সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতকে আরও চাপ দিতে হবে

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু
| আপডেট : ৩০ মে ২০১৯, ১৮:৩৫ | প্রকাশিত : ৩০ মে ২০১৯, ১৫:৪৫

বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অসীম ভালবাসা। বঙ্গবন্ধু সবসময় বাংলাদেশ ও বাঙালির জীবন ধারাকে কিভাবে আরো উন্নত করা যায় তা নিয়ে ভাবতেন। বাঙালি জাতিকে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু মাত্র তিন বৎসর ছয় মাস পনেরো দিনের মাথায় সামরিক বাহিনী থেকে বহিষ্কৃত দুস্কৃতিকারীদের হাতে তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

আজ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিতার মতো বাংলাদেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে একই স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তারও এই চলার পথে রয়েছে অনেক কাটা। সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে তিনি আজ দ্রুত এগিয়ে চলছেন একটি উন্নত বাংলাদেশ সৃষ্টির লক্ষে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাত দিয়ে জাতির জনকের স্বপ্ন আজ ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হতে চলছে।

একদিন বঙ্গবন্ধু তার কালো মার্সেডিজ চড়ে ৩২ নম্বর বাসভবন থেকে গণভবনে যাওয়ার পথে বললেন, শুকনা মরিচের ঘাটতি বাংলাদেশে হবে কেন? মরিচতো আমাদের দেশে অধিক পরিমাণে উৎপাদন হয়। আমাদের মরিচ নিশ্চয়ই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পাচার হচ্ছে। মরিচের তো এত ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।

বঙ্গবন্ধু ঠিকই বলেছেন। এইসময় চোরাচালানি আর মজুদদারিদের চক্রান্তে হঠাৎ করেই সারা দেশে শুকনা মরিচের মূল্য বৃদ্ধি পায়। দেশের বাজার থেকে শুকনা মরিচ উধাও হয়ে যায়। কিছু কিছু জায়গায় পাওয়া গেলেও মূল্য কয়েকগুণ বেশি।

গাড়িতে বসে কথা প্রসঙ্গে একসময় বঙ্গবন্ধু রেগে দুঃখে কষ্টে বললেন, আমার কাছে যদি টাকা থাকতো তাহলে আমি পুরো বাংলাদেশ ভারত সীমান্তটাই উঁচু প্রাচীরে ঘেরা করে রাখতাম। বাবা বললেন স্যার, চোরাচালানিতো শুধু সড়ক পথে নয় নৌপথেও হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু বললেন, নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে সমুদ্র পথটাও বন্ধ করে দেব। আমি এত কষ্ট করে বিদেশ থেকে আমার বাঙালি ভাই বোনদের জন্য খাদ্য আমদানি করে নিয়ে আসি আর চোরেরা সব লুট করে ভারতে স্মাগলিং করছে। শুকনো মরিচের ঘাটতি বাংলাদেশে হবে কেন? এটাই ছিল নেতার সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় আক্ষেপ।

পরবর্তিতে অবস্থার উন্নতির জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার শুকনা মরিচ রেশনে দেওয়া শুরু করতে বাধ্য হন। একথা আজ হয়তো অনেকের মনে থাকার কথা নয়। অথচ বাস্তব হলো বাংলাদেশে একদিন রেশনে দেওয়া হয়েছিল শুকনা মরিচ। পরবর্তীতে একদিন গাড়িতে বসেই বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মেহেদী সাহেব রেশনে কি এখন মরিচ দেওয়া হচ্ছে? বাবা বলেন জ্বি স্যার।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি একইরকম না হলেও ভারত বাংলাদেশ চোরাচালানি এখনো বন্ধ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর সেই প্রাচীর এখনো দেয়া না হলেও ভারত তাদের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। সেই কাঁটাতার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিক্রম করতে গিয়ে কেউ কেউ প্রাণ দিচ্ছেন। এ ধরণের হত্যা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। মানবতাবিরোধী এ ধরনের কাজে বাংলাদেশ সরকার বার বার প্রতিবাদ জানালেও তার কোনো প্রতিফলন নেই। বিষয়টি নিয়ে সরকারকে ভারতের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ ভারত বাংলাদেশ বন্ধুত্বের পথে এ ধরনের কার্যকলাপ অন্তরায় সৃষ্টি করছে বলে অনেকে মনে করেন।

রামপুরা টেলিভিশন ভবন উদ্বোধনকালে গাড়ি থেকে নামছেন বঙ্গবন্ধু, গড়িয়ে দরজা খুলছেন কোরবান আলী, পাশে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা অফিসার মহিউদ্দিন ও সর্ব বামে লেখকের বাবা আলী মেহেদী খান।

বঙ্গবন্ধুর মতই অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন নেতার জীবনসঙ্গী আমাদের বঙ্গমাতা। তিনি নেতার সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। সারাজীবন বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে তিনি সহ্য করেছেন অনেক দুঃখ-কষ্ট আর মানসিক নির্যাতন। তবুও দিয়েছেন নেতাকে উৎসাহ। বাংলাদেশের অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলতুন্নেসা মুজিবের অবদান ছিল অসামান্য। একদিকে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে অন্যদিকে পুত্র শেখ কামাল ও শেখ জামালকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়ে পরিবারের অন্যান্যর সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত কাটিয়েছেন এক দুঃচিন্তায়। এই বঙ্গমাতাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারের একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করতে চাই।

বঙ্গবন্ধু তখন চিকিৎসার জন্য মস্কোতে অবস্থান করছিলেন। এইসময় বঙ্গমাতার নিরাপত্তা দেখার ডিউটি পরে বাবার উপর। বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর জন্য দওয়া চাইতে সিলেটের হজরত শাহজালাল (রা.) মাজার জিয়ারতের সিদ্ধান্ত নিলেন। ঢাকা থেকে বিমানে করে বঙ্গমাতা এলেন সিলেট।

এই সিলেট সফরের সময় বাবা সঙ্গে ছিলেন। হজরত শাহজালাল (রা.) মাজারের সিঁড়ি দিয়ে বঙ্গমাতা আস্তে আস্তে হেটে হেটে উপরে উঠছিলেন। সহজ সরল বঙ্গবন্ধুর জীবনসঙ্গী আমাদের সকলের বঙ্গমাতা বাবাকে তখন বললেন মেহদী সাহেব, আমার পেটে তখন জামাল, আপনাদের বঙ্গবন্ধুর নামে পুলিশি ওয়ারেন্ট। হন্য হন্য হয়ে পুলিশ তখন সারা বাংলাদেশে ওনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ওই সময় গভীর রাতের অন্ধকারে নৌকার বৈঠা চালিয়ে তিনি আমাকে হাসিনা ও কামালকে নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

আমি তখন খুব কষ্ট করছিলাম। তখনতো আমাদের কোনো নিরাপত্তা বাহিনী ছিল না। ওই দুর্যোগ বিপদে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন। আর আজ আপনারা আমাদের নিরাপত্তা দিতে এসেছেন! আল্লাহ যেদিন চাইবেন সেদিন আমাদের আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না। সিকিউরিটি দিয়ে কি হবে? সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি কি অসীম বিশ্বাস ও আস্থা আমাদের বঙ্গমাতার। সেদিন তিনি দুহাত তুলে হজরত শাহজালাল (রা) মাজারে জাতির জনকের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে মুনাজাত করেন। এর কয়দিন পরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মস্কো থেকে সুস্থ হয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন।

লেখক: ইলেক্টেড মেম্বার, দা ইউনিয়ন অফ সার্ভিস এন্ড কমিউনিকেশন এম্পলয়েস স্টকহল্ম সাউথ ব্রাঞ্চ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :