শপিং কামিং

অয়েজুল হক
 | প্রকাশিত : ৩১ মে ২০১৯, ২০:১২
প্রতীকী ছবি

ফরিদ সাহেব একজন সরকারি চাকরিজীবী। চাকরির বয়স প্রায় শেষের দিকে। একমাত্র মেয়ে স্বামীর সাথে থাকে আমেরিকায়। টোনাটুনি ঠোনাঠুনির সংসার। ঈদ আসতেই কয়েক দিন ধরে শপিং নিয়ে ঝগড়াঝাটি হচ্ছে। প্রতিদিন ঠিক অফিসে যাবার আগে শপিং নিয়ে একটা ইস্যু দাঁড় করাবেন। ফরিদ সাহেব জানেন ঈদ পর্যন্ত এটা চলবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ খাবার কথা ভুলে গেলেও আতিয়া বেগম শপিং ভুলবেন না। শপিং শেষ হলেই মুক্তি সেটাও নয়। এটা ভালো হয়নি, ওটা বাদ পড়েছে এসব চলতে থাকবে।

টানা কয়েক দিনের ঘটনার পর ফরিদ সাহেব আজও অফিসের জন্য রেডি। আতিয়া বেগমের কথার জন্য অপেক্ষা। আজ যাই বলুক উত্তর হবে কড়া। রেডি হবার পরও আতিয়া বেগম কিছু বলছেন না! ফ্ল্যাটের দরজা খুলে প্রশান্তি নিয়ে বের হবেন সে সময় অশান্তির সুর বেজে ওঠে। আতিয়া বেগমের থমথমে গলা, আজ কিন্তু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে।

- কেন!

- শপিং করতে হবে।

- তোমার দেড় পাতার ফর্দ আমাকে দাও।আমি নিয়ে আসবো। এই গরমে ভিড়ের ভেতর বুড়ো বয়সে তোমার শপিং করতে যাওয়ার দরকার কী!

আতিয়া বেগম বলেন, দরকার অবশ্য ছিল না। গতবার ছাড় দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমাকে পাহারা দেবে কে!

- মানে! আমি কী চোর নাকি?

আতিয়া বেগম তেতে ওঠেন, তুমি কী ভেবেছ! গত ঈদে বাজার করে আসার পর তোমার গা থেকে মেয়ে মানুষের ঘ্রাণ পেয়েছি। কিচ্ছু বলিনি। কী ভেবেছ, আমি কিছু বুঝি না তাই না?

ফরিদ সাহেব একেবারে চোরের মতো ভঙ্গিমায় বলেন, মেয়ে মানুষের ঘ্রাণ আছে। সেটা আবার গায়েও লেগে থাকে! আজ বুঝলাম।

আতিয়া বেগমের গলা আরও চড়ে, একদম ন্যাকামি করবে না বলে দিচ্ছি।

প্রতিবেশীদের ভয়ে ফরিদ সাহেব চেপে যান। পাশের ফ্লাটের নিশি, সুমনের অল্পবয়স্ক স্ত্রী খট করে দরজা খোলে। ফরিদ সাহেব একপ্রকার নিশ্চিত মেয়েটা মজা নিতে এসেছে। নিশির গায়ে ঘ্রাণ আছে কি না কে জানে! আজ থেকে তিনি মেয়েদের থেকে যথেষ্ট পরিমাণ দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন। ট্রাকের গায়ে লেখা একশো হাত দূরে থাকুনের মতো। কখন কর ঘ্রাণ লেগে যায় বলা মুশকিল! মেয়ে মানুষদের আতরের বোতলও মনে করতে পারেন। দামি আতর। একবার লেগে গেলে সহজে যায় না। অনেক সময় থাকে। বছর পেরিয়ে গেলেও মানুষ সে ঘ্রাণ ভোলে না! ফরিদ সাহেব কে ক্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবার গর্জন করে ওঠেন আতিয়া বেগম, কী ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছ কেন? মেয়ে মানুষের ঘ্রাণ পেলে কী মাথা হ্যাং হয়ে যায়!

ফরিদ সাহেব চুপচাপ নতুন বউয়ের মতো অফিসের দিকে রওনা দেন।

ফরিদ সাহেবের ঘটনা শুনে নিশির সন্দেহের বাতিক উগ্রে ওঠে। প্রতিবার ঈদ শপিং করতে লম্বা সময় নেয় সুমন। সন্ধ্যায় যাবে তো রাত শেষ করে আসবে। এভাবে তিন চার দিন। নতুন বউ বলে কিছু বলেনি। এবার আর ছাড় নেই। নিশি লেখাপড়া জানা আধুনিক মেয়ে। শর্টের বোতামে ক্ষুদ্র স্পাই ক্যামেরার সাথে ক্ষুদ্র একটা স্পিকার লাগিয়ে দিয়েছে। মোবাইল থেকে মনিটরিং করা যাবে। প্রতিবার শপিং করতে নিশির আগ্রহ থাকলেও এবার সুমনকে যেচেই বলে, তুমিই যাও।

সুমন খুশি মনে রওনা দেয়। বেশ গরম আর কিলবিলে মানুষের ভিড়। হঠাৎ করে একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে যায়, সরি ম্যাডাম ধাক্কা লেগে গেল।

মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দরী। চোখে মায়া আছে। মুচকি হেসে বলে, ঈদের বাজার নো প্রবলেম।

- থ্যংক উ।

হঠাৎ শোনা যায়, আমি তোমাকে কতো ভালোবাসি তার প্রতিদান এই!

কিছুটা নিশির গলার মতো! নাহ এখানে নিশি আসবে কীভাবে! মানুষের ঠেলাঠেলি চিৎকার। মেয়েটা যায়নি কিছুটা অবাক হয়ে সুমনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহলে ভালোবাসার কথাটি সেই বলেছে।

- আপনি আমাকে ভালোবাসেন?

হঠাৎ তার সুন্দর চেহারার রঙ বদলে যায়, কী আজেবাজে বকছেন! তাহলে ধাক্কা টা ইচ্ছে করেই দিয়েছেন? লম্পট কোথাকার।

- দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না।

- কী আমি বাজে কথা বলছি...

কথা শেষ না করেই সুমনের গালে সপাটে থাপ্পড় কষে দেয়। লোকালয়ে সুন্দরী মেয়েদের থাপ্পড় হলো লঘুচাপ। ঘূর্ণিঝড় হতে সময় লাগে না। সেটাই ঘটে যায়। দু'চারজন পাশ থেকে তেড়ে আসতেই ব্যাগভর্তি জামাকাপড় ফেলে সুমন সামনের দিকে ছুটতে থাকে। মার্কেট ভর্তি মানুষ। বেশিদূর যেতে পারে না। লম্পট হিসাবে থাপ্পড় খেয়ে দৌড়ে সামান্য পথ পেরোতেই সুমন হয়ে যায় চোর। বেধড়ক পিটুনি দিয়ে সুমনকে পুলিশের কাছে দেয়া হয়। থানায় পৌঁছাতে রাত দুটো বাজে। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সুমনের দিকে পিটপিট করে তাকান, কীরে তোরে দেখতে তো চোরের মতো লাগে না, ক্যারে?

সুমনের মাথা মগজ কাজ করে না।

হঠাৎ নারী কণ্ঠ, সে অপরাধী নয়। ছেড়ে দিন।

লকাপে, গভীর রাতে নারী কণ্ঠ! ছেড়ে দিন! কর্মকর্তা মহোদয় লাফ দিয়ে দৌড়ে পালান। জ্বিন ভুতের ব্যাপার নিশ্চয়ই। একটু বাদে আরেকজন সাথে করে নিয়ে উঁকি দেন। সে সময় আবার নারী কণ্ঠ, সুমন তুমি চিন্তা করো না। তুমি নিরপরাধ আমি প্রমাণ নিয়ে আসছি। আই এম কামিং। শব্দের সাথে চার পায়ের দৌড়ে পালানোর শব্দ। চিৎকার- ওরে বাবা ভূত আসছে। কামিং...!

লেখক: গল্পকার

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :