উচ্ছেদের জায়গা ফের প্রভাবশালীদের দখলে

প্রকাশ | ৩০ মে ২০১৯, ১০:৫১

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

বুড়িগঙ্গা তীরে নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর পুনরায় দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখলমুক্ত সরকারি জায়গা আবার দখল করা হয়েছে সংগঠনের নামে। পাশাপাশি উচ্ছেদকৃত স্থান দখল করে বসানো হয়েছে ঈদ মেলা। এর বিনিময়ে টাকা আদায় করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। সরকারি জায়গা দখল ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে এখনো কিছু জানে না। তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানার কুড়াঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ)। এসময় নদীর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে নির্মাণ করা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ঘটনার প্রায় তিন মাস পর পুনরায় দখল হয়েছে উচ্ছেদকৃত সেই জায়গা।

কুড়াঘাট ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের পূর্ব পাশে বসানো হয়েছে ঈদ মেলা। আর এক পাশে জায়গা ভাড়া দেয়া হয়েছে ভ্যান, রিকশা ও পিকাপভ্যান রাখার জায়গা হিসেবে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এই জায়গা ভাড়া দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন তিন লাখ টাকার বিনিময়ে লাবু নামের এক ব্যক্তিকে ঈদ মেলা আয়োজনের জন্য জায়গাটি ভাড়া দিয়েছেন। মেলা চলবে ঈদের পরে আরও ১২ দিন।

মেলার দোকানগুলো থেকে প্রতিদিন তিন থেকে চারশ টাকা হারে ভাড়া আদায় করেন মেলার আয়োজক লাবু। মেলা আয়োজনে স্থানীয় বাড়ি মালিক ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা বাতেল তালুকদার জড়িত বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া ভ্যান, রিকশা ও পিকাপভ্যান রাখার জন্য ভাড়া আদায় করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু, রহিম, আশরাফ, ডলফিন ও আমিনুল। উচ্ছেদকৃত স্থানে ভ্যান ও রিকশা রাখার জন্য মাসে ৪০ হাজার টাকা এবং পিকাপভ্যান রাখার জন্য আরও ৪০ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করেন এই পাঁচ নেতা।

১২ ফেব্রুয়ারি যখন বিআইডাব্লিউটিএ’র উচ্ছেদ অভিযান চলছে তখন ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম শহীদ মিনার ও কামরাঙ্গীরচর ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন পরিষদ উদ্বোধন করেন। নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা ক্লাব ও শহীদ মিনার স্থানীয় কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয়। সম্প্রতি ক্লাব ঘেঁষে আরও চারটি পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

এবিষয়ে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচর ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন পরিষদের মাধ্যমে ঈদ মেলা আয়োজন করা হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ঘটেনি। মেলাটি সপ্তাহখানেক চলবে।’

কাউন্সিলর বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচর শিক্ষক ফোরাম নামে ১৩০টি কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের একটি সংগঠন আছে। তাদের বসার কোনো জায়গা নেই। অদক্ষ শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য একটি ঘর করা হয়েছে। এখানে তাদের  প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো সরকারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, শহীদ মিনার কোনো ব্যক্তিগত বিষয় না। যারা উচ্ছেদ করতে এসেছিল এলাকার লোকজন তাদের কাছে আবেদন করেছে, তারা আবেদনটা রক্ষা করেছিল। তারা এটা ভাঙেনি। আমরা প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকের কাছে আবার আবেদন করব।’

উচ্ছেদকৃত জায়গা দখল করে মেলা আয়োজন কিংবা নতুন করে সংগঠনের কার্যালয় নির্মাণের বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না উচ্ছেদকারী সংস্থা বিআইডাব্লিউটিএ। সংস্থাটির চেয়ারম্যান কমোডর এম মাহবুব-উল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। উচ্ছেদের জায়গা যেন পুনরায় দখল না হয় এ বিষয়টি দেখার জন্য আমরা ১৩টি টিম করেছি। তারা কাজ করছে। তারপরেও কিছু জায়গায় এমনটা ঘটছে। আমরা অভিযোগ পেলাম। অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, এ বিষয়ে কোনো তথ্য জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, ‘কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে আমরা তদন্ত করব এবং এবিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

ঢাকাটাইমস/৩০মে/কারই/এমআর