চিরিরবন্দরে সুগন্ধী ব্রিধান-৫০ চাষে সাফল্য

মোহাম্মাদ মানিক হোসেন, চিরিরবন্দর
 | প্রকাশিত : ২৯ মে ২০১৯, ১৫:৪৮

সারাদেশের মতো দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে এবার বোরোর বাম্পার ফলন হলেও বাজারে ধানের দাম না থাকায় হতাশাগ্রস্ত কৃষক। তবে অনেক কৃষক নতুন জাতের সুগন্ধী ধান ব্রি-ধান-৫০ চাষ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। এই ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে এ ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে এ ধানের চাষ ব্যাপক হারে হবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর আর্থিক সহায়তায় বেসরকারি সংস্থা গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র (জিবিকে) সুগন্ধি ধান ভ্যালু চেইন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সে লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত কৃষকদের দুই দিনব্যাপী সুগন্ধি ধান চাষের উন্নত পদ্ধতি ও রোগ-পোকা দমনের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এর ফলে কৃষকেরা ধান উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান বিশেষ করে সুষম সারের ব্যবহার, সিঙ্গিল হিল মেথড, পার্চিং এবং রোগ ও পোকা মাকড় দমন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জানতে পারে। যা ওই অঞ্চলের কৃষকেরা আগে জানত না তারা শুধু সনাতন পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে ধান চাষ-আবাদ করত, ফলে কৃষকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো।

এ বছর বোরো মৌসুমে উন্নত প্রযুক্তি ও কলাকৌশল ব্যবহার করে প্রায় ৪০ একর জমিতে ব্রিধান-৫০ জাতের ধান চাষাবাদ হয়েছে, ফলনও ভালো হয়েছে।

আব্দুলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের কৃষক এহসানুল হক জানান, তিনি এবার ৩৩ শতক জমিতে ব্রিধান-৫০ চাষ করে ২৮ মণ ধান উৎপন্ন করেছেন যার বাজারমূল্য ১৮ হাজার ২০০ টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ হয়েছে আট হাজার ৪০০ টাকা। চারা লাইন করে রোপণ করার ফলে চারার পরিমাণ কম লাগার পাশাপাশি ফলন বৃদ্ধি ও রোগ পোকা-মাকড় কম হয়। অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্চা করতেও সহজ হয়।

তবে সনাতন পদ্ধতিতে ওই জমিতে চাষ করতে তার ব্যয় হতো প্রায় ১০ হাজার টাকা। ধান উৎপাদন হতো ২০ থেকে ২২ মণ, যার বাজারমূল্য ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের মন্ডলপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি এবার ৪৮ শতক জমিতে ব্রিধান-৫০ চাষ করে ৩৮ মণ ধান উৎপন্ন করেছেন যার বাজার মূল্য ২৪ হাজার ৭০০ টাকা। গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। এতে তাদের উৎপাদন খরচ যেমন কমেছে পাশাপাশি তাদের আয়ও বেড়েছে।

গ্রাম বিকাশকেন্দ্রের সুগন্ধি ধান ভ্যালু চেইন প্রকল্পের প্রকল্প প্রধান কৃষিবিদ মো. লিয়াকত আলী বলেন, কৃষক একটি করে চারা সারিতে রোপন, মাজরা পোকা দমনের জন্য ডাল বা কঞ্চি পুতে দেওয়া, কাক্সিক্ষত মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ এসব প্রযুক্তি গ্রহণ করায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে, উৎপাদন খরচ হ্রাস পেয়েছে। ফলে ব্রিধান-৫০ (বাংলামতি) চাষাবাদে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। তাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সুগন্ধী ধান ব্রিধান-৫০ (বাংলামতি) চাষাবাদে উন্নত কলাকৌশল কৃষকদের মাঝে সম্প্রসারণের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে চিরিরবন্দর কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান বলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক পরামর্শ ও গ্রাম বিকাশকেন্দ্রের পেইস প্রকল্পের আওতায় সুগন্ধী ধান ভ্যালু চেইন প্রকল্পের সহযোগিতায় কৃষকরা বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষ করায় ধানের ভালো ফলন হচ্ছে। এ প্রকল্প চালু থাকলে পরবর্তী সময়ে সুগন্ধী ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিনদিন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯মে/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :