদিন ছিল ২০১৭ সালের ৭ জুলাই। সেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ওইদিন কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চাঁদপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডোবায় পড়ে যায়। যাত্রীসহ বাসটি ডোবায় ডুবে গেলে তৎকালীন দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ মিয়া ইউনিফর্ম পরেই পানিতে নেমে পড়েন এবং ২০ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন।

পারভেজ তো আসলে সত্যিকারের নায়ক। সেই সাহসিকতার জন্য পারভজকে দেয়া হয় পুলিশের সর্বোচ্চ পুরস্কার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম)। এছাড়া নগদ টাকা ও মোটরসাইকেল দেন আইজিপি।

২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি বিপিএম পদক পাওয়া পারভেজ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমার স্বপ্ন এখন ইন্সপেক্টর হওয়া।’ আমি জানি না পারভেজ সেটা হতে পারবেন কি না। আমার ভীষণ কষ্ট লাগছে পারভেজের জন্য। এই সমাজে এই রাষ্ট্রে পারভেজের মতো মানুষ ভীষণ দরকার। পুলিশ বাহিনীর কাছে অনুরোধ, পারভেজ যেন কৃত্রিম পা লাগিয়ে আবার চলতে পারেন সেই ব্যবস্থা করুন। যতো খরচ লাগুক উদ্যাগ নিন। আমরা সাথে আছি। আমরা পারভেজকে আবার স্বাভাবিক জীবনযাপনে দেখি। আমার বিশ্বাস সবাই মিলে এক হলে সেটা সম্ভব। শুভ কামনা পারভেজ।

লেখক: অধিকারকর্মী