কী হয়েছিল স্কয়ার হাসপাতালে

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০১৯, ১৫:৩৪ | আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯, ১৫:৪৭

আরিফুর রহমান দোলন

ডা. মুরাদ হাসান হঠাৎ তথ্য মন্ত্রণালয়ে কেন? মন্ত্রিসভায় ছোট্ট রদবদলের পরপরই মুঠোফোনে জামালপুরের ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু জানতে চান। বলেন, আপনি গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত বলে জানতে চাইছি।

আমি প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইলাম। বললাম কে মন্ত্রী হলো অথবা না হলো তাতে আমার আপনার কী? কিন্তু নাছোড়বান্দা বন্ধু আমার মুখে আরও কিছু শুনতে চায়। কিছুটা খোঁচা দিয়ে বললেন, বাড়তি কিছু যদি না জানবেন তাহলে মিডিয়ায় কাজ করেন কেন? রীতিমতো আঁতে ঘা লাগল।

বন্ধুকে আশ্বস্ত করলাম কিছু না কিছু ভেতরের খবর দেব। একটু সময় চেয়ে নিয়ে ফোন রাখলাম। এবার শুরু হলো- ভেতরের খবর নেয়ার পালা। আসলে কি হলো? হঠাৎ কেন ‘ছোট্ট’ রদবদল? তাহলে কি তথ্য মন্ত্রণালয়ে হাছান মাহমুদের একজন ডেপুটি খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল? নাকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কাজের চাপ কম? নাকি জাহিদ মালেক একাই একশ? না ভেতরে অনেক কিছু ঘটছে যা বাইরে আসছে না?

ইফতারের পর ‘বোদ্ধা’ বন্ধুদের আড্ডায় হাস্যচ্ছলে প্রশ্নটি ছুড়ে দিলেন প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী বন্ধু। কী হয়েছিল স্কয়ার হাসপাতালে। আড্ডারত অন্যরা বিষয়টি খুব একটা আমলে না নিলেও আমি কান খাড়া করি। স্কয়ার হাসপাতালের নাম শুনলেই কেমন যেন সিরিয়াস হয়ে যাই ইদানীং। কারণ স্কয়ার হাসপাতালের কারণেই আমাকে প্রায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছিল।

পাঁচ তারকা মান ‘হাসপাতাল’ স্কয়ার হাসপাতাল এটা ভেবেই তারা যেন বেশি তৃপ্ত। রোগীদের সেবার চেয়ে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গুরুত্ব পায়। তার চাক্ষুষ প্রমাণ তো আমি নিজেই। এছাড়া বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, আর পরিচিতজনেরা নিয়মিতই স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তাদের ঠকে যাওয়ার কাহিনি প্রায়ইশ শোনান। তাই সেই হাসপাতালের বিষয়ে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোনো ফোরামে আলোচনা হয় তখন মনোযোগ না দিয়ে কি পারি?

স্কয়ার হাসপাতালে কী হয়েছিল? প্রশ্নকর্তাকে আমি পাল্টা প্রশ্ন করি। উত্তরও পেয়ে যাই তৎক্ষণাৎ। ব্যবসায়িক বন্ধুবর বলেন, শুনেছি এপ্রিল মাসের কোনো একদিন খোদ তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে একহাত নিয়েছিল স্কয়ার হাসপতালেরই এক নিরাপত্তারক্ষী। হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন এক স্বজনকে দেখতে মুরাদ হাসান সেখানে যান। স্বজনের খোঁজখবর নিয়ে ফিরে যাওয়ার সময়ই নাকি বিপত্তিটা ঘটে।

প্রতিমন্ত্রীকে বহন করা গাড়িটি সঠিক জায়গায় পার্ক করাতে আপত্তি ছিল স্কয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীর। আর এতে আপত্তি জানিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মী। এ নিয়ে যখন দুইজনের মধ্যে বচসা হচ্ছিল তখন প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টিতে বিষয়টি আসে। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জানতে চেয়েছিলেন মাত্র। আর এটিই নাকি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ মহলে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়।

ব্যবসায়িক বন্ধুটির দেয়া তথ্যমতে স্কয়ার হাসপাতালের মালিকপক্ষ কারণে অথবা অকারণে বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। তাদের নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীর সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়াকে ভিন্নভাবে কাজে লাগাতে হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজকে কাজে লাগানো হয়। বিষয়টি যতখানি গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়েও বিবেচ্য হল মন্ত্রিসভার ছোট্ট রদবদলের সঙ্গে আদৌ এর সম্পর্ক আছে কিনা? কারণ স্কয়ার হাসপাতালের সঙ্গে সম্পর্কিত কেউ কেউ নাকি দুই একদিন পর থেকেই প্রচার করতে থাকেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রদবদল আসন্ন।

ডা. মুরাদ হাসান আপদমস্তক আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তার পিতা মতিউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে জামালপুর অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক এবং দীর্ঘকাল জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সময়ে সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী স্বপনের সঙ্গে শুরু থেকেই অবশ্য বনিবনা হচ্ছিল না ডা. মুরাদ হাসানের। জাতীয় পার্টির আমলে ঢাকার মেয়র ও পরে মন্ত্রী কর্নেল (অব.) এম এ মালেকের ছেলে জাহিদ মালেক স্বপন প্রতিমন্ত্রীকে থোরাই কেয়ার করতেন। এটি সংশ্লিষ্টদের জানার কথা। শুনেছি মন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ অনেক ফাইল আগেই স্বাক্ষর করতেন এরপর প্রতিমন্ত্রীকে স্বাক্ষর দিতে বলতেন। যা সচিবালয়ের নির্দেশিকা পরিপন্থী। এভাবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছিল। এছাড়া কিছু প্রভাবশালী স্বার্থগোষ্ঠী ডা. মুরাদ হাসানের ওপর নাখোশ ছিল। তারাও একহাত দেখে নেয়ার তালে ছিল।

তথ্য মন্ত্রণালয়ে মুরাদ হাসানের অন্তর্ভুক্তি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নাকি এসবের সঙ্গে এই ঘটনার যোগ আছে? ব্যবসায়িক বন্ধুটির এই প্রশ্নের জবাব আমি কী দেব তা নিয়ে ধন্দে পড়ে যাই। মন্ত্রিসভার স্বল্প মেয়াদে ছোট্ট রদবদল আসলেই কেন, এই কৌতুহল তো স্বাভাবিক? তাজুল ইসলাম, মোস্তফা জব্বারের ডানা ছেঁটে দেয়া কিসের ইঙ্গিত এই প্রশ্নও কেউ কেউ করছেন। তারা কি দায়িত্বের বোঝা বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন? নাকি দায়িত্ব বুঝে উঠতে পারছেন না। এসবের প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে ঘুরপাক খাবেই।

স্কয়ার হাসপাতালে যাই ঘটে থাকুক হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ হাসপাতালের বাইরে যেখানেই প্রদর্শিত হয়ে থাকুক ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করতে চাই এর সঙ্গে মন্ত্রিসভার রদবদলের কোনো সম্পর্ক নেই। থাকতে পারে না। থাকা উচিত নয়। কিন্তু এই প্রশ্নই যখন আড্ডায় বা বিভিন্ন মহলে আলোচনায় প্রাধান্য পায় সেটিও খুব ভালো খবর নয়।

সম্পাদক, দৈনিক ঢাকাটাইমস, ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম ও সাপ্তাহিক এই সময়