খাদ্য আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে প্রাণ-এসিআই

প্রকাশ | ৩০ মে ২০১৯, ১১:৪৮ | আপডেট: ৩০ মে ২০১৯, ১৯:৩৮

তানিয়া আক্তার, ঢাকাটাইমমস

ভেজাল খাদ্য উৎপাদনে নিষিদ্ধ হয়েছে তাদের নানা পণ্য। মামলাও হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এরপর আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেসব মামলার শুনানিতেও যাচ্ছে না তারা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নিরাপদ খাদ্য আদালতের শুনানিতে হাজির হয়নি প্রাণ, এসিআই, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, সিটি অয়েল মিলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। আর নোটিস পেয়েও আদালতে হাজির না হওয়াকে স্পর্ধা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মামলার বাদী এবং যিনি যার হয়ে মামলা করেছেন, সেই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। কিন্তু বিষয়টি এখন আদালতে চলে যাওয়ায় তাদের আর কিছু করার নেই। ফলে তারা বিচারকের দিকে তাকিয়ে আছেন। তবে এখনো বিচারক তার সিদ্ধান্ত জানাননি। আর তিনি কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, এ বিষয়ে বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
কেন আদালতে হাজির হননি এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও একাধিক প্রতিষ্ঠানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি কেউ কথা বলতে রাজি না হওয়ায়।

মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় ভেজাল প্রমাণ হওয়ায় গত ১২ মে ৫২টি পণ্য বাজার থেকে তুলে নেয়ার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বলে তারা।

গত ২২ মে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের হয়ে মামলা করেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খাদ্য পরিদর্শক কামরুল হাসান। এতে প্রাণ, এসিআই, সিটি ওয়েল মিল, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলসহ ১৮টি কোম্পানির বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইনের ২৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ প্রমাণ হলে তিন থেকে ছয় লাখ টাকা জরিমানা এবং এক থেকে তিন বছরের কারাদ- হতে পারে।

বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে ২৩, ২৪, ২৫, ২৬ মে বেশ কিছু কোম্পানিকে শুনানিতে হাজির হতে বলা হয়। কিন্তু দুই দিনেও কোনো কোম্পানির প্রতিনিধি এসে বক্তব্য দেয়নি বলে জানাচ্ছেন মামলার বাদী কামরুল ইসলাম। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানই আদালতে উপস্থিত হয়নি। পরবর্তী শুনানির জন্য আরও তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, তারা আসবেন।’

তখনও যদি তারা আদালতে উপস্থিত না হয়, তাহলে কী হবে- এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।’

খাদ্য পরিদর্শক যাদের নির্দেশে মামলা করেছিলেন, সেই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষেরও এই মুহূর্তে অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সদস্য মাহবুব কবির। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখন আদালতে চলে গেছে। তাই কারা গেল বা গেল না সেটা আদালতের এখতিয়ার। এখানে আমাদের খোঁজ নেওয়ার কিছু নেই।’

এর মধ্যেই আবার ১৮টি প্রতিষ্ঠানের নিষিদ্ধ হওয়া ৫২ পণ্যের মধ্যে দুটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে বিএসটিআই। এগুলো হলো এসিআইয়ের পিওর সল্ট আর নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডুডলস নুডলস।

এর মধ্যে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে গিয়ে ভেজালকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আদালতকে এড়িয়ে চলার বিষয়টি জানা গেল। আর এই তথ্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন খাদ্যে ভেজাল নিয়ে সোচ্চার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তিনি বরাবরই ভেজালকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তিনি সরকারের সমালোচনা করে থাকেন।

এই অধ্যাপক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ মামলা করার পরও খাদ্য আদালতে অনুপস্থিতি স্পর্ধা দেখানো ছাড়া আর কিছু নয়। এখন আদালতের তাদের প্রতি নমনীয় হওয়ার তো কিছু নেই।’

‘আসলে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা একেকটা পাওয়ার হাউজ হয়ে গেছে ছাড় পেতে পেতে। তারা হয়তো ভাবছে, আদালতে না গেলে কিছুই হবে না। আমাদের আশঙ্কাও আসলে কিছু হবে না। এখন সরকার যদি তাদের স্পর্ধার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে ভাবে তাহলে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হবে না।’

খাদ্যে ভেজালকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বরাবর আইন অমান্য করে পার পেয়ে যায় বলে সমালোচনা আছে। কোনো প্রতিষ্ঠানকে দৃষ্টান্তমূলক সাজার মুখোমুখি হতে হয়েছে এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে। বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে খাদ্যপণ্য বিপণনকারী আগোরা সুপার শপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কারাদ-ের রায় ঘোষণা হলেও তাকে এক দিনের জন্যও জেলে যেতে হয়নি।

রোজার আগে খোলাবাজার থেকে ৪০৬টি পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআই। পরে তাদের ল্যাব পরীক্ষায় ৫২টি পণ্য অকৃতকার্য হয়। অর্থাৎ এগুলোতে ভেজাল ছিল। নানা সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে চোখে দেখে নমুনা পরীক্ষা না করেই বড় অংকের জরিমানা বা কারাদ-ের মতো আদেশ এসেছে। তবে পরীক্ষাগারে অকাট্য প্রমাণ পাওয়ার পরও এবার বিএসটিআই অনেকটাই চোখ বুঁজে থাকে।

পরে এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে উচ্চ আদালত। আর এর মধ্যে মামলা করে। তার আগে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব ছেড়ে কেরানির চাকরি নিতে বলে উচ্চ আদালত।

কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি নামে একটি বেসরকারি ভোক্তা অধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান খাদ্যে ভেজাল নিয়ে রিট করলে আদালত বিষয়টি নিয়ে নানা বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল।

নোটিশ পেয়েও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে না যাওয়ার বিষয়ে রিটকারী শিহাব উদ্দিন খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তারা উপস্থিত না হলেও আদালত থেমে থাকবে না। খাদ্য আদালত চাইলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারে কিংবা তল্লাশি চালাতে পারে।’ আর এ বিষয়টি নিরাপদ খাদ্য আইনের ৬৯ ধারায় পরিষ্কার করেই বলা আছে।

এ ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধিতেও এ ব্যাপারে বলা আছে উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, ‘শেষ পর্যন্তও যদি তারা হাজির না হয় তাহলে আদালতের কার্যক্রম বহাল থাকবে এবং দণ্ড দেওয়া হবে।’

ঢাকাটাইমস/৩০মে/টিএ/এমআর