পারসোনা, ফারজানা ফাঁকা

মেয়াদোত্তীর্ণ, প্রশ্নবিদ্ধ প্রসাধন ব্যবহারে হারিয়েছে আস্থা

প্রকাশ | ০৩ জুন ২০১৯, ১৫:১৭ | আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯, ১৬:০৪

তানিয়া আক্তার

ঈদের আগে আগে পারসোনা, ফারজানা শাকিলের মতো বিউটি পার্লারগুলোতে ভিড় নেই। ফাঁকা পার্লারগুলো এই সময়ের জন্য ভীষণ বেমানান। কিন্তু অলস সময় কাটছে কর্মীদের।

ঈদ মানেই জমকালো সাজ। আর রূপ সচেতনদের পরিণত সুন্দর সাজের জন্য দরকার পূর্ব প্রস্তুতি। সেজন্যই ঈদের পূর্বে রূপচর্চার অভিজাত প্রতিষ্ঠানে থাকে প্রচণ্ড ভিড়।

কিন্তু সম্প্রতি বিএসটিআই এবং ভোক্তা অধিকারের অভিযানে নগরের জনপ্রিয় পার্লারগুলোর ‘আসল চিত্র’ বেরিয়ে আসায় সেবা গ্রহণকারীরা পিছপা হয়েছেন বিউটিফিকেশনের সেবা নিতে।

সরকারি সংস্থার অভিযানে প্রমাণ মিলেছে, পার্লারগুলোতে হরদম ব্যবহার হয় মেয়াদউত্তীর্ণ প্রসাধন। আবার এসব প্রসাধন আসল নাকি নকল তা বোঝার উপায় নেই। কারণ, বিদেশে বলে ব্যবহার করা উপাদানগুলোতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কোনো স্টিকার ছিল না। এগুলো কাদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে, সেটাও নিশ্চিত নয়। কারণ, কোনো ক্রয়ের রসিদ নেই।

তথ্য প্রযুক্তির যুগে এই তথ্য ছড়িয়েছে ব্যাপকভাবে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে চলছে তুমুল আলোচনা। মানসম্পন্ন উপাদান দিয়ে সাজতে বাড়তি পয়সা খরচ করার মানুষের অভাব নেই। কিন্তু পারসোনা, ফারাজানা শাকিল বা উইমেনস ওয়ার্ল্ড বা এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই চিত্র মানতে পারছেন না সেবা গ্রহীতারা।

দিনভর মিরপুরে তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি করে শাখা পরিদর্শন করে যে চিত্র দেখা গেছে, সেটি নিতান্তই ব্যতিক্রম। হাতে গোনা কয়েকজন ভোক্তার আনাগোনা দেখা গেছে।

মিরপুর এর সেকশন ১১ তে পারসোনাতে এই সময় স্বাভাবিক যে বেগটা পেতে হতো, তার লেশও দেখা গেল না। উঠতে গিয়ে লিফট ফাঁকাই পাওয়া গেল। সেখানে কথা হলো একজনের সঙ্গে। বলেন, ‘যে নিউজ আসছে, তার কারণে বাসা থেকে কড়া নিষেধ পারসোনায় আসা যাবে না। এ জন্য সাজতে আসিনি। কেবল ভ্রু প্লাকের জন্য এসেছি।’

ফ্রন্ট ডেস্কের সামনে চেয়ারে মাত্র কয়েকজনকে বসে থাকতে দেখা গেল। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তারা সবাই প্রতিষ্ঠানের কর্মী। বড় এই পার্লারে পাঁচ থেকে ছয় জনকে দেখা গেল যারা সেবা নিতে এসেছেন।

ভিড় এত কম কেন- সাংবাদিকের পরিচয় গোপন করে ক্রেতা সেজে প্রশ্ন ছুড়ে দেই একজন কর্মীকে উদ্দেশ্য করে। তিনি জবাব দেন, ‘এখন তো দুপুর, ইফতারের পর হয়ত আসবে। আবার আশেপাশে অনেক পার্লার হয়ে গেছে। এই জন্য লোকজনের আসা যাওয়া কম।’

পাশেই ফারজানা শাকিলস মেকওভারে গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র। সেখানে আরও নীরবতা বিরাজ করছে পুরো ফ্লোরজুড়ে। ঢুকতেই দারোয়ান বলেন, ‘লোকজন নেই বললেই চলে। ঈদে এমন হওয়ার কথা না।’

ফ্রন্ট ডেস্কের একজন কর্মী বলেন, ‘নতুন হইছে। এই জন্য লোকজনের আসা যাওয়া কম। এ ছাড়া পাশে আরো পার্লার আছে। ইফতারের পরে আসতে পারে।’

উইমেনস ওয়ার্ল্ড এর শাখাতেও ব্যতিক্রম কিছু দেখা যায়নি। বসা ছিলেন একজন মেয়ে। সেবা নিতে এসেছেন। ভেতরে ছিলেন আরো একজন। এই প্রতিষ্ঠানে ঈদের সপ্তাহে এমন চিত্র এর আগে দেখেননি তিনি নিজেও। বলেন, ‘এখন মানুষ আসে না শুনতাম। তাই বলে এত ফাঁকা তা বুঝতে পারিনি।’

সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রুপসজ্জায় নকল ও ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারের দায়ে ধানমন্ডির পারসোনাকে ৬ লক্ষ টাকা, গুলশানের আরেকটি আউটলেটকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এ ছাড়া গুলশানে অবস্থিত ফারজানা শাকিলস মেকওভার সেলুনকেও সম ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সব জায়গাতেই মেয়াদউত্তীর্ণ প্রসাধান এবং প্রশ্নবিদ্ধ উৎস থেকে সাজার উপকরণ সংগ্রহের প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

গত বছরও নকল প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পারসোনা বিউটি পার্লারকে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।

ঢাকাটাইমস/৩জুন/টিএ