রূপগঞ্জে মানুষ কেনাবেচার হাট

আতাউর রহমান সানী, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
 | প্রকাশিত : ০১ জুন ২০১৯, ০৯:৩৫

ইতিহাস বলছে প্রাচীন ও মধ্যযুগে সমাজে মানুষ কেনাবেচা করা হতো। তখন দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। সেই দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার মাঝেও ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের আঘাতে পিষ্ট হয়ে নি¤œ আয়ের মানুষ দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য আজও নিজেদের দিনের জন্য বেঁচে দেন হাটে।

কাকডাকা ভোরে জমে উঠে মানুষ কেনাবেচার হাট। কথাটি শুনলে অনেকেই চমকে উঠতে পারে। কিন্তু এটাই বাস্তবতা রূপগঞ্জে।

প্রতিদিন সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকার ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশে বসে মানুষ কেনাবেচার হাঁট। এ হাঁটে রাজমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, সেনেটারি মিস্ত্রি, দিনমজুরসহ নানা পেশার মানুষের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে হাটটি। এ হাটে তারা নিজেদের সারা দিনের জন্য শ্রম বিক্রি করেন ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে। অনেকে আবার অবিক্রীত থেকে যান। তাদের আবার অন্য কোনো কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে হয়। এভাবেই চলে তাদের জীবনসংগ্রাম।

জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলাটি ঢাকার খুব কাছে হওয়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ প্রতিদিন কাজের সন্ধানে ভিড় জমায় এখানে। যারা কলকারখানায় কাজ পান না তাদের অনেকে একরকম বাধ্য হয়ে দিনমজুরের কাজ করতে হয়। প্রতিদিন তারা নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে চলে আসেন এ হাটে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে এ হাট। এ বাজারে শ্রমিকের শ্রম কিনতে আসেন মালিকরা। উপজেলার কাঞ্চন এলাকা থেকে সগীর মিয়া জানান, পরিবারের অবস্থা ভালো না থাকায় লেখাপড়া করতে পারেননি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার চালানোর জন্য নিজেকে প্রতিদিন বিক্রি করতে আসেন মানুষের হাটে। কোনো দিন ৫০০ আবার কোনো দিন ১ হাজার টাকায় শ্রম বিক্রি করেন তিনি। আবার কোনো কোনো দিন থেকে যান অবিক্রীত। যেদিন অবিক্রীত থেকে যান সেদিন সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

নিজেকে বিক্রি করতে আসা সালাম সরকার (৬০) নামের আরেক দিনমজুর জানান, প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে পড়েন নিজেকে বিক্রি করতে। এ হাটে মালিকরা এসে তাদের ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যায়। কেউ একদিনের জন্য বিক্রি হয় কেউবা আবার ৪ থেকে ৫ দিনের জন্য বিক্রি হয়ে থাকে এখানে। আবার কখনো কখনো তিনি অবিক্রীত থাকে যান।

তিনি আরো জানান, কাজ জোগাড় না করতে পারলে সংসার চলবে না। তার দিকে তাকিয়ে থাকে পরিবারের আরো ৬ টি মুখ। যাদের মুখে খাবার তুলে দিতে তাকে বৃদ্ধ বয়সে আজও কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে।

আব্বাস নামে আরে শ্রমিক জানান, এখন ধান টাকার মৌসুম। চারদিকের মাঠঘাট সোনালী ধানে ভরে গেছে। তাই এখন কাজের দামও বেশ ভাল পাওয়া যায়। তবে, ধানকাটার মৌসুম চলে গেলে তাদের কাজ একটু কমে যায় তখন তাদের তাদের সংসারের টানাপড়েন বহুগুনে বেড়ে যায়। কাজ না পেলে কখনো কখনো পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়েই থাকতে হয় তাকে।

উপজেলার ভোলাবো এলাকা থেকে শ্রমিক কিনতে আসা সূজন মিয়া জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেন। মাঠে ধান পেকে যাওয়ায় তিনি শ্রমিকের শ্রন কিনতে এসেছেন। এখানে সকাল ভোর থেকে বেলা ৯ টা পর্যন্ত মানুষের হাঁট কেনা-বেচার হাট থাকে। তিনি দাম-দর করে ধান কাটার জন্য ৫ দিনের জন্য দিনমজুর কিনতে এসেছেন। এ হাঁটে শ্রমিক কিনতে হলে প্রতিদিনের জন্য তাদেরকে গুনতে হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এদিকে ধানের দাম কমে যাওয়ায় তাদের মতো কৃষকদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে। শ্রমিকের মজুরি দিয়ে ধান চাষ করে তাদের লোকসানের সম্মূখীন হতে হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :